সাউথ আফ্রিকা ৩ : বাংলাদেশ ০। টি-টোয়েন্টিতে সাউথ আফ্রিকা- বাংলাদেশ আট বছরের পরিসংখ্যান এটি।
২০০৭ এ কেপটাউনে কিংবা ২০০৮ এ জোহানেসবার্গে কি ঘটেছিল তা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি ছিলেন না বাংলাদেশ কোচ। তিনি অতীতমুখী না হয়ে বর্তমানেই থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্রিকেট তাকে থাকতে দিলো কোথায়! ২০১৫-তেও ফিরে এলো সেই ২০০৭ আর ২০০৮। তবে শুধু সংখ্যায় নয়। অমর্যাদায়ও!
কেপটাউনে কিংবা জোহানেসবার্গে যখন সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটো টি-টোয়েন্টিতে হেরেছিল বাংলাদেশ, তখন অবশ্য বাংলাদেশ খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে এরকম দাবি করার তেমন লোক ছিলো না। এখনতো পরিস্থিতিটা অন্য। বাংলাদেশ আগের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলছে। ক্রিকেটাররা ভক্ত-অনুরাগীদের অপেশাদার ভালোবাসায় বেশি সিক্ত হচ্ছেন! ঠিক সেরকম একটা সময় সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে রোববার বড় একটা ধাক্কা খেলো বাংলাদেশ। ১৪৮ রান তাড়া করতে গিয়ে ৯৬ রানেই অলআউট। ৫২ রানের হার। আগের দুটো ম্যাচের স্কোরকার্ডকে এ ম্যাচের পাশাপাশি রাখলে এটাকেই সবচেয়ে বড় ব্যবধানের হার মনে হবে। সেটা শুধু সংখ্যার দিক থেকে নয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর মর্যাদার দিক থেকেও।
আট বছর আগে কেপটাউটেনর নিউল্যান্ডসে পোলক-এনটিনি-মর্কেলদের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ১৪৪ রান করেছিল ৯ উইকেটে। পরের বছর জোহানেসবার্গে বৃষ্টিধোয়া ১৪ ওভারের ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার ১১৮ রান তাড়া করে ৮ উইকেটে ১০৯ রান তুলে থেমেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে হার ছিল ৭ উইকেটে। দ্বিতীয় ম্যাচে ৯ রানে। আট বছর পর এসে এবার বাংলাদেশের হার ৫২ রানে। তারচয়ে বড় কথা এবার বাংলাদেশের ইনিংস একশ রানের গণ্ডিও পেরুতে পারলো না! এবং সেটা নিউল্যান্ডস কিংবা ওয়ান্ডারার্সের উইকেটে নয়। ঘরের মাঠে। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে!
কেপটাউনের নিউল্যান্ডসের উইকেটে সাউথ আফ্রিকান বোলাররা বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের সাহস আর ব্যাকফুটের পরীক্ষা নিয়েছিলেন। জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সও প্রায় একই পরীক্ষায় ফেলেছিল। বরং পরিস্থিতিকে আরো একটু কঠিন করে দিয়েছিল বৃষ্টি ভেজা আবাহওয়া। কিন্তু শেরে বাংলার উইকেট? বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মতুর্জা অবশ্য ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে যা বলে গেলেন তার মর্মার্থ হচ্ছে; স্লো আর টার্নিং উইকেটে সাউথ আফ্রিকার স্পিনারদের সামাল দিতে পারেননি তার ব্যাটসম্যানরা।
মোস্তাফিজের কাটার। রুবেল হোসেন-তাসকিনদের গতি। কিংবা মাশরাফি বিন মর্তুজার নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেংথ নিয়ে যতো প্রশংসাই হোক; বাংলাদেশ নিজে বিশ্বাস করে তাদের বোলিং শক্তি স্পিন নির্ভর। যে কারণে এবিডি ভিলিয়ার্স-ফাফ ডু প্লেসিস-ডুমিনিদের বিপদে ফেলতে স্লো-টার্নিং একখানা অর্ডারি উইকেট বানিয়ে নেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সেই ফাঁদে পড়ে একশ-র নিচে অলআউটের লজ্জা বাংলাদেশের! এবং এটা আপাত ইতিহাসের লজ্জাও বাংলাদেশের।
লজ্জা। কারণ ইতিহাস বলছে উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানরা স্পিন ভালো খেলেন। অসুবিধা যা, তাহলো শক্ত-বাউন্সি উইকেটে। কিন্তু মিরপুরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কেন এতো অস্বাচ্ছান্দ্য স্পিনের বিপক্ষে! আবাহওয়া-পরিবেশ-উইকেট খুব অপরিচিত ছিল কি? নাকি অর্ডারি উইকেটে ব্যাট করার জন্য নিজেদের টেকনিক-কে ঘঁষামাজা একটু কম হয়েছে? হতেই পারে। বিশ্বকাপের পর থেকে ঘরের মাঠে একটা সিরিজ শেষ হতে না হতেই তার পেটে আরেকটা সিরিজ যেভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে প্রস্তুতির পর্যাপ্ত সময় কোথায়! তবে এটাও এখন আর খুব গ্রহণযোগ্য যুক্তির পর্যায়ে পড়বে না। কারণ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এখন চলছেই এভাবে। সবাইকে খুব দ্রুত সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার সেই মিরপুরেই সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে হারের অন্যতম কারণ যদি হয়, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সাউথ আফ্রিকান স্পিনারদের ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে না পারা, দ্বিতীয় ম্যাচে তারা পারবেন সেই গ্যারান্টিও দেওয়া যাচ্ছে না। তবে স্লো-টার্নিং উইকেটকে আরো একটু স্পোর্টিং করার চেষ্টা হবে, তা জোর দিয়ে বলা যায়। অবশ্য রেজাল্ট বদলাতে না পারলে শেষে বলতে হবে; টি-টোয়েন্টিতে এটাই আমাদের সামর্থ্য। আর প্রেসকেও লিখতে হবে; ইতিহাস পাল্টাতে পারলেন না হাথুরুসিংহে!
ইতিহাস যতই অরুচির মেন্যু হোক না কেন, হাথুরুসিংহকে সেটাই আরো একবার গিলতে হচ্ছে মঙ্গলবার- সেই দৃশ্যটা বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেসও দেখতে চাইবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৫
এএ/