ঢাকা, সোমবার, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮ মহররম ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দ্রুত নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে: আমীর খসরু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:১০, জুলাই ১৩, ২০২৫
দ্রুত নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে: আমীর খসরু স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আমীর খসরু

চট্টগ্রাম: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ঢাকা শহরে ১০ জন বসে মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে না। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার করছে, কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার না হলে তার কোনো সুফল মিলবে না।

কোনো কমিশন মানুষের মনের কথা বুঝবে না। সুতরাং দ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর মানুষের মনোজগতে বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। সেটা ধারণ করতে না পারলে কোনো দল রাজনীতি করতে পারবে না।  

রোববার (১৩ জুলাই) বিকেলে নগরের মুরাদপুর শিক্ষা বোর্ড সংলগ্ন এলজিইডি ভবনে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে প্রয়াত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

কারও বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করলেও সম্মান দেখাতে হবে জানিয়ে সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আমীর খসরু বলেন, অনেকেই জিয়াউর রহমানের ছবি পদদলিত করেছে। এটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুঃখজনক। এখন আমাদের সহনশীল রাজনীতি করতে হবে। আমাদের কাজ হচ্ছে, যারা জন্য আমরা লড়েছি, ত্যাগ স্বীকার করেছি, গুম, খুন হয়েছি, পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুবরণ, চিকিৎসা ছাড়া মৃত্যুবরণ, লাখ লাখ মানুষ মিথ্যা মামলার শিকার,কি জন্য? একটা গণতান্ত্রিক দেশ দেখতে চাই বলে। একটা স্বাধীণ সার্বভৌম গণতান্ত্রিক দেশ দেখতে চাই বলে। যেই দেশে আমার ভোটাধিকার হবে, প্রতিনিধি নির্বাচন করবো, আমার প্রতিনিধি আমার কাছে জবাবদিহি থাকবে, সেই দেশ গড়ার জন্য আমরা ত্যাগ স্বীকার করেছি।  

যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চায়, দেশে অস্থিরতা তৈরি করে তাদের ‘রাজনৈতিক দল’ বলা যায় না জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের ভূমিকা রাজনৈতিক দল নয়, বরং প্রেসার গ্রুপের মতো। নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে, অস্থিতিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে একটা অশান্ত রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে, তাদের তো আসলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচিত করা কঠিন! আপনি রাজনৈতিক দল হলে নির্বাচনে যেতে চাইবেন না, নির্বাচন করতে দিবেন না, নির্বাচন যেতে দিবেন না, তাহলে আপনি প্রেসার গ্রুপের কাজ করেন। প্রেসার গ্রুপেরও একটা দায়িত্ব আছে তো। আপনি প্রেসার গ্রুপের কাজ করেন, আর যারা রাজনীতি করতে চায় তারা রাজনীতি করুক। আর এ প্রক্রিয়া তো শেখ হাসিনারই কথা হয়ে যায়। এখন এরা তো বলছে ইলেকশনরই দরকার নেই।  

তিনি আরও বলেন, যাদের বক্তব্যের মধ্যে অশ্লীলতা আছে, সম্মানবোধ নেই, সহনশীলতা নেই, তার বিপরীতে বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে, সহনশীলতা, সম্মান, শান্তিপূর্ণ অবস্থান, দেশ গড়ার এবং মানুষের নতুন স্বপ্ন গড়ার প্রত্যয়ের রাজনীতি। যারা দেশের রাজনীতিকে আবার কলুষিত করতে চাচ্ছে, তাদের দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। আমাদের নতুন আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে দেশের নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রবর্তন করতে হবে। দেশের রাজনীতিতে যদি রাজনৈতিক চরিত্র সংস্কৃতি না বদলায় তাহলে কোনো সংস্কারে কাজ হবে না। সুতরাং বিএনপি সেই রাস্তা করছে। তারেক রহমান সেই রাস্তায় করছে, আমাদের সকলকেই সেই রাস্তায় করতে হবে।

তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের লন্ডন বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে আমীর খসরু বলেন, লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যেই বৈঠক হয়েছে, সেখানে এই নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের নির্বাচিত সংসদ গঠন করে মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে সেটাকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমানের হাত ধরেই আমরা রাজনীতি শুরু করেছি। বিএনপির রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একজন কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অনন্য এক নেতা। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দলকে সুসংগঠিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে গিয়ে তিনি কমিটি করে দিতেন। বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। একটি দল তারেক রহমানকে নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। যারা নির্বাচনে পরাজিত হবে জানে তারাই এই নির্বাচন চায় না। তবে ওদের উসকানিতে আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।  

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দৈনিক আমার দেশের আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

এমআই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।