ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পদ্মা সেতুর সুফল

বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে রেকর্ড, বেড়েছে রাজস্ব আয়

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৯ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে রেকর্ড, বেড়েছে রাজস্ব আয়

যশোর:  বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। এই সেতুর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ গড়ে উঠেছে।

 

এরই বাস্তব সুফল হলো বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ আমদানি-রপ্তানি। এতে রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। পদ্মায় রেললাইন চালু হলে আগামীতে সুফল বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরাও এ পথে শিল্প কলকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কাগজ, মেশিনারি, কেমিক্যাল, শিশুখাদ্য, পেঁয়াজ ও মাছ আমদানি করছেন। এ ছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা তাদের উৎপাদিত পাট, গার্মেন্টস, টিস্যু পেপার, মেলামাইনসহ শতাধিক ধরনের পণ্য একই পথে রপ্তানি করছেন।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে ট্রাক ঢুকছে বেনাপোল বন্দরে। পরে কাস্টমস ও বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে এসব পণ্য বাংলাদেশি ট্রাকে খালাস হয়ে মাত্র ৫ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে।

পণ্যবহনকারী ট্রাকচালকরা জানান, আগে শীতকালে ঘন কুয়াশা ও ফেরিঘাটের যানজটে ট্রাক পৌঁছাতে সময় লাগতো ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত। এতে সময়মতো পণ্য সরবরাহ না হওয়ায় যেমন শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হতো, তেমনি ভোগান্তির শেষ ছিল না চালকদের। পচনশীল পণ্য পথেই পচে যেত। তবে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় যাতায়াতে সময় ও খরচ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দরবিষয়ক সম্পাদক মো. মেহেরুল্লাহ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে বেনাপোল বন্দরের দূরত্ব কমেছে ৭১ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করায় দ্রুত কাঁচামাল পৌঁছাচ্ছে ঢাকায়। বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যও অল্পসময়ে ভারতে পৌঁছে যাচ্ছে।  

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে ভারতের সঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ১০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি বাণিজ্য হয়। পদ্মা সেতু দুই দেশের বাণিজ্যকে সহজ করেছে। অন্য বন্দর দিয়ে যারা আমদানি-রপ্তানি করতেন এখন তারাও বেনাপোল বন্দরমুখী হচ্ছেন। এতে আমদানি বেড়েছে এবং খরচও কমেছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মেহেদি হাসান বলেন, যে আমদানি-রপ্তানিকারকরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করেন, পদ্মা সেতু তাদের জন্য আশীর্বাদ। সেতু চালুর পর বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে  ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের চারপাশে নিরাপত্তা বাউন্ডারি নির্মাণ এবং সরকারি অর্থায়নে ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪ একর জমিতে ১২শ ট্রাক পার্কিংয়ের ধারণক্ষমতার একটি কার্গো ভেহিকল টার্মিনাল করা হচ্ছে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর কল্যাণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও রাজস্ব আয় বেড়েছে। সামনের দিনে আরও বাড়বে। গত ১১ মাসে এ পথে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৪১৯ দশমিক ০৩ টন পণ্য। ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৯ হাজার ৫৭৭ দশমিক ১৯ কোটি টাকা মূল্যের ৪ লাখ ৫২ হাজার ৩১০ দশমিক ০৭ টন পণ্য। ফলে পরিসংখ্যান বলছে, আগের বছরের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩২ হাজার টন। আমদানিতে সরকারের রাজস্ব এসেছে ৫ হাজার ৩৬০ কোটি ৭৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চাইতে ১ হাজার ২২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
ইউজি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।