কলকাতা: ভারতজুড়ে ডাকা শ্রমিক সংগঠনগুলোর ডাকা হরতাল চলাকালে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সিপিএম ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। তৃণমূলের হামলায় একজন সাংবাদিকও আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার হরতালের সকালে দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুরের কাছে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয় সংবাদমাধ্যমও। গাঙ্গুলিবাগানে সিপিএমের জোনাল অফিস ভাঙচুর করা হয়। সেই খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন কলকাতার সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেল ২৪ ঘণ্টা ও স্টার আনন্দের প্রতিনিধিরা।
পুলিশের সামনেই সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিককে আটকে রেখে মারধর করা হয়। বাধা দেওয়া হয় ছবি তুলতেও। আহত হন পার্থ প্রতিম ঘোষ নামে একজন সাংবাদিক। আক্রান্ত হন অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও।
ঘটনার ছবি তুলতে গিয়েছিলেন স্টার আনন্দর সাংবাদিক পার্থপ্রতিম ঘোষ। তখনই তাকে তৃণমূল কর্মীরা বেধড়ক মারধর করেন। তার ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা করা হয়। শুধু শারীরিক নির্যাতন নয়, স্টার আনন্দের প্রতিনিধিকে হুমকিও দেওয়া হয়। ছবি তুললে তার ফল ভালো হবে না বলেও স্টার আনন্দের প্রতিনিধিকে হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা। কেড়ে নেওয়া হয় তার মোটরবাইকও।
এদিকে গোটা ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী থাকলেও আক্রান্ত সাংবাদিকের সাহায্যে তারা এগিয়ে আসেননি বলেই জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। স্টার আনন্দের প্রতিনিধিকে যখন মারধর করা হচ্ছিল, তখন নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন পুলিশকর্মীরা। মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধরে জখম হন পার্থপ্রতিম৷ বার বার অনুরোধ করতে থাকলেও তাকে রেহাই দেননি তৃণমূলকর্মীরা৷
শেষ পর্যন্ত কয়েকজন পুলিশকর্মী পার্থপ্রতিমকে উদ্ধার করে পথচলতি এক ব্যক্তির মোটরবাইকে তুলে দেন৷ তারপরও তৃণমূল কর্মীরা তাকে তাড়া করে বলে অভিযোগ৷ ঘটনার পরেও অভিযুক্ত তৃণমূলকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই তারা স্টার আনন্দের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন৷
অন্যদিকে, হরতালকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
সকালে উত্তর ২৪ পরগণার জগদ্দল থানার সুণ্ডিয়াপাড়ায় আক্রান্ত হন ৪ জন সিপিএম ও ডিওয়াইএফআই কর্মী। অভিযোগ, তৃণমূলের একদল সমর্থক একটি চায়ের দোকানে ওই ৪ বাম সমর্থকের ওপর চড়াও হন। বেধড়ক মারধর করে তাদের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। আক্রান্তদের মধ্যে দুর্গাপ্রসাদ কুণ্ডু স্থানীয় সিপিএম নেতা।
মালদহের মানিকচকে হরতালের সমর্থনে পিকেটিং শুরু করেছিলেন সমর্থনকারীরা। মানিকচক থানার পুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। হরতালকারীদের অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের জোর করে তুলে দেয় পুলিশ।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের সরকারি বাসস্ট্যান্ডে বাসের সামনে শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখানোকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। গ্রেফতার করা হয় সিপিএমের জেলা কমিটির এক সদস্যসহ মোট ২০ জন সমর্থককে। রায়গঞ্জের রেলগেটে সামনে সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হন ২ দলেরই দুই কর্মী সমর্থক।
রায়গঞ্জে সিপিএমের লোকাল কমিটির অফিসের সামনে আক্রান্ত হন বামফ্রন্টের শিক্ষক নেতা গৌতম সিনহা। অভিযোগ, সাবেক তৃণমূল বিধায়ক দিলীপ দাসের নেতৃত্বে হামলা চালান তৃণমূল কর্মীরা।
বীরভূমের রামপুরহাটে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু সমর্থকেরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয়। সিটুর অভিযোগ, পুলিশ তাদের দলীয় পতাকা খুলে ফেলে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থানার পাগলিগঞ্জে হরতালকারীদের জোর করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, জোর করে তাদের দলীয় পতাকা খুলে দেন তৃণমূল কর্মীরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে পুলিশ পৌঁছায়।
পুরুলিয়ার আদ্রা স্টেশনে সিপিএম ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পুরুলিয়ারই বরাবাজারে সিপিএমের পার্টি অফিস তৃণমূল সমর্থকেরা ঘেরাও করে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উত্তর ২৪ পরগণার বারাসতের চাঁপাডালি ও কলোনি মোড়েও সিপিএম ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১২