ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা রাজাকে ফেরালেন মাশরাফি 

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২০
ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা রাজাকে ফেরালেন মাশরাফি  ছবি: মাহমুদ হোসেন

উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান রিচমন্ড মুতোমবামি (১৯) নিজের তৃতীয় শিকার বানিয়ে সাজঘরে ফেরান তাইজুল ইসলাম। এর পরপরই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা সিকান্দার রাজাকে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ বানিয়ে টাইগারদের মনে স্বস্তি ফেরান অধিনায়ক মাশরাফি। ৫৭ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৬৬ রান করেছেন রাজা। 

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাকিদের ব্যর্থতার মাঝেও ফিফটি তুলে নেওয়া টিনাশে কামুনহুকামউই বোল্ড করেছিলেন তিনি। এই বাঁহাতি স্পিনারের বলের লাইন বুঝতে পারেননি কামুনহুকামউই।

বল ঠিক তার মিডল স্ট্যাম্পের বেল ভেঙে বেরিয়ে যায়। আউট হওয়ার আগে কামুনহুকামউই ব্যাট থেকে আসে ৭০ বলে ৫১ রান।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৪৩.৫ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের স্কোর ২৩৬/৭। ব্যাটিংয়ে আছেন টিনোটেন্ডা মুতোমবোদজি (৬) ও ডোনাল্ড ট্রিপানো (৫)। জয় পেতে হলে জিম্বাবুয়েকে ৩৭ বলে করতে হবে আরও ৮৭ রান।

বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে রান তুলতে রীতিমত হিমশিম খায় জিম্বাবুয়ে। সফরকারী দলের ওপেনার রেগিস চাকাভাকে উইকেটরক্ষক লিটনের ক্যাচ বানিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন শফিউল ইসলাম।  

এরপর অবিশ্বাস্য এক থ্রোয়ে জিম্বাবুয়ের ব্রেন্ডন টেইলরকে রান আউট করেন মিরাজ। শফিউলের বল মিড-অনে ঠেলে এক রান নিতে দৌড় শুরু করেছিলেন টেইলর, কিন্তু শর্ট মিড-উইকেটে থাকা মিরাজ দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে বাঁ হাতে বল ঠেকিয়ে ডান হাতের নিখুঁত থ্রোয়ে বেলস ফেলে দেন।

দুর্দান্ত এক থ্রোয়ে ব্রেন্ডন টেইলরকে ফেরানোর পর বল হাতেও উইকেটের দেখে পান মেহেদি হাসান মিরাজ। জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার শন উইলিয়ামসকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফিরিয়েছেন এই অফ স্পিনার। বিদায় নেওয়ার আগে তিন চারে ২৪ বলে ১৪ রান করেন উইলিয়ামস।

এর আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার তামিম ইকবালের রেকর্ডসময় ইনিংস আর মুশফিকুর রহিমের ফিফটির ইনিংসে ভর করে ৮ উইকেটে হারিয়ে জিম্বাবুয়ের সামনে ৩২৩ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ।

টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রদর্শনীতে ১০৬ বলে ১২তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। এরপর ২৩ ইনিংস ও প্রায় দুই বছর পর পাওয়া সেঞ্চুরিকে দেড়শ’তেও পরিণত করেছেন তিনি। এজন্য এই বাঁহাতি ওপেনার খেলেছেন ১৩২ বল। এরপরও অবশ্য থামেননি তিনি। ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের গড়া রেকর্ড নিজেই ভেঙেছেন।  

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড তামিমের দখলেই ছিল। এবার সেই রেকর্ড তিনি নিজেই ভেঙেছেন। এর আগে ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ১৫৪ রান করেছিলেন তিনি। ১০ বছরের বেশি সময় অক্ষত ছিল এই রেকর্ড। তবে এবার রেকর্ড স্পর্শ করে ৪ রান যোগ হতেই বিদায় নিয়েছেন তামিম। ১৩৬ বলে তার ১৫৮ রানের ইনিংসটি ২০টি চার ও ৩টি ছক্কায় সাজানো।

বিদায় নেওয়ার আগে একটি অসাধারণ রেকর্ড গড়েছেন তামিম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের মালিক এতদিন ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল (১৫৪৯)। তাকে পেছনে ফেলে এখন শীর্ষে তামিম (১৫৫৬)। ১৪০৪ রান নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন সাকিব আল হাসান।

রানে ফেরার দিনে আরও একটি অনন্য কীর্তি গড়েছেন তামিম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলক গড়েছেন তিনি। ৫০ ওভারের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ৪৮তম ফিফটিকে ১২তম সেঞ্চুরির দিকে নিয়ে যাওয়ার পথে এই মাইলফলকের চূড়ায় ওঠেন ৩০ বছর ব্যাটসম্যান। তাকে ৭ হাজারি ক্লাবে নাম লেখাতে খেলতে হয়েছে ২০৬ ম্যাচ ও ২০৪ ইনিংস। গড় ৩৫.৮৭।

বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৩ হাজার রানের চূড়াও স্পর্শ করেন তামিম। অবশ্য এই কীর্তি তিনি আগেই গড়েছিলেন। তবে তার আগের ১৩০১৪ রানের মধ্যে আইসিসি বিশ্ব একাদশের হয়ে ছিল ৫৭ রান।

ব্যাটিং করতে নেমে জিম্বাবুয়ের পেসার কার্ল মুম্বার করা ইনিংসের ৭ম ওভারে তামিমের শটে বল বোলারের হাতে লেগে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তের স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়। ফলে রানের জন্য ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া লিটন দুর্ভাগ্যজনক রান আউটের শিকার হয়ে ফেরেন। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন এই ম্যাচে করলেন ১৪ বলে ৯ রান।

লিটনের পর দুর্ভাগ্যের শিকার হন নাজমুল হোসেন শান্তও। এবার রান নিতে না চাইলেও তামিমের ‘ইয়েস’, ‘নো’, ‘ইয়েস’র বিভ্রান্তিতে পড়ে বিদায় নেন শান্ত। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৭ বলে ঝড়ো ফিফটি তুলে নেন মুশফিকুর রহিম। ২৬তম ওভারে ওয়েসলি মাধেভেরের চতুর্থ বলে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ৫০ বলে ৬টি চারে ৫৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

মুশির বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ১০৬ রানের জুটি গড়েন তামিম। মাহমুদউল্লাহও দারুণ ব্যাট করছিলেন। কিন্তু তুলে মারতে গিয়ে জিম্বাবুয়ের মাধেভেরের অসাধারণ এক ক্যাচে পরিণত হন ৫৭ বলে ৪১ রান করা এই ব্যাটসম্যান। এরপর মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে ৩৪ রান যোগ করে বিদায় নেন তামিম।

তামিম বিদায় নেওয়ার পর মুম্বার বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন মেহেদি হাসান মিরাজ (৫)। টিকতে পারেননি মাশরাফিও (১)। তিরিপানোর  করা ইনিংসের ৪৯তম ওভারে মাশরাফির পর কোনো রান না করেই বিদায় নেন তাইজুল। শেষ ওভারে মিঠুন আর শফিউল মিলে যোগ করেন ৯ রান। মিঠুন অপরাজিত থাকেন ১৮ বলে ৩২ রান নিয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২০
ইউবি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।