ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

তাদের চোখে-মুখে সাকিব-মোস্তাফিজ হওয়ার স্বপ্ন

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৭
তাদের চোখে-মুখে সাকিব-মোস্তাফিজ হওয়ার স্বপ্ন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এখন ক্রিকেট জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তাই সাকিব-তামিম-মাশরাফি হতে ব্যাপক আগ্রহ তরুণদের মধ্যে। স্বপ্ন পূরণে ক্রিকেটের হাতে-কলমে দিক্ষা নিতে মাঠে নেমে পড়ছে দেশের শিশু-কিশোর ও তরুণরা। সেই স্বপ্নে বাধা নয় বরং সহযোগী হয়ে সমানতালে এগিয়ে আসছেন অভিভাবকরাও। তেমনই এক দৃশ্যের দেখা মিললো মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ছোট্ট মাঠটিতে।

সাকিব-মুশফিক-মোস্তাফিজ হওয়ার দৌড়ে সন্তানরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাম ঝরিয়ে অনুশীলন করছে। হাতে কলমে ক্রিকেটের মৌলিক জ্ঞান নিতে নিজেকে ঢেলে দিচ্ছে, অন্যদিকে তাদের বাবা-মা-রাও মাঠের কোণে বসে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছেন।

যেন ধ্যান-ধারণা শুধুই ক্রিকেট।

বহুদিন পরে মোহামেডানের বারান্দায় সাবেক খেলোয়ার, কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা একত্রিত হয়েছিলেন। যেন পুরোনো সেই মোহামেডানের চিত্রের দেখা মিললো। পাশেই মাঠে চলছে ক্লাবের ক্রিকেট একাডেমির আওতাধীন প্রায় আড়াই শ’ শিক্ষানবিশ ক্রীড়াপ্রেমীর অনুশীলন।

সন্তানের স্বপ্নই যেন মা-বাবার স্বপ্ন। লেখাপড়ার পাশাপাশি সন্তানকে একাডেমিতে দিয়ে যাবতীয় যোগান দিয়ে যাচ্ছেন তারা। বুকে স্বপ্ন একটাই, বড় হয়ে সন্তান সাকিব-তামিম-মাশরাফির মতো বড় তারকা হবেন। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেশের সম্মান কুড়াবেন।  

এমনই এক স্বপ্নাতুর বাবা উত্তম কুমার সরকার। কথা হলো বাংলানিউজের প্রতিবেদকের সঙ্গে। জানালেন তার স্বপ্নের কথা, ‘ছেলের স্বপ্নই আমার স্বপ্ন। ছোটবেলা থেকেই ছেলে ক্রিকেট পছন্দ করে। তাই ক্রিকেটের যাবতীয় সামগ্রী কিনে দিয়েছি। আর্থিক সমস্যার মধ্যে থাকলেও বড় ক্রিকেটার বানাতে সবকিছুর যোগান দিচ্ছি। সেই পথেই আছে আমার ছেলে। বড় হয়ে মুশফিকের মতো বড় মাপের উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান হবে সে। ’

পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। একইমাঠে ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেয়েরাও অনুশীলন করছেন। শিখছে ক্রিকেটের আদ্যোপান্ত। ক্লাব একাডেমির চারজন প্রশিক্ষক মিলে বুঝিয়ে দিচ্ছেন ক্রিকেটের মৌলিক জ্ঞান। শিষ্যদের শেখাচ্ছেন তারা।  

মেয়ে একদিন সালমা-জাহানারা হবে এমন স্বপ্নের কথা জানালেন গেন্ডারিয়া থেকে আসা এক মা। নাম ফাতেমা বেগম। তিনি জানালেন, ‘মেয়ে হয়ে জন্মেছে দেখে ক্রিকেট খেলতে পারবেনা, এমন অনেকেই বলেন। তবে, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মেয়েকে বড় ক্রিকেটার বানানো। ছেলেদের কোনও অংশে কম নয় মেয়েরা, এটা প্রমাণ করবো। ’
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমএমন স্বপ্ন দেশের লাখো মা-বাবার। কষ্টার্জিত আয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি সন্তানদের প্রাতিষ্ঠানিক ক্রিকেট শিক্ষা দেয়ার অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। এমনই অনেক ক্রিকেট একাডেমি আছে যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক দিক্ষা মিলবে।  

ক্রিকেট শেখানোর জন্য অনেক ক্রিকেট একাডেমি বা ক্লাব রয়েছে। আবাহনী ক্রিকেট একাডেমি:  প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। খেলার সরঞ্জাম নিজেকে দিতে হয়। কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি: ভর্তির সময় ১ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হয় এবং প্রতি মাসে ৬০০ টাকা বেতন দিতে হয়। লালমাটিয়া ক্রিকেট একাডেমি: এখানে ভর্তি বাবদ ১ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে ৫০০ টাকা ক্লাব কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়। শীতলক্ষ্যা ক্রিকেট একাডেমি নারায়ণগঞ্জ: এখানে শুধু ৬০০ টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হয়। এদের মাসিক কোনো টাকা দেয়া লাগে না। তবে বল কেনার জন্য ২৫০ টাকা দিতে হয়।

বিকেএসপিতে পড়াশোনা আর খেলাধুলা দুটিই চলে সমান তালে। ফলে যারা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় ক্যারিয়ার গড়তে চান, তারা অনায়াসেই ভর্তি হতে পারেন সেখানে। বছর শেষে বিভিন্ন পত্রিকা ও তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভর্তি কার্যক্রমের কথা জানানো হয়। এরপর নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে আবেদন ফরম নিয়ে তা পূরণ করে জমা দিতে হয়। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি নেয়া হয়। তবে কিছু খেলায় তৃতীয় শ্রেণি থেকেও ভর্তি নেয়া হয়। সবশেষে আবেদনপত্র থেকে বাছাই করা শিক্ষার্থীদের ডাকা হয় নির্ধারিত দিনে। দেখা হয় খেলার যোগ্যতা। ভালো শিক্ষার্থীদের বাছাই করে মেডিকেল চেকআপ করে ভর্তি করা হয়। ভর্তি হতে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো লাগে। আছে মাসিক বেতন। তবে তা নির্ভর করে অভিভাবকের আয়ের ওপর।

বর্তমান জাতীয় দলের অধিনায়ক মুশফিক, অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, নাসির হোসেন, স্পিনার আবদুর রাজ্জাক এবং ব্যাটসম্যান মুমিনুল ও এনামুল হক বিজয়সহ অনেকেই বিকেএসপির ছাত্র।  

সব একাডেমিতে বছরের যে কোনো সময়ই শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারে। একবার ভর্তি হলে প্রতি বছর নতুন করে ভর্তি হতে হয় না। এছাড়া সারা দেশে প্রতিটি জেলা শহরে ক্রিকেট শেখার ক্লাব বা একাডেমি রয়েছে। ক্রিকেট খেলা শেখায় এসব অধিকাংশ একাডেমির ভর্তির জন্য ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
জেএইচ/এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।