ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অর্ডার পেতে চাইলে যেতে হবে বিদেশ

ঊর্মি মাহবুব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫
অর্ডার পেতে চাইলে যেতে হবে বিদেশ ফাইল ফটো

ঢাকা: রাজনৈতিক অস্থিরতার আগুনে পুড়ছে সারা দেশ। সাথে যেন পুড়ছে পোশাক শিল্পের ভবিষ্যতও।

সহিংসতার কারণে অর্ডার দিতে ইচ্ছুক ক্রেতারা আর বাংলাদেশে আসতে চাইছেন না। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো সাফ জানিয়ে দিয়েছে, নতুন  অর্ডার পেতে চাইলে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের যেতে হবে ক্রেতাদের দেশে।

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেল।
 
দেশীয় পোশাকনির্মাতা প্রতিষ্ঠান জারা জিন্সকে অর্ডার দিতে চলতি মাসেই বাংলাদেশে আসার কথা ছিলো আন্তর্জাতিক ক্রেতা আলডির প্রতিনিধি দলের। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অব্যাহত সহিংস পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ সফর বাতিলই করে দিয়েছেন ব্র্যান্ডটির কর্মকর্তারা। জারা জিন্সকে তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অর্ডার পেতে চাইলে জারা জিন্সের প্রতিনিধিকে জার্মানিতে আলডির কার্যালয়ে যেতে হবে। সহিংস ও সংঘর্ষময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে আপাতত তারা ঝুকিঁ নিয়ে বাংলাদেশমুখো হবেন না।

এ বিষয়ে জারা জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মেহেদী হাসান রানা বাংলানিউজকে বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অব্যাহত সহিংসতার কারণে আমাদের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছে ক্রেতারা।   জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে ক্রেতারা আর এদেশে আসতে চাচ্ছে না। অর্ডারের জন্য আলোচনা করতে অর্থ ও সময় ব্যয় করে আমাদেরই এখন ছুটে যেতে হচ্ছে বাইরের দেশে। বাইরে গিয়ে আলোচনা করলে যে অর্ডার পাওয়া যাবেই সে নিশ্চয়তাটুকুও নেই। কারণ এই অস্থিতিশীল সময়ে ঠিক মতো উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আদৌ আমরা নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে পারবো কি না সে নিয়েও তারা সন্দিহান।
 
ক্লাসিক ফ্যাশন-এর সাথে জানুয়ারি মাসে অর্ডারের বিষয়ে আলোচনা করার কথা ছিলো জার্মানির কয়েকটি ব্র্যান্ডের। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতার কারণে এসব ব্র্যান্ডও বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজীম।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ক্লাসিক ফ্যাশনে অর্ডার দেওয়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিদের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু তারা আর আসছেন না। এই  ব্র্যান্ডগুলোর মতো অন্যান্য অনেক দেশের  ব্র্যান্ডই বাংলাদেশে আসার পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা বাতিল করে দিয়েছে। তারা এখন উল্টো আমাদেরই যেতে বলেছে তাদের দেশে। এর ফলে একদিকে আমরা ইমেজ সঙ্কটে পড়ছি ঠিক তেমনি খরচও বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। নষ্ট হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। মেই সঙ্গে অপচয় হচ্ছে মূল্যবান সময়ের।
 
রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশসমূহ। এমনটাই জানিয়েছেন নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে তখন কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে নেই এ-খাতে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রসমূহ। এদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে পুঁজি করে তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে ক্রেতাদের নেতিবাচক ধারণা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্রেতারাও এসব দেখেশুনে বাংলাদেশের প্রতি ক্রমাগত আগ্রহ হারাচ্ছে। যারা ভাবছেন যে কেবল কম মজুরির কারণে ক্রেতারা আর বাংলাদেশ ছেড়ে যাবেন না, তারা এখনো বোকার রাজ্যেই বসবাস করছেন।

এ ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে একটু বেশি দামে হলেও ক্রেতারা পার্শ্ববর্তী ভারত, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশকে বাংলাদেশের অর্ডারগুলো দিয়ে দেবে। মন্তব্য করেন মোহাম্মদ হাতেম।

২০১৫ সালের শেষের দিকের ক্রিসমাস ও  শীতকালীন পোশাকের অর্ডার জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে ক্রেতারা দিয়ে থাকেন বলে জানান বিজিএমইএ কর্মকর্তারা। আর এ সময় এই অস্থিরতায় যেহেতু ক্রেতারা বাংলাদেশে আসার আগ্রহই হারিয়ে ফেলছেন সেহেতু অর্ডার আগের তুলনায় অনেক কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছে বিজিএমইএ।
 
রাজনৈতিক অস্থিরতায় পণ্য সরবরাহ বিলম্বিত বা বিঘ্নিত হলে ক্রেতাদের ডিসকাউন্ট দিতে হয়। ২০১৩ সালে পোশাক রফতানিতে ক্রেতাদের প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার পণ্য ডিসকাউন্টে দিতে হয়েছে বলে জানা যায় বিজিএমইএ থেকে। তাছাড়া একই বছর সড়ক ও সমুদ্রপথে হরতাল অবরোধের কারণে পণ্য রফতানি করতে না পারায় আকাশপথে তা ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করতে হয়েছিলো। তাতে বাড়তি খরচ হয়েছিলো প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরে এই অবরোধ চলতে থাকলে ক্ষতির পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড তৈরি হবে বলে মনে করেন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মো.শহীদুল্লাহ আজীম।

বিজিএমইএ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, একদিনের হরতালে ৬৯৫ কোটি টাকার রফতানি  ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে পোশাকশিল্পের উৎপাদন হরতাল বা অবরোধের একদিনে ব্যাহত হয় ২১৫ কোটি টাকা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।