ঢাকা: বন্ধন ব্যাংক কর্পোরেট বা বড় ব্যবসায়ীকে নয়, শুধু গরীবদের ঋণ দেয়। কারণ গরীবদের ঋণ ফেরত দেওয়ার প্রবনতা বেশি।
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) এক অনুষ্ঠানে ভারতের বন্ধন ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক চন্দ্র শেখর ঘোষ এ কথা বলেন।
ভারতীয় নাগরিক চন্দ্র শেখর ঘোষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। সম্প্রতি সপরিবারে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন তিনি। তার সম্মানে বিআইবিএম তাদের অডিটোরিয়ামে ‘ভারতের ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ ও সুবিধা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম’র মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী।
চন্দ্র শেখর বলেন, গত সেপ্টেম্বর শেষে ভারতে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিলো মোট ঋণের ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকের ২ শতাংশের কাছাকাছি। এই অবস্থায় ভারত সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে আগামী চার বছরে ৭০ হাজার কোটি রুপি মূলধন সরবরাহ করবে। ঋণ দেওয়ার পর ঋণ গ্রহীতারা ঋণের টাকা কিভাবে ও কোথায় ব্যবহার করেন তা কঠোরভাবে তদারকি করা হয়। এ কারণে ঋণের অপব্যবহার কম হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো ভারতেও রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোতে পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পায়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এসব পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনা অনেক ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী। মোবাইল ব্যাংকিংসহ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক নানা কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। এখানকার ঋণ ও আমানতের মধ্যকার সুদহারের ব্যবধান ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ভারতের স্প্রেড ৫ শতাংশ। আর ভারতে যেখানে মাত্র ২ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায়, আমাদের দেশে সেখানে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে সরকারের মূলধন যোগান দেওয়ার সমালোচনার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত সরকার সে দেশের সরকারি ব্যাংকগুলোকে ৭০ হাজার কোটি রুপি মূলধন যোগান দিচ্ছে। আর আমাদের দেশে এ বছর কয়েকটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে মূলধন যোগানের জন্য বাজেটে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মূলধন যোগান দেওয়া সব সময় খারাপ না।
চন্দ্র শেখরের বাবা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে গেলেও তার জীবনের বড় একটি অংশ কেটেছে বাংলাদেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে পরিসংখ্যান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে এক যুগের বেশি সময় ধরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে কাজ করেন তিনি।
১৯৯৭ সালে তিনি ভারতে চলে যান। ২০০১ সালে সেখানকার গ্রামীন নারীদের ঋণ দিতে বন্ধন নামে একটি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি চালু করেন। গত বছর ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বন্ধনকে ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
এসই/আরএম