ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

দেশের ফ্যাশন শিল্পে প্রথমবার বিনিয়োগ করেছে জিএফএফ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৩
দেশের ফ্যাশন শিল্পে প্রথমবার বিনিয়োগ করেছে জিএফএফ

ঢাকা: প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক বিনিয়োগ তহবিল গুড ফ্যাশন ফান্ড (জিএফএফ)। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্যাশন শিল্পের কার্যক্রমকে টেকসই করতে বিনিয়োগ করে সংস্থাটি।

তাদের ১০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিলটি পেয়েছে দেশের প্রোগ্রেস অ্যাপারেলস লিমিটেড। ঢাকার নারায়ণগঞ্জে আদমজী ইপিজেডে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় একটি আধুনিক ইন-হাউস ওয়াশিং প্ল্যান্টে এই অর্থ বিনিয়োগ করেছে তারা।

সোমবার (০৩ জুলাই) প্রোগ্রেস অ্যাপারেলস লিমিটেডের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই তহবিলের মাধ্যমে পানি ও রাসায়নিকের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য ওয়াশিং প্ল্যান্টটিকে অত্যাধুনিক ওয়াশিং, ড্রাইং এবং হাইড্রো মেশিনারি দিয়ে সজ্জিত করা হবে। প্রোগ্রেস অ্যাপারেলসের হংকং-ভিত্তিক হোল্ডিং কোম্পানি পিডিএস লিমিটেডের মাধ্যমে জিএফএফ এই বিনিয়োগ করেছে। এর মাধ্যমে পিডিএস, টেক্সটাইল খাতের একটি নতুন অংশীদার হিসেবে টেকসই বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। একইসঙ্গে, অন্যান্য আন্তর্জাতিক তহবিলগুলোকেও বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে প্রতিষ্ঠানটি।

জিএফএফের দাবি, তাদের এই বিনিয়োগ আদমজী ইপিজেডে অবস্থিত প্রোগ্রেস অ্যাপারেলসের ইন-হাউস ওয়াশিং প্ল্যান্টের ইমপ্যাক্ট ইকুইপমেন্টে প্রচলিত যন্ত্রপাতির তুলনায় পানি ও রাসায়নিকের খরচ কমাবে। আর যেহেতু গার্মেন্টস ওয়াশিং আর আউটসোর্স করতে হবে না, সেহেতু প্রতিষ্ঠানটির সাপ্লাই চেইনের ট্রেসেবিলিটি ও স্বচ্ছতা আরও বাড়াবে। এ ছাড়াও, কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি রাসায়নিক, পানি ও জ্বালানি ব্যবহারের মনিটরিং ব্যবস্থায় আরও সক্ষমতা অর্জন করবে ফ্যাক্টরিটি। গার্মেন্টস আউটসোর্স না করায়, গার্মেন্ট পরিবহন সংশ্লিষ্ট কার্বন নির্গমনও কমাবে এই বিনিয়োগ।

প্রোগ্রেস অ্যাপারেলস লিমিটেড ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে। কোম্পানিটি হংকং-ভিত্তিক পিডিএস লিমিটেডের অংশ। প্রোগ্রেস অ্যাপারেলসের ফ্যাক্টরিতে জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর জন্য ওভেন বটম প্রস্তুত করা হয়। তাদের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১০ লাখ পিস। জিএফএফের বিনিয়োগ প্রাপ্তি প্রতিষ্ঠানটির এই সক্ষমতা আরও বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিনিয়োগ সম্পন্ন হওয়া উপলক্ষে পিডিএস লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান পল্লক শেঠ বলেন, অ্যাপারেল ভ্যালু চেইনে পিডিএস-এর অভিজ্ঞতা দুই দশকেরও বেশি। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী ২০০টিরও বেশি রিটেইল ব্র্যান্ডের জন্য নিজেকে উপযুক্ত সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সামাজিক দায়বদ্ধ কর্পোরেট সত্তা এবং রিটেইলারদের বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে, আমরা আমাদের গ্রাহক ও পরিবেশ উভয়ের প্রতিই আমাদের দায়বদ্ধতা বজায় রাখতে নিবেদিত। টেকসই পরিবেশ এবং সার্কুলারটিকে প্রাধান্য দেয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করতে পিডিএস সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গুড ফ্যাশন ফান্ডের সঙ্গে আমাদের এই যাত্রা সেই প্রতিশ্রুতিরই প্রমাণ করে।

পিডিএস লিমিটেডের গ্রুপ সিইও সঞ্জয় জৈন বলেন, আমাদের মেনুফ্যাকচারিং ব্যবসা গত বছরের পুরোটাতেই বেশ লাভজনক ছিল। ওয়াশ প্ল্যান্টে এই বিনিয়োগ শুধু প্রোগ্রেস অ্যাপারেলের উৎপাদন সক্ষমতাই বাড়ায় নি, বরং টেকসই কার্যক্রম এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বাস্তবায়নে গুড ফ্যাশন ফান্ডের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুবিধাও অর্জন করেছে। এই বিনিয়োগ আমাদের কার্যক্রম এবং সামগ্রিক টেকসই লক্ষ্যমাত্রাগুলোর উন্নতিতে তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেবে।

জিএফএফের অর্থায়নের সূচনা করে লডস (Laudes) ফাউন্ডেশন। ইমপ্যাক্ট ইকুইপমেন্টে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ফ্যাশন খাতে ভালো অনুশীলন আনয়নই এর লক্ষ্য। গুড ফ্যাশন ফান্ডের ফান্ড ডিরেক্টর বব অ্যাসেনবার্গ এই বিনিয়োগ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশে আমাদের প্রথম বিনিয়োগ ঘোষণা করতে পেরে এবং প্রোগ্রেস অ্যাপারলের মতো টেকসই কার্যক্রম কেন্দ্রিক মেনুফ্যাকচারের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমরা আনন্দিত। এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম যে টেকসই সক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক মিতব্যয়ীতা একইসঙ্গে অর্জন করা সম্ভব। এছাড়া, পোশাক সরবরাহ শৃঙ্খলকে রূপান্তর করার জন্যও এগুলো অপরিহার্য। আমরা আশা করি, ইন্ডাস্ট্রি স্টেকহোল্ডাররা বাংলাদেশে এই ধরনের বিনিয়োগকে আরও সহজলভ্য করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাবে।

লডস ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অনিতা চেস্টার মন্তব্য করেছেন যে, টেকসই উৎপাদন কার্যক্রম এবং প্রক্রিয়াগুলো এখন সময়ের প্রয়োজন। এগুলো বিশেষত, বাংলাদেশের মতো প্রধান উৎপাদন অঞ্চলগুলোয় গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে ডিকার্বনাইজ করার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে এবং সামাজিকভাবে একটি দায়িত্বশীল ট্রান্সফরমেশন নিশ্চিত করা সম্ভব। আর তার জন্য উৎপাদকদের সাপোর্ট দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২৩
ইএসএস/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।