ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

সেই মিরাজ, এই মিরাজ

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
সেই মিরাজ, এই মিরাজ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

মাত্র এক বছর আগেও মেহেদি হাসান মিরাজ ছিলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। টাইগার যুব দলকে নেতৃত্ব দেয়াই ছিল যার প্রধান কাজ। পাশাপাশি দলের হয়ে পারফর্ম করার বিষয়টিতো ছিলই। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে সেই মিরাজ আর নেই! এখন তিনি রুপান্তরিত হয়েছেন অন্য এক মিরাজে।

যুবদল ছেড়ে এখনকার মিরাজ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অনত্যম ভরসার প্রতীক। আপন ক্রীড়া নৈপুণ্যে যিনি পরিণত হয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের নির্বাচকদের অটোমেটিক চয়েসে।

কিন্তু শুরুটা অত সহজে করতে পারেননি এই বোলিং অলরাউন্ডার। গত অক্টোবরে ইংল্যান্ড যখন বাংলাদেশ সফরে এলো তখন টেস্টের জন্য দলে ডাক পড়লো এই ডানহাতি অফস্পিনারের। যুব দলের গন্ডি পেড়িয়ে জাতীয় দলে ডাক পেয়ে ভীষণ নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন। যে সে দল নয়, ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক। তাই হয়তো কিছুটা মুষড়ে পড়েছিলেন।

ছিল একাকিত্বও। কেননা দীর্ঘ দিনের খেলার সাথীদের ছেড়ে সিনিয়রদের সাথে তার সখ্যতাও তখন একেবারেই গড়ে উঠেনি। তাই কিছুটা ভীতিও কাজ করছিল। কিভাবে আন্তর্জাতিক চাপ সামলাবেন আর কীভাবেই বা পারফর্ম করবেন। এই সবই তার তরুণ মনে এক অনিশ্চয়তার ঝড় বইয়ে দিচ্ছিলো।

কিন্তু মিরাজের সেই অনিশ্চয়তা দূর করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন টাইগার সিনিয়র দলের প্রায় প্রতিটি সদস্যই। মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিম, রিয়াদ সবাই তাকে উৎসাহ দেয়া শুরু করেন। মিরাজ জানালেন, ‘চট্টগ্রাম টেস্টের আগে আমার একা একা লাগতো, নার্ভাসও লাগতো। তখন সবাই উৎসাহ দেয়া শুরু করে। ’

তাতে কাজও হলো বিস্তর। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে একটি-দুটি নয়, ইংলিশদের সাতটি উইকেট থলিতে পুড়ে রীতিমতো চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেন কুকদের কপালে। এরপর মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টে সফরকারীদের ১২ উইকেট তুলে নেন। তার সেই অবিষ্মরণীয় বোলিংয়ে দলটির বিপক্ষে প্রথমবারের মতো আসে ১০৮ রানের ঐতিহাসিক জয়। যার মূল কারিগর মিরাজ। টানা দুই টেস্ট বল হাত এমন ঝকঝকে পারফরমেন্স করে বসলেন অনন্য এক রেকর্ডও। অভিষিক্ত টেস্ট সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়ে জেমস ফেরিসকোর ১২৯ বছেরের রেকর্ডটি গুড়িয়ে দেন এই ডানহাতি অফস্পিনার।

এরপর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম টেস্টে ২টি উইকেট পেলেও ব্যাট হাতে সাফল্য পেলেন না। দ্বিতীয় টেস্টও আরও ২টি উইকেট নিয়ে সিরিজ শেষ করে দেশে ফিরলেন। তবে ফেব্রুয়ারিতে হায়দ্রাবাদ টেস্টে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে অন্য এক মিরাজকে দেখা গেল। প্রথম ইনিংস বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও উজ্জ্বল এক মিরাজকে দেখা যায় (২ উইকেট ও ৫১ রান)।

কম যাননি পরের মাসেই শ্রীলঙ্কা সফরেও। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটের পাশাপাশি খেললেন ৪১ রানের দারুণ এক ইনিংস। আশার কথা হলো, টেস্ট ম্যাচে মিরাজের এই অলরাউন্ডিং পারফরমেন্স দেখেই লঙ্কানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ডাক পড়ে তার।      

তবে ওয়ানডেতে অভিষিক্ত ম্যাচের কথা কথা ভুলতে পারছেন না মিরাজ, ‘আমার যখন ওয়ানডেতে অভিষেক হয় তখনও অনেক নার্ভাস ছিলাম। তখন আমাকে রিয়াদ ভাই (মাহমুদুল্লাহ) অনেক সাপোর্ট করেন, নিজে থেকে কাছে এসে অনেক কথা বলেছিলেন। মাশরাফি ভাই (মাশরাফি বিন মর্তুজা) বলছিল, তুই পারবি। মুশফিক ভাই (মুশফিকুর রহিম) বলেছিল তুই টেস্টে অনেক ভালো করেছিস, ওয়ানডে তোর কাছে আরও সহজ হওয়ার কথা, পারবি। ’

অবশেষে পেরেছেন, লঙ্কানদের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে খেলেছেন ৫১ রানের আশা জাগানিয়া এক ইনিংস। ওই সিরিজে তার ফিল্ডিংও ভুয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিগত চারটি সিরিজে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং এই তিন বিভাগেই নিজেকে দুর্দান্ত প্রমাণ দেয়া মিরাজ দলে জায়গা পেয়েছেন আগামী মে মাসে অনুষ্ঠেয় আয়ারল্যান্ড সিরিজ ও জুনে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, ২৪ এপ্রিল ২০১৭
এইচএল/এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।