ঢাকা, রবিবার, ১৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ০২ মার্চ ২০২৫, ০১ রমজান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বছরে দুবার চাষের নির্ভরযোগ্য আলু ‌‘সানশাইন’ 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৫
বছরে দুবার চাষের নির্ভরযোগ্য আলু ‌‘সানশাইন’  কৃষকের হাতে সানশাইন ভ্যারাইটির আলু। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: কৃষি আর কৃষকের নির্ভরতার অন্যতম ফসল আলু। খাবারের এমন কোনো রেসিপি নেই যেখানে থাকে না আলুর উপস্থিতি।

অনায়াসে বলা যায়- সারাবছরই আলুর কদর বিরতিহীন।  

আর এই আলুর মাঝে নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠছে ‘সানশাইন’ ভ্যারাইটি। মাটি থেকে এর উৎপাদন সময় মাত্র ৬০ দিন। আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়- এ আলু বছরে দুইবার অনায়াসে চাষ করা যায়।

শনিবার (১ মার্চ) সকালে ছড়া ঘেঁষে বয়ে যাওয়া দুর্গম সবজিগ্রাম পারেরটনে গিয়ে দেখা গেছে, উঁচু ভিটার মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে চাষি আলু বের করছেন। লাঙ্গল চেপে ধরে জোরে ঠেলা দিতেই ফলার আঘাতে মাটির ভিপি থেকে পরিপূর্ণ সাইজের আলুগুলো বের হয়ে আসছে। শ্রমিকরা সেগুলো কুড়িয়ে কুড়িয়ে সংগ্রহ করছেন। তারপর ত্রিপল টাঙানো এক অস্থায়ী ঘরে জড়ো করে রাখা আলুগুলো পুরুষ এবং নারী শ্রমিকেরা তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সাইজে যথারীতি বাছাই করে চলেছেন।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মনোনীত শ্রীমঙ্গলের পারেরটন গ্রামের কৃষক মো. নাজমুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এ আলুর নাম ‘সানশাইন’। এ আলু বাজারে পাবেন না। এখনো এ আলুগুলো বাজারে ছাড়া হয়নি। এগুলো আমি ফসলের চুক্তি অনুযায়ী বীজ করার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএডিসিকে দিয়ে দেই। তারা এগুলোকে বীজ তৈরি করে সারা দেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত বড় সাইজের আলু স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেই।

আলু চাষাবাদের খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি দুই বছর ধরে এই আলু চাষ করছি। গতবছরই আলু চাষে ভালো লাভ হয়েছিল। চলতি বছর আমার ১১ কেয়ার (বিঘা) জমিতে আলু চাষ করেছি। আশা করছি এবার আমি প্রায় ৮০০ মণ আলু পাবো। বড় সাইজের আলুগুলো আমরা স্থানীয় বাজারে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি দরে বিক্রি করে দেই। এ আলু সেদ্ধ করে খেতে খুব ভালো লাগে। আলু চাষে বিঘা প্রতি আমার খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। দৈনিক শ্রমিকদের মজুরি, নানা জাতের কীটনাশক, সার ক্রয়সহ নানান বিষয়ে প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। আশা করি এবারও আরও বেশি দাম পাবো।

তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কৃষকরা আড়তদার অর্থাৎ মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে জিম্মি। আমরা যদি আমাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যগুলো সরাসরি ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে পারতাম তাহলে আমরা ন্যায্য মূল্য পেতাম। এতে আমার মতো হাজারো কৃষক লাভবান হতো। বিষয়টি কৃষি বিভাগকে দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করছি।

তিনি বলেন, আমি বীজের জন্য আলু চাষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএডিসিকে দেই। উনারা আমাকে ন্যায্য মূল্যে সরকারিভাবে নির্ধারিত মূল্য দেয়।

বিএডিসির মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সানশাইন আলুবীজের প্রচারণাটা দেশের মাঝে আমিই অনলাইনে শুরু করি। প্রচারণার দায়িত্বটা আমার উপরই সরকারিভাবে দেওয়া হয়েছিল। সারা দেশব্যাপী প্রচারণার পর দেখতে পাচ্ছি উত্তরবঙ্গে চাষাবাদে এগিয়ে আছে। আমাদের পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল পিছিয়ে আছে। আমার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে সানশাইনের আলু বীজ রয়েছে। কৃষকরা এখনো ডায়মন্ড আলুবীজ চাষ করেন। কৃষকদের আমি বলেছি, আপনারা একবছর সানসাইন বীজ নিয়ে দেখেন, ‘এটি ছাড়া আপনি অন্য বীজ আর নিতে চাইবেন না। ‘ এভাবে বলে বলে আমি কৃষকদের মধ্যে এটা প্রচার করেছি। তবে প্রতি বছরই সানসাইন আলুর চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এ আলু অল্প তাপে সেদ্ধ হয়ে যায় এবং খেতেও তুলনামূলক সুস্বাদু।

আলুবীজ সংরক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি, হিমাগার কক্ষে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থেকে ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় যতদিন খুশি ততদিন রাখা যাবে। কোনো সমস্যা হবে না। তবে আমরা সাধারণত এক সিজনের (মৌসুম) বীজ অপর সিজনে (মৌসুম) বিক্রি করে ফেলি। অর্থাৎ এ বছর যেটা উৎপাদন হবে সেটা আগামী বছরই বিক্রি হবে। অধিকাংশ কৃষকরা আমাদের কাছ থেকে নভেম্বরের দিকে আলুবীজগুলো ক্রয় করে নিয়ে যান। অক্টোবরের শেষদিক থেকে আমরা বীজের বিতরণ শুরু করি।

এ আলুর আরেকটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন, কেউ যদি এ আলু বছরে দু’বার উৎপাদন করতে চায় তাহলে এ আলু দিয়ে সেটা সম্ভব। কারণ হলো- এ আলু মাত্র ৬০ দিনে ফলন দেয়। কেউ যদি অক্টোবরের মাঝামাঝিতে এ আলু লাগায় তবে সে ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে গিয়ে উঠিয়ে ফেলতে পারবেন। আবার ডিসেম্বরে লাগিয়ে ফেব্রুয়ারিতে তুলে ফেলতে পারবেন। আগাম লাগলে তারা আগাম তুলতে পারবেন এবং দামও বেশি পাবেন।

‘একমাত্র সমস্যা’ সম্পর্কে এ কর্মকর্তা বলেন, এ আলুর একটা সমস্যা আছে। আর তা হলো- এটি প্রথমে গজাইতে (পরিপক্ব হতে) একটু সময় বেশি নেয়। তখন কৃষকরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। যখন গজিয়ে উঠে তখন গাছ লিকলিকে হয়ে যায়। তখন কৃষকরা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘হায় হায় আমার বীজগুলো মনে হয় গজাইলো না। ‘ কয়েকদিন পরই সেই আলুগুলো বেশ বড় হয়ে যাবে এবং মাটির নিচে প্রচুর আলু উৎপন্ন হবে। কিন্তু প্রথম দিকে চাষিরা খুবই হতাশ হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, এখন যে আলুগুলো কৃষক জমি থেকে তুলছেন কিন্তু বাজারে নিয়ে গেলে সাধারণত তেমন দাম পাবেন না। তবে দুই থেকে চার মাস কৃষকরা যদি নিজের ঘরে আলুগুলো সংরক্ষণ করেন তারপর বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন তখন তারা অবশ্যই ভালো দাম পাবেন। সেই ক্ষেত্রে সানশাইন আলুটা সেরা। অনায়াসে চার থেকে পাঁচ মাস ঘরে রাখা যায়। হিমাগারেও রাখতে হবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২৫
বিবিবি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।