বিদেশে পাচার হওয়া হাজার কোটি টাকার ১১টি ও ২০০ কোটি টাকার ১০১টি কেস চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, যেহেতু টাকা বাইরে চলে গেছে, সেটি আর কথায় ফেরত আসবে না।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার দৃশ্যমান উদ্যোগ কবে দেখা যাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সবকিছু দৃশ্যমান হতে সময় লাগে। আমরা ১১টি সেনসেটিভ কেস চিহ্নিত করেছি। টাকা পাচারকারীরা এবং তাদের সহযোগীরা সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান। যেমন- টাকা কেরানীগঞ্জ থেকে পাঠানো হলেও সেটি পঞ্চগড় ঘুরে সিলেটে যায়—এভাবে লেয়ারিং করে পাচার হয়। কারা করেছে, কোথায় টাকা গেছে—সব চিহ্নিত হয়েছে। এখন আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বলে দিলেইতো তারা টাকা দিয়ে দেবে এমন বিষয় না। এক ফিলিপাইন থেকে টাকা আনতেই যান বের হয়ে যাচ্ছে, কতো টাকা চলে গেলো। এখানে আমাদের কতোগুলো এমএলএস হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। আবার এমএলএস মানে শুধু একটা অনুরোধ না। এখানে অনেক ধরনের ফরম পূরণ করতে হয়। লন্ডনে এক ভদ্রলোকের দুই-তিনটা বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে একজন আইনজীবী নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। যেটা বিশ্বের সেরা আইনজীবী। তাদের মোকাবিলায় আমাদেরও সে মানের আইনজীবী লাগবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীর মাধ্যমে বিদেশি পক্ষের সঙ্গে কথা বলে কিছু অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। টাকা ফিরিয়ে আনা হবে সেটার থেকেও বড় হচ্ছে সবাইকে একটা সতর্কবাণী দেওয়া- যাতে ভবিষ্যতে কেউ করলে পার পাবে না৷ এখন পরবর্তী সরকার যদি মনে করে এগুলো কিছু করবো। তখন আপনারাই ধরবেন বর্তমানে যে ১১ জন আছে এর সঙ্গে আরো ১২ জন যোগ হবে। এটা একটা ভালো মেসেজ।
তিনি আরও বলেন, আমরা আইএমএফ থেকে ১.৩ মিলিয়ন ডলার আনছি। যদি একজনের পাচার করা ৪০ হাজার কোটি টাকা ফেরত আনতে পারতাম, তাহলে আইএমএফ-এর কাছে যেতে হতো না। দেশে অনেকের সম্পত্তি ফ্রিজ করা হয়েছে। দেশের সম্পত্তি ফেরত আনা সহজ হলেও বিদেশের সম্পদ ফেরত আনা কঠিন। শুধু দুবাই বা সিঙ্গাপুর নয়, ট্যাক্সহেভেন হিসেবে পরিচিত বারবাডোজ, এন্টিগুয়া, আইল অব ম্যানসহ নানা স্থানে টাকা গেছে—যা আমরা শনাক্ত করেছি। তবে সেসব দেশের আইন-কানুনের কারণে টাকা ফেরত আনা কঠিন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ২০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের ১০১টি কেস চিহ্নিত হয়েছে, এর মধ্যে অনেক পরিচিত ব্যক্তি থাকতে পারেন। আর ১১টি কেসে হাজার হাজার কোটি টাকা জড়িত।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
জিসিজি/আরবি