ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

সমতায় সিরিজ শেষ করলো বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৭
সমতায় সিরিজ শেষ করলো বাংলাদেশ ছবি:সংগৃহীত

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭০ রানে হেরে গেল বাংলাদেশ। তবে হারলেও ১-১ সমতায় সিরিজ শেষ করেছে টাইগাররা। কারণ প্রথম ম্যাচে দাপুটে জয় পায় মাশরাফিরা। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়।

এদিন লঙ্কানদের ছুঁড়ে দেওয়া ২৮১ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২১০ করতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেন সাকিব আল হাসান।

এছাড়া অভিষেক হাফসেঞ্চুরির দেখা পান মেহেদি হাসান মিরাজ।

কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগারদের দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় মাঠে নামে দুই দল।

টাইগারদের বোলিং শুরু করেন মাশরাফি। তার সঙ্গে জুটি বাঁধেন মোস্তাফিজ। লঙ্কানদের ইনিংস শুরু করেন উপুল থারাঙ্গা এবং দানুসকা গুনাথিলাকা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ম্যাশের বলে ক্যাচ তুলে দেন গুনাথিলাকা। বল করে নিজেই ক্যাচটি মুঠোবন্দি করতে চেয়েছিলেন টাইগার দলপতি। হাত ফসকে মিডঅনে থাকা তামিমের দিকে বল চলে যায়। তামিমও বেশ খানিকটা দৌড়ে আসলেও ক্যাচটি নিতে পারেননি। চতুর্থ ওভারে থারাঙ্গাকে এলবির ফাঁদে ফেলে আবেদন করেন মোস্তাফিজ। তাতে আম্পায়ার কোনো সাড়া দেননি।

ইনিংসের ১১তম ওভারে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। টাইগারদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আগের দুই ওভারে ১৬ রান দিলেও মাশরাফি মিরাজের ওপর আস্থা হারাননি। এই অফস্পিনার বিদায় করেন ওপেনার দানুসকা গুনাথিলাকাকে। ৩৮ বল মোকাবেলা করে তিনটি চার আর একটি ছক্কায় ব্যক্তিগত ৩৪ রান করে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। দলীয় ৭৬ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় লঙ্কানরা। মিরাজ পান মেডেন উইকেট।

অসাধারণ এক ডেলিভারিতে এরপর লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন টাইগারদের গতির ঝড় তোলা তাসকিন আহমেদ। ওপেনার উপুল থারাঙ্গাকে সরাসরি বোল্ড করেন তাসকিন। সম্পূর্ণ পরাস্ত হয়ে বিদায়ের আগে থারাঙ্গার ব্যাট থেকে আসে ৩৫ রান। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে তাসকিনের বল উড়িয়ে দেয় স্ট্যাম্পস। ৩৫ বলে পাঁচটি চার আর একটি ছক্কায় লঙ্কান দলপতি থারাঙ্গা তার ইনিংসটি সাজান। দলীয় ৮৭ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

দলীয় ২৬তম ওভারে আলস্যভঙ্গিতে রান নিতে গিয়ে রানআউট হন দিনেশ চান্দিমাল। ব্যক্তিগত ২১ রানে ফেরেন তিনি। ডিপপয়েন্ট থেকে তাসকিনের ফেরত পাঠানো বলে স্ট্যাম্পের বেলস তুলে দেন মুশফিক। দলীয় ১৩৬ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। চান্দিমাল-মেন্ডিস মিলে ৪৯ রান যোগ করেন। এরপর জুটি বড় করতে পারেননি মেন্ডিস আর মিলিন্দা সিরিবর্ধানে। উইকেটে থেকে ব্যক্তিগত ১২ রানে ফেরেন সিরিবর্ধানে। দুই ব্যাটসম্যানের বোঝাপড়ার ভুলের সুযোগ নিয়ে সিরিবর্ধানেকে রানআউট করে ফেরান মুশফিক। দলীয় ১৬১ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় লঙ্কানরা।

ইনিংসের ৩৭তম ওভারে মোস্তাফিজ ফেরান কুশল মেন্ডিসকে। ব্যক্তিগত ৫৪ রানে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন ৭৬ বলে চারটি চারের সাহায্যে ইনিংস সাজানো মেন্ডিস। দলীয় ১৯৪ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় লঙ্কানরা। ষষ্ঠ উইকেটের দেখা পেতে টাইগারদের অপেক্ষা করতে হয় ইনিংস ৪৪তম ওভার পর্যন্ত। দলপতি মাশরাফির দারুণ এক ডেলিভারিতে তুলে মারার খেসারত দেন আসেলা গুনারত্নে। ব্যক্তিগত ৩৪ রানে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের তালুবন্দি হন তিনি। দলীয় ২১৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

