ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জুনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সর্বোচ্চ লেনদেন

জাফর আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
জুনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সর্বোচ্চ লেনদেন

ঢাকা: আর্থিক লেনদেনে মোবাইল ফাইনান্সিং (এমএফএস) গুরুত্বপূর্ণ ও অনিবার্য মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। বেড়েই চলেছে লেনদেন।

সবশেষ জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার ৪০৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত জুন মাসেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। একক মাস হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এটিই সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে গত মে মাসে লেনদেন হয় ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।

জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়েছে ৩৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। আর উত্তোলন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি একাউন্টে ৩৩ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ৫ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। আর কেনাকাটায় লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা।

সাড়ে ২৭ কোটি নিবন্ধিত গ্রাহকের মাধ্যমে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। জুন মাস শেষে ১২টি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি ৭২ লাখ ৬৯ হাজার। আর ‘নগদ’-এর মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় রয়েছে সাড়ে ৬ কোটির বেশি গ্রাহক।

মোবাইল ফোন সব মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যাওয়ার কারণে মোবাইল ব্যাংকিংও সহজ হয়েছে। কাজটি সহজ করে তুলেছে বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে আরও ১০টি প্রতিষ্ঠান এ সেবা দিচ্ছে।

ব্যবসা বাণিজ্যের লেনদেন থেকে শুরু করে, শ্রমজীবী মানুষের পরিবারের কাছে টাকা পাঠানো বা শ্রমঘন শিল্পের শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে মোবাইল ফাইনান্সিং। শিক্ষার্থীরা পোস্ট অফিস বা ব্যাংকের চেয়ে দ্রুত ও বিশ্বস্ত মাধ্যম হিসেবে এই মোবাইল ফাইনান্সিং ব্যবহার করছেন। ফলে প্রতিদিন বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিং।

আর্থিত খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও অনলাইনভিত্তিক সেবার ক্রমাগত সহজলভ্যতা মোবাইল ব্যাংকিংকে এই উচ্চতায় নিয়ে এসেছে। বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আর্থিক লেনদেনে কড়া অনুশাসন অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ব্যাংক ভিত্তিক লেনদেনকে ছাড়িয়ে যাবে মোবাইল ও অনলাইন ব্যাংকিং লেনদেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এ প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের সঙ্গে দিন দিন বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যাও। যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স পাঠানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।

মোবাইল লেনদেনে যুক্ত হয়েছে ন্যানো (অতি ক্ষুদ্র) ক্ষুদ্র ঋণও। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণ গ্রাহক আবেদন করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পেয়ে যাচ্ছেন। গ্রাহক আবেদন করলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মূল ব্যাংক বা চুক্তি ব্যাংক কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রাহককে ঋণ দিয়ে দিচ্ছে। এ ঋণ চুক্তি অনুযায়ী কিস্তিতে গ্রাহকের  একাউন্ট থেকে কেটে নিচ্ছে বা গ্রাহক দিয়ে দিচ্ছেন। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যানো ঋণও আগামীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছে খাত সংশ্লিষ্টরা।

আর্থিক লেনদেন সহজ, দ্রত ও সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার যাত্রা শুরু হয়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। পরবর্তিতে মোবাইল ফাইনান্সিং শুরু করে নগদ। ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দিলেও  বিকাশ, নগদ ও রকেটের দখলে প্রায় পুরো মোবাইল ব্যাংকিং।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।