মুম্বাই থেকে ফিরে: ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ‘ইএসপিএন ক্রিক ইনফো’র সাংবাদিক জ্যারড কিম্বার। পেশায় ক্রিকেট সাংবাদিক তাই নিজ দেশতো বটেই বিশ্বের প্রতিটি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ নিয়েই তাকে কাজ করতে হয়।
বিনয়ী, আত্মবিশ্বাসী ও দূরদর্শী এই অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক এখনই যেন ১০ বছর পরের বিশ্ব ক্রিকেটের চিত্র দেখতে পান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে আমার ঠিক ডান পাশের আসনে ছিলেন জ্যারড। উত্তেজনায় ঠাসা ওই ম্যাচের ফাঁকে ফাঁকে অজি সাংবাদিকের সঙ্গে অনেক কথাই হলো। ব্যক্তিগত, ক্রিকেটীয় এবং চলতি বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে।
আলাপচারিতার মাঝখানে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বাংলাদেশ দলটি তোমার চোখে কেমন? উত্তরের শুরুটা শুনেই আমি রীতিমতো মুগ্ধ।
‘এই মুহূর্তে বিশ্বের যতগুলো দল আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল বাংলাদেশ। ওদের পারস্পরিক বোঝাপড়া, টিম কম্বিনেশন ও মাঠের কৌশল অসাধারণ। একটি সময় ছিলো যখন বাংলাদেশ রক্ষণাত্মক ক্রিকেট খেলতো। কিন্তু এখন ওরা সেই খোলস থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছে। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই বাংলাদেশ বেশ আক্রমণাত্মক। ফলে দলটি যেকোন প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে। এ সবই হচ্ছে উন্নতির শিখরে যাওয়ার আলামত।
হ্যাঁ এটা ঠিক যে, বিশ্বকাপের এবারের আসরের শেষ চারে ওরা একটি ম্যাচও জিততে পারেনি কিন্তু তাতে কিছু এসে যায় না। ওরা হেরেছে ঠিকই কিন্তু তার আগে নিজেদের সেরা খেলাটি খেলেছে। যেমন বিশ্বকাপের এবারের আসরে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দুটির কথাই ধরুন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে আপনি দেখেছেন যে বাংলাদেশের দেওয়া ১৫৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিযে অজিরা কতটা চাপে ছিল। আর ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ তো আরও বিধ্বংসী ছিল। মাত্র ১ রানের হার। আসলে এদিন ওদের ভাগ্য সাথে ছিল না। ’
এ সময় বাংলাদেশ সম্পর্কে নিজের মূল্যায়ন করতে গিয়ে দুটি নাম জ্যারডের মুখে বিশেষভাবে উচ্চারিত হলো- মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সৌম্য সরকার।
মাশরাফি সম্পর্কে বলতে গিয়ে জ্যারড তার অধিনায়কত্বের প্রশংসা করে বলেন, ‘মাশরাফি একজন ক্যারিশমাটিক অধিনায়ক। এটা বাংলাদেশের ভাগ্যই বলতে হবে যে, দলটি ওর মতো একজন অধিনায়ক পেয়েছে। আপনি দেখে থাকবেন, ওর মধ্যে দলকে উজ্জীবিত করার দারুণ এক সম্মোহনী শক্তি আছে। ওর ধৈর্যের প্রশংসা করতে হয়। ও খুব সহজেই ভেঙে পড়ে না। ওর অন্য যে ব্যাপার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তা হলো- সতীর্থদের প্রতি ভীষণ আন্তরিক। তাসকিন খেলতে পারেনি বলে মাশরাফি কেঁদেছে। এটা আপনি অন্য কোনো অধিনায়কের মধ্যেই পাবেন না। ’
সৌম্য সরকারের প্রসঙ্গে জ্যারড বলেন, ‘আমি যদি ভুল না করি এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় স্ট্রোক প্লেয়ার সৌম্য সরকার। ওর শট সিলেকশনও অসাধারণ, ও জানে ও কী করছে। ও এমন একজন ব্যাটসম্যান যে কি না বলের গুণাগুণ বিচার করে খেলতে পারে। যদি বড় কোনো দুর্ঘনা না ঘটে ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা ওর জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। ’
টিম বাংলাদেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে অজি সাংবাদিক আরও বলেন, ‘গেল দেড় বছরে বাংলাদেশ টিম এক বদলে যাওয়া দলের নাম। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ওরা অনেক এগিয়ে গেছে। এতদিন ওয়ানডেতে ভালো করছিলো এখন টি-টোয়েন্টিতেও ভালো করছে। সম্প্রতি ঢাকায় প্রথম বারের মতো টি-টোয়েন্টি ফর্মেটে অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। তবে, শুধু সংক্ষিপ্ত আসরে ভালো খেললেই হবে না। টেস্টেও ভালো খেলতে হবে। আমার মনে হয় ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির মতো টেস্টেও ওদের ভালো খেলার সময় এসে গেছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০০০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৬
এমজেএফ/