ইনিংসের ৪৫তম ওভারে মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন এবং সেকুজে প্রসন্নকে। মাহমুদুল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন প্রসন্ন (১)। দলীয় ২৩০ রানের মাথায় সপ্তম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। থিসারা পেরেরা ব্যাট করেন বিগ শটের ওপর ভিত্তি করে। ৪০ বলে ৫২ রান করতে তিনি ৪টি চারের পাশাপাশি ১টি ছক্কা হাঁকান। শেষ দিকে তাকে সঙ্গ দেন দিলরুয়ান পেরেরা। মাশরাফির করা শেষ ওভারে বিদায় নেন দিলরুয়ান। ১৫ রানে তামিমের হাতে ধরা পড়েন। একই ওভারের পঞ্চম বলে মাশরাফির অফসাইডের বলে লেগে খোঁচা দিতে গিয়ে তাসকিনের সহজ ক্যাচে ফেরেন থিসারা পেরেরা।

তাসকিন-মেহেদি একটি করে উইকেট তুলে নেন। তিনটি উইকেট পান মাশরাফি, দুটি পান মোস্তাফিজ। উইকেট পাননি সাকিব, মোসাদ্দেক আর মাহমুদুল্লাহ।

জবাবে টাইগারদের হয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন দলের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। প্রথম ওভারেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তামিম। তবে, নুয়ান কুলাসেকারা ফিরতি ক্যাচ নিয়ে উল্লাস করতে গিয়ে বল ছেড়ে দেন। মাঠের আম্পায়ার আউট না দিলেও টিভি আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দেন। বিতর্ক ছড়িয়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম (৪)। দলীয় ১০ রানের মাথায় সাব্বিরও বিদায় নেন। কুলাসেকারার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলটি লাফিয়ে ওঠে। তাতে সাব্বিরের ব্যাটের কাঁনায় বল লেগে উইকেটের পেছনে চান্দিমালের গ্লাভসবন্দি হন শূন্য রান করা সাব্বির।

দলীয় চতুর্থ ওভারে বিদায় নেন মুশফিক (০)। লাকমলের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন তিনি। দলীয় ১১ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে দ্রুতই টপঅর্ডারের তিন উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে লাল-সবুজরা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করে সাকিব-সৌম্য। এই জুটিতে আসে ৭৭ রান। দলীয় ৮৮ রানের মাথায় বিদায় নেন সৌম্য। ব্যক্তিগত ৩৮ রান করে ফেরেন তিনি। তার ৪৪ বলের ইনিংসে ছিল তিনটি চার আর একটি ছক্কার মার। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৯০ রানের ইনিংস খেলার পর এই প্রথম ওয়ানডেতে সৌম্যর ব্যাট থেকে ত্রিশোর্ধ্ব রান আসে। দিলরুয়ান পেরেরার বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন সৌম্য।

এরপর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সাকিব-মোসাদ্দেক। তবে, ইনিংসের ২৩তম ওভারের প্রথম বলে বোল্ড হন ৯ রান করা মোসাদ্দেক। সেকুজে প্রসন্নর বলে মোসাদ্দেকের বিদায়ে দলীয় ১১১ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান দলীয় ১১৮ রানের মাথায় দিলরুয়ান পেরেরার বলে ব্যক্তিগত ৫৪ রান করে ফেরেন। তার ইনিংসে ছিল ৭টি চারের মার। সপ্তম উইকেট হিসেবে বিদায় নেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ইনিংসের ২৭তম ওভারে লাকমলের বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ৭ রান করা মাহমুদুল্লাহ।

ব্যক্তিগত ১৬ রান করা মাশরাফি বিন মর্তুজাকে ফেরান লেগ স্পিনার সেকেগু প্রশন্ন। নিজের বলেই ক্যাচ নিয়ে টাইগার অধিনায়ককে প্যাভিলিওনে ফেরান তিনি। হাফসেঞ্চুরির পর বিদায় নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে নবম উইকেটে রেকর্ড ৫৪ রানের জুটি গড়েন মিরাজ ও তাসকিন আহমেদ। পরে কুলাসেকেরার বলে ৫১ করে বিদায় নেন মিরাজ। একই ওভারে কুলাসেকেরার চতুর্থ শিকারে তাসকিন (১৪) মাঠ ছাড়লে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, ০১ এপ্রিল ২০১৭
এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।