ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কোরবানির চামড়া কিনবেন না ট্যানারি মালিকরা!

এস এম আববাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৬
কোরবানির চামড়া কিনবেন না ট্যানারি মালিকরা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে রাজধানীর হাজারীবাগেই ব্যবসা চালাতে চান ট্যানারি মালিকরা। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

তবে সুবিধাজনকভাবে ব্যবসা করতে ব্যর্থ হলে ভরা মৌসুমে কোরবানির চামড়া কেনা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
 
সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের একমাসের মাথায় চামড়া মৌসুমের ঠিক আগ মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানালেন বাংলাদেশ ট্যানারি  অ্যা‍সোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শহীন আহমেদ।  
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা দিয়ে অনেকের পক্ষেই ব্যবসা চালানো সম্ভব হবে না। তাছাড়া আসন্ন চামড়া মৌসুমে রাতারাতি ট্যানারি সরিয়ে নেওয়াও সম্ভব হবে না। উপরন্তু সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে এখনও বর্জ্য অপসারণের পুরো কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় ব্যবসায় লোকসান না গুণে আসন্ন মৌসুমে চামড়া কেনাই বন্ধ করে দেবেন টেনারি মালিকরা। আর উচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রিভিউ আবেদন করবো’।


 
হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর না করা পর্যন্ত ১৫৪ ট্যানারি শিল্প মালিককে  ১০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করে গত ১৮ জুলাই রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।   সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের পর একমাস হতে গেলেও সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেননি মালিকরা।
 
বিটিএ’র চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বলেন,  এখনও বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়নি চামড়া শিল্প নগরী সাভারে। সেখানে রাতারাতি গেলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে পড়বে। আর সাভারে স্থানান্তরিত একমাত্র রিলায়েন্স ট্যানারি লিমিটেড ইউনিট-২ থেকে এখনও বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা অসম্পূর্ণ। তাই স্থানান্তরের আগেই সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করতে হবে সরকারকে।
 
তিনি অভিযোগ করে বলেন, চামড়া ব্যবসা নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এটি ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় নেওয়া হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে সরকারের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।
 
গত শনিবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব ট্যানারি মালিকই কারখানা চালু রেখেছেন। তবে তাদের দাবি- বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে কারখানা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্যানারি মালিক বলেন, ‘আমরা ব্যবসা বন্ধ করে বসে আছি সরকারের নির্বাহী আদেশের অপেক্ষায়। অন্তত এই মৌসুমে যেনো কোনো ব্যবস্থা করে দেয় সরকার’।
 
মালিকরা বলছেন, এবারের চামড়া মৌসুমে হাজারীবাগেই ব্যবসা চালাতে চান তারা। এরপর পর্যায়ক্রমে সাভারে ট্যানারি সরিয়ে নেবেন।
 
তবে পোস্তার আড়ৎদাররা বলেন, ‘সরকারের কাছে আড়‍ৎ স্থানান্তরে দাবি জানিয়েছি। নতুন চামড়া শিল্প এলাকায় আড়‍ৎ সরিয়ে নিতে আমরা প্রস্তুত’।
 
দিনভর এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাজারীবাগে কেমিক্যালের পানিতে ড্রেন উপচে রাস্তা ডুবে আছে। ময়লা-আবর্জনাও রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। এখানকার ট্যানারি শ্রমিক বা বাসিন্দাদের জনস্বাস্থ্য নিয়ে কোনো বিকার নেই ব্যবসায়ীদের।
 
ঢাকা ট্যানারি মোড়ের আশপাশে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লবণ দেওয়া চমড়াগুলোকে পরবর্তী প্রক্রিয়ায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাস্তার ওপরেই। শেরেবাংলা রোডের ড্রেন উপচে পুরো রাস্তায় কেমিক্যালের কালো পানি ছেয়ে গেছে।
 
স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, প্রতিদিন জরিমানা দিয়ে হাজারিবাগে ট্যানারি পরিচালিত হলেও জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে সরকারের নজরদারি জরুরি। কারণ, অনেক মালিকের পক্ষে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে ট্যানারি পরিচালনা করা সম্ভব।
 
অন্যদিকে বেশিরভাগ ট্যানারি ব্যবসায়ী ও তাদের লোকজনের বক্তব্য, প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিয়ে ট্যানারি চালানো সম্ভব নয়। অনেককেই ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। তবে এসব ব্যবসায়ীরা উচ্চ আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করে নিজেদের পরিচয় দিতে রাজি হননি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৬
এসএমএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।