নয়াদিল্লি: এয়ারসেল-ম্যাক্সিস চুক্তিতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ভূমিকা নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার দফায় দফায় মুলতবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন।
জিরো আওয়ারে বিজেপি সাংসদ যশবন্ত সিনহা অভিযোগ করেন, পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তি এই চুক্তির ফলে লাভবান হয়েছেন।
উত্তরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘জিরো আওয়ারে বিরোধীদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে সরকার বাধ্য নয়। বিরোধীরা ইচ্ছাকৃতভাবে সংসদের কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি ।
এরপরই বিজেপি, এআইডিএমকে সাংসদরা লোকসভার ওয়েলে নেমে আসেন। দুপুর দুটো পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করে দেন স্পিকার। ফের অধিবেশন শুরু হলে চিদম্বরমের ইস্তফার দাবিতে হৈচৈ শুরু করেন বিজেপি সাংসদরা।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, এয়ারসেল-ম্যাক্সিস চুক্তিতে তিনি বা তার পরিবারের কেউ লাভবান হননি। বিরোধীরা তাতে সন্তুষ্ট না হলে বিকেল চারটে পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়।
এদিকে, এক বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে কার্তি চিদম্বরম।
সেই সঙ্গে যিশু খ্রিস্টের বাণী উদ্ধৃত করে ঈশ্বরের কাছে ভুলের জন্য বিরোধীদের ক্ষমা করার প্রার্থনা জানান তিনি।
গত ২৬ এপ্রিল জনতা পার্টির সভাপতি সুব্রহ্ম্যণম স্বামীর তরফে অভিযোগ তোলা হয়, ২০০৬ সালে মোবাইল পরিষেবা সংস্থা এয়ারসেলের সঙ্গে ম্যাক্সিসের চুক্তিতে আর্থিকভাবে উপকৃত হয়েছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তি।
অভিযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ উন্নয়ন পর্ষদের সায় ছাড়া শিবশঙ্করণের মালিকানাধীন এয়ারসেল সংস্থার শেয়ার কিনতে পারতেন না মালয়েশিয়ার সংস্থা ম্যাক্সিসের কর্ণধার, অনাবাসী ভারতীয় ব্যবসায়ী আনন্দকৃষ্ণন।
অভিযোগকারী পক্ষের দাবি, অনুমতির বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছিলেন তত্কালীন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম। এরপর এয়ারসেলের বেশ কিছু শেয়ার `অসব্রিজ হোল্ডিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস` নামে একটি কোম্পানি কিনে নেয়। যার আর্থিক মূল্য কয়েকশ’ কোটি টাকা।
আর এই `অসব্রিজ হোল্ডিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস` নামক কোম্পানিটির ৯৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক চিদম্বরমের ছেলে কার্তি। তাত্পর্যপূর্ণভাবে কার্তি-র সংস্থা এয়ারসেল শেয়ার হাতে পাওয়ার পরেই ম্যাক্সিস গোষ্ঠী এয়ারসেলের সিংহভাগ শেয়ার কেনায় অনুমতি পেয়ে যায়।
এয়ারসেল-ম্যাক্সিস `ডিল` নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে এরইমধ্যেই ডিএমকে সাংসদ তথা প্রথম ইউপিএ সরকারের টেলিকমমন্ত্রী দয়ানিধি মারানের নামে মামলা করেছে সিবিআই। অভিযোগ, শিবশঙ্করণের উপর চাপ সৃষ্টি করে এয়ারসেলের শেয়ার বিক্রিতে বাধ্য করেছিলেন মারান।
ম্যাক্সিসকে শেয়ার বিক্রির আগে টেলি-যোগাযোগ মন্ত্রকের ছাড়পত্র পাওয়া সত্ত্বেও বিভাগীয় মন্ত্রী দয়ানিধি মারানের কাছ থেকে ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয় অনুমতি পাননি শিবশঙ্করণ। কিন্তু আনন্দকৃষ্ণনকে স্বত্ব বিক্রির এক মাসের মধ্যেই সেই অনুমতি মিলে যায়।
আর এই ঘটনার পরেই মারানের পারিবারিক সংস্থা সান টিভিতে ৫৯৯ কোটি রুপি লগ্নি করেন আনন্দকৃষ্ণন। শিবশঙ্করণ নিজেই এই চাপ তৈরির কথা প্রকাশ্যে আনার পর ২০১১ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের বস্ত্রমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন দয়ানিধি মারান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর