ঢাকা, রবিবার, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ জুলাই ২০২৫, ২৪ মহররম ১৪৪৭

অর্থনীতি-ব্যবসা

ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের পুনর্মূল্যায়ন দাবি ডিবিএ’র

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:১০, জুলাই ২০, ২০২৫
ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের পুনর্মূল্যায়ন দাবি ডিবিএ’র ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের লোগো।

ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের পর্যালোচনা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছে পুঁজিবাজারের স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।  

শনিবার (১৯ জুলাই) ডিবিএ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ডিবিএর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বরাবর তার কার্যালয়ে দাখিল করা হয়। একই সঙ্গে উক্ত চিঠির অনুলিপি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যানকেও দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের অধীন ধারা নং-৪.১(বি)(আই) উল্লেখ করে এর সংশোধনের জন্য সুপারিশ করা হয়। উল্লেখিত ধারায় ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ ১৩ সদস্য বিশিষ্ট রয়েছে, যাদের মধ্যে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক, চারজন ডিএসই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, একজন কৌশলগত বিনিয়োগকারী পরিচালক ও একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এক্স-অফিসিও হিসেবে মনোনীত হওয়ার বিধান রয়েছে এবং পর্ষদ চেয়ারম্যান শুধুমাত্র সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্য হতে মনোনীত হওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।  

পর্ষদ গঠনের এ ভারসাম্যহীনতার কারণে পূর্ববর্তী রাজনৈতিক শাসনামলে ডিএসইর পর্ষদ চেয়ারম্যানসহ স্বতন্ত্র পরিচালকদের রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হতো। এ স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে অনেকেই পুঁজিবাজার বহির্ভূত খাত থেকে আসায় পুঁজিবাজার সম্পর্কে তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না থাকার ফলে তথ্যবহুল সিদ্ধান্ত নিতে বা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি। অধিকন্তু, মালিকানা সত্ত্ববিহীন স্বতন্ত্র পরিচালকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপস্থিতি পুঁজিবাজারসহ বাজার অংশীজনদের স্বার্থের পরিপন্থি সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। আইনের এরূপ বিধান ও অনুশীলন পুঁজিবাজারকে রাজনীতিকরণের মাধ্যমে তৎকালীন সরকারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে বাজারের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়েছে। বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডিএসইর প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ভেঙে পড়েছে। এমতাবস্থায় আমরা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সরকারের শাসনামলে এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছি।  

এ অবস্থা থেকে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে আমরা ডিএসই ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের উল্লেখিত ধারা নং- ৪.১(বি)(আই)-এর নিম্নরূপ সংশোধনের সুপারিশ করছি:

সুপারিশ¬ (১): ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ কাঠামোর পুনর্গঠন ও পরিবর্তন।

ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ ১১ সদস্য বিশিষ্ট হবে, যাদের মধ্যে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক, চারজন ডিএসই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, একজন কৌশলগত বিনিয়োগকারী পরিচালক ও একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এক্স-অফিসিও হিসেবে পর্ষদে নিযুক্ত হবেন। সেই ক্ষেত্রে ‌‌‘পর্ষদ চেয়ারম্যান’ এক্স-অফিসিও পরিচালক ব্যতিরেকে অন্য সব পরিচালকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং পর্ষদ চেয়ারম্যান নতুন বোর্ড গঠনের পর প্রথম সভায় পর্ষদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন।  

এর ফলে ডিএসইর পর্ষদ কাঠামোয় ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে সব কার্যক্রম ও সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা আসবে এবং বাজারের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হবে।    

সুপারিশ–(২): ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার (সিআরও) রিপোর্টিং কর্তৃপক্ষ হিসেবে ক্ষমতায়ন।  

ডিএসই বোর্ড ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেগুলেশন ২০১৩ এর ধারা নং- ১৬(১) ও ডিএসই ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম-এর ধারা নং- ৫.২.২(বি) অনুসারে, প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) সরাসরি রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির (আরএসি) কাছে রিপোর্ট করবেন, তবে সিইও-এর কাছে প্রশাসনিক রিপোর্টিং থাকবে। উক্ত রেগুলেশনে এমডি/সিইও-এর কাছে সিআরও-কে তার কার্যক্রম সম্পর্কিত রিপোর্ট প্রদানের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক পুঁজিবাজারের রেগুলেটরি বিষয়ে অবহিত থাকেন না। এরূপ সমন্বয়হীনতার দরুন রেগুলেটরি বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সহিত বাজার অংশগ্রহণকারীদের দূরত্ব সৃষ্টি করে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে প্রত্যাশার ব্যবধান তৈরি হয়ে আস্থাহীনতা বৃদ্ধি পায়।

এ বিষয়ে আমাদের সুপারিশ হলো, ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার (সিআরও) রিপোর্টিং কর্তৃপক্ষ হিসেবে গণ্য হবেন এবং সেই ক্ষেত্রে রেগুলেটরি সব কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এখতিয়ারভুক্ত থাকবে। একই সঙ্গে, সিআরও ডিএসই রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির নিকট তার রিপোর্টিং অব্যাহত রাখবেন।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ডিএসইর কর্মকাণ্ড, কর্তৃত্ব এবং তার এখতিয়ারভুক্ত পুঁজিবাজারের সব বিষয়ের জন্য দায়ী থাকেন ও জবাবদিহি করে থাকেন। তাই রেগুলেটরি বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সম্যক অবগতি বাজার অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে সমন্বয় বৃদ্ধি করবে এবং বাজার মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।

সুপারিশ–(৩): ডিএসইসির সাংগঠনিক অর্গানোগ্রাম ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম থেকে রহিতকরণ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের ৪.৪.৩ (এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা) ধারায় ডিএসইর জন্য সুনির্দিষ্ট ও স্থায়ী একটি সাংগঠনিক অর্গানোগ্রামের রূপরেখা দেওয়া আছে, যা এক্সচেঞ্জ পরিচালনায় সাংগঠনিক কাঠামো ও প্রয়োজনীয় পদ পরিবর্তনকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।

উক্ত সাংগঠনিক অর্গানোগ্রাম সংশোধন করার ক্ষমতা কেবলমাত্র ডিএসই বোর্ডের ওপর ন্যস্ত থাকা উচিত, যাতে প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় সময়োপযোগী এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। অতএব, আমরা ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম থেকে উল্লেখিত ধারাটি রহিতকরণের জন্য সুপারিশ করছি। এটি এক্সচেঞ্জকে ক্ষমতায়িত করতে এবং একটি স্ব-নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এসআরও) হিসেবে কাজ করতে সহায়তা করবে।

আমরা আশা করি যে, পুঁজিবাজারের বৃহৎ স্বার্থে এক্সচেঞ্জের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং বাজারের অংশীজনদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করতে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আমাদের এ প্রস্তাবগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এসএমএকে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।