চট্টগ্রাম: জাহাজ নির্মাণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) দুটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাগবোট রপ্তানি করছে। চলতি মাসেই মারওয়ান শিপিং লিমিটেডের কাছে এ দুটি টাগবোট হস্তান্তর করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে টাগবোট হস্তান্তরের তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে ওয়েস্টার্ন মেরিন সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মারওয়ান শিপিং লিমিটেডের সঙ্গে ৮টি জাহাজ নির্মাণের চুক্তি করেছিল।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী (উপদেষ্টা পদমর্যাদা) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ।
তিনি বলেন, জাহাজ নির্মাণে বাংলাদেশের শত শত বছরের ঐতিহ্য আছে। কাঠের নৌযান নদী, সমুদ্র বন্দরে তৈরি হতো। আধুনিক জাহাজ নির্মাণ বাংলাদেশে শুরু হয়েছে ২০০৮ সাল থেকে। আনন্দ শিপইয়ার্ড একটি জাহাজ ডেনমার্কের কাছে প্রথম রপ্তানি করে। আধুনিক জাহাজ নির্মাণে আমাদের পথচলা ১৭ বছরের। এ সময়ে আনুমানিক ৫০টি বিভিন্ন মানের, বিভিন্ন প্রকারের জাহাজ বিদেশে রপ্তানি করেছি। এ রপ্তানি থেকে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পেরেছি। ২০০৮ সাল ছিল জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ভাটার সময়। এটা ২০১১ সাল পর্যন্ত ছিল। এত দিন আমাদের জাহাজ নির্মাণ শিল্প বিপর্যয়ের মধ্যে পার করেছে। কয়েকবছরে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। এখন আবার বাংলাদেশি জাহাজ রপ্তানি শুরু হয়েছে। আমি যারা জাহাজগুলো নির্মাণ করেছে সেই শ্রমিক, প্রকৌশলী, কর্মচারী, এমনকি সিকিউরিটি গার্ডদেরও আন্তরিক অভিনন্দন, শুভেচ্ছা জানাই। এ কৃতিত্ব তাদের, তাদের কষ্টের ফল। মেড ইন বাংলাদেশের যে ব্রান্ডিং করেছেন তারা। সাত সমুদ্রে আগামী ২০-৩০ বছর সচল থাকবে এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে। বিদেশে মেড ইন বাংলাদেশ দেখলে গর্বে বুকটা ফুলে যায়। যখন কোনো জামা, কাপড়ে মেড ইন বাংলাদেশ দেখি। তেমনি বিদেশের বন্দরে মেড ইন বাংলাদেশ দেখে আমাদের গর্বে বুক ফুলে উঠবে।
জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসের থ্রি জিরোর মধ্যে একটি হচ্ছে জিরো আন এমপ্লয়মেন্ট। এর একটি অংশ জাহাজ নির্মাণ শ্রমিকরাও। জাহাজের যন্ত্রপাতি বাইর থেকে এসেছে। কিন্তু ফিটিংস বাংলাদেশিরা করেছে। টেকনিক্যাল স্কিল ম্যানপাওয়ার বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে। তারা শুধু বাংলাদেশের কাজে লাগছে না, বিদেশেও পাঠাতেও পারছি। জিরো প্রভার্টিতে ভূমিকা রাখছে এ শিল্প। ৩০০ ডলার ন্যূনতম মজুরি তাদের। জীবন ধারণের সংস্থান হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় জিরো কার্বন নিঃসরণ। আমরা প্রকৃতিবান্ধব, পরিবেশবান্ধব জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। পরিবেশবান্ধব কর্মক্ষেত্রে জাহাজ তৈরি হচ্ছে। এটা আমাদের বিরাট সাফল্য। এ শিল্পে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ কারখানা গড়ে উঠছে। নতুন জাহাজে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক ক্যাবল, পাইপ, পেইন্ট ইত্যাদি বাংলাদেশি। এটা আমাদের জন্য বড় একটা প্রাপ্তি।
তিনি বলেন, বিশ্বে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার জাহাজ নির্মাণ শিল্পের। প্রতিবেশী দেশ ১০ শতাংশ, ৪০ বিলিয়ন ডলার টার্গেট করেছে। আমরা যে জাহাজ তৈরি করি তা ২০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার। আমরা যদি এর ১ শতাংশ টার্গেট করি ২ বিলিয়ন ডলার আয় জেনারেট করতে পারি। এর মানে হচ্ছে কর্মসংস্থান তৈরি, দারিদ্র্য বিমোচন। আমাদের সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে আমরা শত শত বছরের যে ঐতিহ্য জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ছিল তা কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে পারব। এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পলিসি সাপোর্ট, শিল্পবান্ধব ব্যাংকিং সাপোর্ট, গুড গভর্নেন্স লাগবে। আমরা দেখেছি বিগত ১৬ বছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ না করে দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিজেদের উন্নয়নের জন্য বিদেশে পাচার করেছেন, অন্য কাজে লাগিয়েছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে। অনেক ব্যাংক নিঃস্ব হওয়ার পথে। আমাদের শ্বেতপত্রও তা-ই বলছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স হুমাইদ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ দারউইশ আলতামিমী ও মারওয়ান শিপিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ আলমারজুকি।
এআর/পিডি/টিসি