ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নকল সনদে বহাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ইডি মাহফুজ!

শাহেদ ইরশাদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫
নকল সনদে বহাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ইডি মাহফুজ!

ঢাকা: বয়স কমাতে এসএসসি পরীক্ষার নকল সনদ দিয়েই চাকরিতে বহাল আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান। আসল সনদের বয়সে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরে অবসরে যাওয়ার কথা।


 
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮১ সালের ১৫ জুন ম. মাহফুজুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে যোগদান করেন। পর্যায়ক্রমে উপ-পরিচালক, যুগ্ম-পরিচালক, উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাহী পরিচালকের।
 
সরকারি চাকরির বিধান মোতাবেক ৬০ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করার কথা ছিল ম. মাহফুজুর রহমানের। চাকরি এক বছর বেশি করার লোভে যোগদানের ১৭ বছর পর বয়স ১১ মাস কমানোর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে এসএসসির আরেকটি সার্টিফিকেট জমা দেন। আর সেই সার্টিফিকেটের বয়স অনুযায়ী এখনও বহাল রয়েছেন তিনি।  

২০০১ সালে জমা দেয়া সনদটি আইনগত জটিলতা এড়াতে নাকচ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও দুইবার একই আবেদন করেন ম. মাহফুজ। পরের দুইবারও নাকচ হয়ে যায়।  

বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই ২০১২ সালের ১২ নভেম্বর অর্থমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ আকারে পৌঁছায়।

মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। অভিযোগ তদন্ত করে গভর্নরকে অভিহিত করতে ডেপুটি গর্ভনর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসানকে চেয়ারম্যান করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম. মাহফুজুর রহমান চাকরিতে যোগদানের সময় জমা দেয়া মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেটের সনদে জন্ম তারিখ ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি। ১৭ বছর পর ১৯৯৯ সালের ১৭ অক্টোবর ইস্যুকৃত সংশোধিত জন্ম তারিখের (০১/১১/১৯৫৬) একটি সার্টিফিকেট জমা দেয়।
 
২০০১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সংশোধিত সার্টিফিকেটটি গ্রহণ করার জন্য ব্যাংকের কাছে আবেদন করেন ম. মাহফুজুর রহমান। দীর্ঘ সময় পর সার্টিফিকেটটি গ্রহণ করলে পূর্ববর্তী পদ অবাঞ্চিত হবে মর্মে ২০০৩ সালে ৬ এপ্রিল নাকচ করে দেয়। একই বছরের ২১ অক্টোবর পুনরায় আবেদন করলে ১০ ডিসেম্বরও সেটি নাকচ হয়ে যায়।
 
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তৎকালীন সময়ে অন্য কর্মকর্তাদের জমা দেয়া সংশোধিত সার্টিফিকেটের সঙ্গে ম. মাহফুজুর রহমানের দেওয়া সার্টিফিকেটের লেখার ফরমেটের কোন মিল নেই। যেমন ১৯৭২ সালে প্রকাশিত ফলাফলের সার্টিফিকেটে ঢাকার ইংরেজি বানান Dhaka লেখা হতো না। লেখা হতো Dacca। মাহফুজুর রহমানের জমা দেয়া সার্টিফিকেটে লেখা আছে Dhaka।
 
আগে জমা দেয়া সার্টিফিকেটের সঙ্গে পরে দেয়া সার্টিফিকেটে তদন্ত কমিটির কাছে যেসব গড়মিল পরিলক্ষিত হয়েছে সেগুলো হলো, নকল সার্টিফিকেট এবং সংশোধিত সার্টিফিকেট এক নয়। ২১ বছর পর জমা দেওয়া নকল সার্টিফিকেটটিও মূল সার্টিফিকেটেরও অনুরুপ নয়।

একই সময়ে জমা দেয়া অপর দুটি সনদে Secondary School Certificate Examination মাহফুজুর রহমানের সার্টিফিকেটে লেখা আছে, Secondary School Certificate Examination 19 এবং হাতে লেখা 71।
 
সার্টিফিকেটের সঠিকতা যাচাইয়ে ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর চিঠি পাঠায় তদন্ত কমিটি। যার উত্তর আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে সরাসরি জানতে চাইলেও কোন সদুত্তর মেলেনি।
 
ম. মাহফুজুর রহমানের মাধ্যমিক উত্তীর্ণ কিশোরগঞ্জের ভৈরব কেবি হাইস্কুলে রক্ষিত নথিপত্রে দেখা যায়, নবম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সময় জন্ম তারিখ ১-১১-১৯৫৬ লেখানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, তার জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য স্কুল থেকে কোনো সুপারিশ করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে ম. মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।