ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

যে কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে: কৃষিমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
যে কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে: কৃষিমন্ত্রী

ঢাকা: চীন, জাপান, ইরান, মিশর ও তুরস্কসহ যে কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে চাইলে যে কাউকে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।

 

পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ কী ও এর থেকে পরিত্রাণের উপায় জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পেঁয়াজ আমাদের দেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মশলা। কিন্তু পেঁয়াজের ব্যাপক ব্যবহার হয় যা অনেকটা সবজির মতো। পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য দেশের আবহাওয়া খুবই উপযোগী। তবে আমাদের আগে যেসব পেঁয়াজ ছিল সেগুলোর উৎপাদনশীলতা কম। ইতোমধ্যে আমাদের কৃষি গবেষকরা উন্নত জাতের পেঁয়াজ উদ্ভাবন করেছেন। সেগুলোর ফলন অনেক বেশি। প্রতি হেক্টরে ২০ টন পেঁয়াজ হয়।

তিনি বলেন, আমাদের পেঁয়াজের মৌসুম হলো মার্চের শেষে ও এপ্রিলের প্রথম দিকে সে সময় দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, এটা হলো আমাদের সমস্যা। পেঁয়াজ যেহেতু পচনশীল তাই বেশি দিন ঘরে থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। আমরা যদি পেঁয়াজ ঠিকমতো সংরক্ষণ করতে পারতাম তাহলে পেঁয়াজ নিয়ে কোনো সমস্যা হতো না। বড় সমস্যা হচ্ছে পেঁয়াজ গুদামে রাখা যায় না। সেজন্য আমাদের প্রায় প্রতিবছর পেঁয়াজ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। পেঁয়াজের দাম হঠাৎ কোনো বছর কমে যায়। গতবছর দাম কম ছিল। ফলে চাষিরা এ বছর আবাদ করতে পারেননি। এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই থেকে আড়াই লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রথম দিকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেই নাই। এতে চাষিরা ভালো দাম পেয়েছে। এ মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে আমদানি না করলে দেশে পেঁয়াজ কমে যাচ্ছে এবং দাম আস্তে আস্তে বাড়তে ছিল সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমরা ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপিও দিয়েছি। কিন্তু এসেছে মাত্র তিন লাখ টন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ভারত রপ্তানিকে নিরুৎসাহিত করার জন্য ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এতে পেঁয়াজের দাম বাড়বে। যে বছর উৎপাদন কম হয়, দাম বেড়ে যায়। আর যখন ভারতে বেশি দাম বাড়ে এর ওপর রেস্ট্রিকশন দেয়। সেটা এবছর দেয় নাই। এবার তারা ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো শুরু করেছে।

তিনি বলেন, গতবছর কৃষি মন্ত্রণালয় দুইটা পদক্ষেপ নিয়েছে। একটা হলো গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বাড়ানো। দ্বিতীয়ত হলো পেঁয়াজ কীভাবে সংরক্ষিত রাখা যায় সে বিষয়ে কী করা যায়। এজন্য আমরা কিছু ঘর তৈরি করেছি। যেখানে ফ্যান দিয়ে পেঁয়াজ ঠাণ্ডা রাখা হয়। এতে ১৫০টি ঘরের পেঁয়াজ ভালো আছে। ফলে চাষিরা কম করে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। আর গ্রীষ্মকালে পেঁয়াজ উৎপাদন গতবার থেকে শুরু করেছি। এ বছর আমরা ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ করেছি। সেই পেঁয়াজটা আসবে অক্টোবরের শেষে নভেম্বরের প্রথম দিকে। নভেম্বরের আগে আমরা নতুন কোনো পেঁয়াজ পাবো না। কাজেই এ সমস্যাটা প্রকট। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর অক্টোবরে গিয়ে অস্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ে।  

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ভারতের এ পদক্ষেপের পরে পেঁয়াজের দাম কীভাবে সমলাবো। এবিষয়ে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমরা বলেছি প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে কেন অব্যাহতি দেন না। এতে আপনাদের বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। এ অনুরোধ করেছি। তারা বলেছে আমরা এ বিষয়টি বিবেচনা করছি। দ্রুত এ বিষয়টি প্রস্তাব আকারে মন্ত্রীদের গ্রুপে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তারা বলেছে বাংলাদেশকে বিশেষ বিবেচনায় দেখবে।  

তিনি বলেন, এখন এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য অন্য দেশ থেকে মিশর, তুরস্ক, চীনসহ অন্য দেশ থেকে আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। বাজার মনিটরিং করতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে শক্তভাবে। এক্ষেত্রে সবাইকে নিয়ে আমরা চেষ্টা করবো বাজারটা নিয়ন্ত্রণ করার। যাতে নিম্ন, মধ্য আয়ের মানুষ সহনীয় একটা দামে পেঁয়াজ কিনতে পারবে। একটু দাম বেশি দিতে হবে হয়তো কিন্তু পেঁয়াজ যাতে তারা খেতে পারে সে দিকে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। তবে এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, তারা সেটা করবে। তা সত্ত্বেও আমরা সব সময় বাণিজ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কীভাবে মোকাবিলা করা যায়। আমরা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছি অন্য দেশ থেকে যাতে পেঁয়াজ আনতে পারি।

দাম বাড়ার প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি যে, গ্রীষ্মকালীন যে পেঁয়াজ হচ্ছে তার কিছুটা প্রভাব বাজারে পড়বে। কাজেই খুব দাম বাড়ালে পরবর্তীতে যে সেটা থাকবে সেটা তারা বেশি দামে বেচতে পারবে না। এজন্য কৃষক ও আড়তদার ফড়িয়াদেরও চিন্তা করতে হবে।  

কবে থেকে আমদানি করতে পারবে এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমদানিতো কাল থেকেই হতে পারে। যারা আমদানি করে তারা কাল থেকেই করবে অসুবিধা নাই। তবে ব্যবসায়ীরা চিন্তা করে লাভ হবে কিনা। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি দাম বেশি থাকে তাহলেতো দাম...।  যে কেউ শুধু ভারত না, চায়না, জাপান, ইরান, এসব দেশ থেকে যদি আনতে চাই আমরা তাদের আইপিও দেবো।

কেউ কী এখন পর্যন্ত এসেছে আইপিওর জন্য জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি। কারণ তাদের হাতেতো আইপিও আছে। সেটাই আনে না। এছাড়া চাষিদের ঘরে অন্য বছরের তুলনায় পেঁয়াজ একটু বেশি আছে। দাম বাড়বে তবে আকাশচুম্বী হবে না বলে ধারণা করছি।  

সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা কি দুর্বল এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, মনিটরিং দুর্বল না। আসলে খোলা বাজার অর্থনীতি। সেখানে বাজার কতোটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কাজেই ইচ্ছা করলেই বাজার মনিটরিং করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। আসলে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। সরবরাহ বেশি হলে দাম অটো কমবে। এটাই হলো মূল কথা। আপনারা যতোই বলেন আমরা কেন সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছি না। আসলে সিন্ডিকেট ভাঙা অনেক কঠিন। তবে পেঁয়াজ সেলফলাইফ বাড়াতে পারলে ভবিষ্যতে এ সমস্যা থাকবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।