ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘হলুদ’এ দাম না পেয়ে হতাশ কৃষক

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৬
‘হলুদ’এ দাম না পেয়ে হতাশ কৃষক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খাগড়াছড়ি: পাহাড়ের মাটিতে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের খ্যাতি দেশজোড়া। এখানকার উর্বর মাটি ও আবহাওয়া সহায়ক হওয়ায় উৎপাদিত পণ্য গুণে-মানে সেরা।



আর দেশের খ্যাতি অর্জন করে পাহাড়ে কৃষিপণ্যের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে ‘হলুদ’। মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে এ হলুদ সংগ্রহে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে খাগড়াছড়ি আসেন ব্যবসায়ীরা।

পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া সহায়ক হওয়ায় জেলার ছোট ছোট কম ঢালু পাহাড়ে হলুদের চাষ হচ্ছে। রোগ বালাই কম হওয়ায় অন্যান্য মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে হলুদের চাষ করে অনেকেই লাভের মুখ দেখেছেন। অনেক কৃষক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে করেছেন হলুদের চাষ।

তবে ইদানিং দেশখ্যাত এ হলুদ চাষ নিয়ে কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। কারণ বিভিন্ন স্থানে এসব হলুদের চাহিদা থাকলেও বাইরে থেকে আসা হলুদের কারণে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা।

জেলা সদরের মাইসছড়ি এলাকার হলুদ চাষি আপ্রুশি মারমা বলেন, এ বছর ৩ একর জায়গায় হলুদ চাষ করেছি। তবে এখনো বাজারে তুলিনি। জমি থেকে হলুদ তুলে প্রক্রিয়াজাত করছি। কিন্তু বাজারে হলুদের দাম শুনে তো হতাশ আমি। এক/দুই বছর আগে যেখানে হলুদের দাম মণ প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ছিল সেই হলুদ এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায়।

আলুটিলা এলাকার হলুদ চষি ধনয়ন ত্রিপুরা ও ত্রিনয়মন ত্রিপুরা বলেন, ঋণ নিয়ে ৩ একর জায়গায় হলুদ চাষ করেছি। হলুদ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারলেও লাভের মুখ দেখবো কিনা বুঝতে পারছিনা।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ সালে খাগড়াছড়িতে ৪ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ করা হয়। আর উৎপাদন হয় ১৯ হাজার ৮৭৭ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ৪ দশমিক ৪ মেট্রিক টন।

২০১৪-১৫ সালে ৪ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়। আর উৎপাদন হয় ১৬ হাজার ৪৫৫ মেট্রিক টন।

আর চলতি ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে চাষকৃত জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৫৬ হেক্টর। তবে এখনো উৎপাদন চূড়ান্ত করেনি কৃষি বিভাগ।

এদিকে, সরেজমিন খাগড়াছড়ি জেলা সদরের হাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হলুদের ব্যাপক সরবরাহ রয়েছে। ট্রাকে ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে বিখ্যাত এ হলুদ।

দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হলুদ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মো. আবদুর রহিম ও নাজিম উদ্দিন। তারা জানান, এখানকার হলুদ অত্যন্ত ভালো হওয়ার পরও ইদানিং বড় বড় বিপণন কোম্পানিগুলো মূলত এখান থেকে হলুদ না কিনে দেশের বাইরে থেকে হলুদ আনছেন। আর এ কারণেই ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না প্রান্তিক চাষিরা।

খাগড়াছড়ি আদা, হলুদ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সোলায়মান জানান, এখানকার উৎপাদিত হলুদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ঠিকি। তবে বিগত সময়ের তুলনায় একটু কম। কারণ বাইরে থেকে আসা হলুদের প্রভাব পড়েছে বাজারে। তারপরও জেলার এক একটি হাট বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ ট্রাক হলুদ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়।

সরকার কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ এবং স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করার ব্যবস্থা করলে হলুদ চাষে আগ্রহ বাড়বে বলে তিনি জানান।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, পাহাড়ি জমিগুলো হলুদ চাষের জন্য উপযোগী। কৃষকদের জন্য সহজ পদ্ধতিতে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা, দেশের বাজারে স্থানীয় হলুদকে গুরুত্ব দিয়ে বাইরে থেকে হলুদের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া এবং বাজার ব্যবস্থাপনা করে দিতে পারলে হলুদ চাষে আগ্রহী হবে কৃষক।

স্থানীয়ভাবে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা আর শিল্পকারখানা গড়ে তোলা গেলে তৃণমূল পর্যায়ের চাষিরা হলুদ চাষে উৎসাহিত হবে, আর এতে হলুদ চাষে আরো সাফল্য আসবে বলে প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।