কলকাতা: ভারতের উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন চলাকালীন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদের সংখ্যালঘু সংরক্ষণ নিয়ে বিবৃতি বন্ধ করতে রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের দ্বারস্থ হল নির্বাচন কমিশন। কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কমিশনের এমন কড়া পদক্ষেপ নজিরবিহীন ঘটনা।
নয়াদিল্লির সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের সব সদস্যের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি শনিবার রাতে রাষ্ট্রপতিকে পাঠানো হয়। তাতে কেন্দ্রীয় এ মন্ত্রীকে ‘অবাধ্য ও আগ্রাসী’ বলে মন্তব্য করে বলা হয়েছে, তার ‘অবৈধ’ আচরণে উত্তরপ্রদেশে অবাধ নির্বাচন করাটাই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করতে রাষ্ট্রপতি যেন ‘অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট’ হস্তক্ষেপ করেন।
রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের চিঠি পাওয়ার পরই রাষ্ট্রপতি তা বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
এই নাটকীয় ঘটনায় উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন চলাকালীন নতুন করে বিপাকে পড়ল কংগ্রেস। কমিশনের এই চিঠির পর উত্তরপ্রদেশে খুরশিদের প্রচার বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে বিজেপি। বিজেপির পক্ষে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে এই দাবি জানানো হয়েছে।
বিজেপি নেতা বলবীর পুঞ্জ অবিলম্বে খুরশিদকে মন্ত্রীত্ব থেকে সরানোর দাবি জানিয়ে বলেন, খোদ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অমান্য করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। এরপর তার আর মন্ত্রী থাকার কোনও অধিকার নেই।
বিব্রত কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য ঘটনার গতি-প্রকৃতি খতিয়ে না দেখে এখনই মুখ খুলতে নারাজ।
দলের মুখপাত্র রশিদ আলভি বলেন, কমিশন রাষ্ট্রপতিকে কী চিঠি দিয়েছেন আমরা এখনও জানি না। সেই চিঠি দেখে তবে যা বলার বলা হবে।
উত্তরপ্রদেশের ফারুকাবাদ কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছেন খুরশিদের স্ত্রী লুইস। সম্প্রতি ওই কেন্দ্রে প্রচারে গিয়ে খুরশিদ বলেছিলেন, পিছিয়ে পড়া মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণ বাড়ানো হবে। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের আইন রয়েছে।
খুরশিদ আরও বলেছিলেন, ওই ২৭ শতাংশের মধ্যে ৯ শতাংশ সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ করবে কেন্দ্র।
এরপরই বিজেপি কমিশনকে চিঠি দিয়ে নালিশ করে বলে, নির্বাচন চলাকালীন এই ঘোষণা করে আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী।
পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখে নির্বাচন কমিশন খুরশিদকে সতর্ক করে দেয়। তার ঘোষণাকে আচরণবিধি লঙ্ঘন বলেও মেনে নেয়।
কিন্তু শুক্রবারও খুরশিদ একটি জনসভায় কমিশনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, আমাকে ফাঁসি দিলেও মুসলিমদের সংরক্ষণের দাবিতে আমি গলা চড়িয়ে যাবো।
এরপর আলোচনায় বসে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর পরেই রাষ্ট্রপতি ভবনে চিঠি পাঠানো হয়।
তাতে অভিযোগ করা হয়েছে, আইনমন্ত্রীর আচরণ ‘অন্যায় ও অবৈধ’। এর ফলে উত্তরপ্রদেশে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
নির্বাচন কমিশনের চিঠিকে রাষ্ট্রপতিও যে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন, তা তার প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট। কালবিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতি কমিশনের চিঠি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়ে দেন। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে তা সাংবাদিকদের জানিয়েও দেওয়া হয়। এখন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কি সিদ্ধান্ত নেন, সে দিকেই নজর সকলের।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১২