ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

গ্রাহকের পকেট কাটছে ইউনিলিভার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
গ্রাহকের পকেট কাটছে ইউনিলিভার

চট্টগ্রাম: দেশি বাজারে চা সংকটের আশঙ্কার কথা বলে প্যাকেটজাত ৪০০ গ্রাম তাজা চায়ের মূল্য ২০ টাকা বাড়িয়েছিল ইউনিলিভার বাংলাদেশ। তবে এখনো পর্যন্ত খোলা বাজারে চায়ের দাম বাড়েনি।

 

এই একটি পণ্যেই প্রতিদিন সাধারণ মানুষের শত কোটি টাকা নীরবে হাতিয়ে নিচ্ছে ইউনিলিভার। কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই কিছুদিন পর পর বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছে। এভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানিটি।

ভোক্তারা বলছেন, দাম বাড়ানোর আগে ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বাধ্যতামূলক। কিন্তু তাদের নজরদারি ও তদারকির অভাবে এ ধরনের অনিয়ম করে যাচ্ছে তারা।

ট্যারিফ কমিশনের অনুমতি না নিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকলে ইউনিলিভারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান মুশফেকা ইকফাত।

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও চেইন শপের ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, কেবল তাজা চা’ই নয়, গত ছয় মাসে অনেকগুলো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ।

বিক্রেতারা বলছেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় সময়ই দাম বাড়ানোর অভিযোগ পান তারা। কিন্তু সেসব অভিযোগ শুনতে চান না কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা। এমনকি কোনো পণ্য নষ্ট হলেও সেটা পরিবর্তন করে দেন না।

তাদের অভিমত, ইউনিলিভারের পণ্য ব্যবহারে ভোক্তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় এ ধরনের অন্যায় কাজ করে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতারা এক ধরনের জিম্মি হয়ে পড়েছেন তাদের কাছে।

নগরীর মুরাদপুর এলাকার ইউনুস স্টোরের ব্যবস্থাপক আলী আজম বাংলানিউজকে বলেন, ‘কিছুদিন পর পর বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় ইউনিলিভার বাংলাদেশ। ফলে ক্রেতাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। কারণ, তারা দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানে না। একটি ১২ টাকার সাবানে যদি হুট করে ৪ টাকা বাড়ানো হয়, গ্রাহক তো প্রশ্ন করবেনই’।

গ্রাহকরা তাদের পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় এ সুযোগ নিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে বিশ্বে ইউনিলিভারের সুনাম রয়েছে। বাংলাদেশের ক্রেতারাও তাদের পণ্য ব্যবহার করেন। কিন্তু এ দেশে পণ্যের মান তারা ঠিক রাখছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ জানালেও আমলেই নেন না’।

নগরীর কাজির দেউড়ি বাজারে কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদের সঙ্গে। ইউনিলিভারের পণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। অথচ সে হিসেবে পণ্যের গুণগত মান বাড়ছে না।

তিনি বলেন, ‘ এই সেদিন ১২ টাকা করে হুইল সাবান কিনেছি। এখন নাকি ১৬ টাকা। ১২ টাকার সাবানে ৪ টাকা কিভাবে বাড়ায়? অথচ আমরা দেখি, কোনো পণ্যে আট আনা বাড়লেও পাশের দেশ ভারতে মানুষ রাস্তায় নামেন’।

ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর আগে কমিশনকে জানাতে হয়। যাচাই-বাছাই শেষে কমিশন অনুমতি দিলে তারপর ওই পণ্যের দাম বাড়তে পারে। ট্যারিফ কমিশনকে না জানিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান যেন দাম বাড়াতে না পারে সেজন্য পণ্য বিপণন মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর জন্য ট্যারিফ কমিশনকেই দায়ী করেছেন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ট্যারিফ কমিশন ঘুমিয়ে থাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এতে প্রতি মাসেই ভোক্তাদের ব্যয় বাড়ছে। অথচ সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের আয় বাড়ছে না।

ইউনিলিভারের এ ধরনের দাম বাড়ানো বন্ধে ট্যারিফ কমিশনের তদারকি বাড়ানো জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।  

এভাবে দাম বাড়ানো সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুশফেকা ইকফাত। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি খবর নিচ্ছি। আমাদের না জানিয়ে দাম বাড়িয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
এমইউ/টিসি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।