ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নেপালে খুলছে বাণিজ্যের নতুন দ্বার

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
নেপালে খুলছে বাণিজ্যের নতুন দ্বার

ঢাকা: বাংলাদেশি পণ্য রফতানির নতুন হাব হতে যাচ্ছে নিকটতম প্রতিবেশী দেশ নেপাল। সার্ক ও বিমসটেকের সদস্য দেশটির সঙ্গে আগামী দুই বছরের মধ্যে রফতানি বাণিজ্য কয়েকগুন বাড়বে বলে মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

  যা রফতানি বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।  

 

মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, সার্ক, সাফটা, বিমসটেক, বিবিআইএন চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নেপালের সঙ্গে বাণিজ্যের এ নতুন দুয়ার খুলবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ।
 
মন্ত্রনালয় বলছে, বিবিআইএনের মাধ্যমে কেবল সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনই নয়, পানি ও বিদ্যুৎ খাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতেও রাজি হয়েছে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল। ফলে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ/জলবিদ্যুৎ, কানেকটিভিটি ও ট্রানজিট নিয়ে চার দেশের উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়বে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, বিদ্যুৎ বেচা-কেনা, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন ও বন্যা পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সবচেয়ে ভালো উদাহরণ নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে দেশগুলো।
এর মাধ্যমে এক দেশের ট্রাক পণ্য নিয়ে অন্য দেশে যাবে, আন্তঃদেশীয় রেল নেটওয়ার্কও সক্রিয় হবে।
 
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বিবিআইএন থেকে সুবিধা নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে এগিয়ে এসেছে বন্ধুপ্রতীম দেশটি। নেপালে যৌথভাবে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আনা হবে। নেপাল এ প্রস্তাবকে স্বাগতও জানিয়েছে।
 
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে নেপাল বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। কিন্তু নানা কারণেই দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়নি। বর্তমানে মাত্র ৪০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হচ্ছে। তবে দুই বছরের মধ্যে  তা আরো বাড়বে।
 
তিনি বলেন, খুলনা-মংলা রেললাইনের কাজ চলছে, ২০১৮ সালে তা শেষ হবে। এরপর থেকে নেপাল মংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। বিবিআইএন কার্যকর হলে দুই দেশের ট্রাক সরাসরি আসা-যাওয়া করতে পারবে। সাফটা চুক্তির আলোকে দুই দেশই শুল্ক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে রাজি হওয়ায় সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
 
তিনি বলেন, মংলা থেকে নেপাল পর্যন্ত সরাসরি রেলপথ চালু হলে দুই দেশের বাণিজ্য বহুগুন বাড়বে। বর্তমানে চাপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর- সিঙ্গাবাদ পথে ভারতের সঙ্গে মালবাহী ট্রেন যোগাযোগ চালু রয়েছে। এ রেলপথ বিবিআইএন চুক্তির আলোকে নেপালের কাকড়ভিটাকে মংলা বন্দরের সঙ্গে জুড়ে দেবে। যদিও ব্রিটিশ আমলের এ রেলপথ দিয়ে বিভিন্ন সময়ে নেপালে সারসহ কিছু পণ্য রফতানিও করা হয়েছে। এখন অপেক্ষা কেবল খুলনা-মংলা রেললাইনের কাজ শেষ হওয়ার।
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে নেপাল বাংলাদেশ থেকে পাট, ফার্মাসিটিক্যাল, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, ওভেন গার্মেন্টস, প্লাস্টিক পণ্য, নিটওয়্যার, রেডিমেড গার্মেন্টস, বেভারেজ, ঝুট, গেঞ্জির কাপড়, বেকারিপণ্য আমদানি করে। অন্যদিকে মসুর ডাল, ফল, শুকনো খাবার, পশুখাদ্য, দুগ্ধজাত খাবার, খণিজদ্রব্য, কেমিক্যাল ও শিল্পপণ্য রফতানি করে।
 
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘কেবল রেল নয়, সড়কপথেও বাংলাদেশ থেকে পণ্য যাবে নেপালে। আমাদের এমন কিছু পণ্য আছে, যেগুলো নেপালের জরুরি প্রয়োজন। এরই মধ্যে বুড়িমারি শুল্ক বন্দরের আধুনিকায়নের কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক উন্নয়নের কাজও শুরুর পথে। চারলেনের এ কাজ শেষ হলে সহজেই নেপালে যেতে পারবে বাংলাদেশি ট্রাক’।
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সবকিছু ঠিকমতো চললে দুই দেশই লাভবান হবে। বিশেষ করে কৃষি ও শিল্প বাণিজ্যের সুফল পাবে দেশ দু’টি।

 

ঢাকা সফররত নেপালের বাণিজ্যমন্ত্রী রোমি গাউচান থানকি রোববার (১৬ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি, আমাদের দেশে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা সহজেই ৮০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। যা পরে আরো কয়েকগুন বাড়ানো সম্ভব’।
 
রোমি গাউচান আরও বলেন, ‘বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার মূল কারণ ভারত। আমাদের দুই দেশের মধ্যে ভারতের ৪০ কিলোমিটার ভূমি রয়েছে। আমরা এখন ভারতকে সঙ্গে নিয়েই এ সংকট কাটাতে চাই। ভারতও তাতে একমত হয়েছে’।
 
তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের মধ্যে আমরা ডেভেলপিং কান্ট্রি হতে চাই। এজন্য বাংলাদেশের সাহায্য ও সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। নেপালে বাংলাদেশি বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বাংলাদেশকে আমরা আমাদের নিয়ারেস্ট নয়, ডিয়ারেস্ট বন্ধু হিসেবে দেখি। তাই ভারতের গোয়ায় চলমান বিমসটেক সম্মেলনে আমার থাকার কথা থাকলেও আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাকে ঢাকায় পাঠিয়েছেন’।
 
নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির জন্য নেপালি বাণিজ্যমন্ত্রী নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতের সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, এখানে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার, নেপালে শনিবার আবার ভারতে রোববার। ফলে এই তিনদিন শুল্ক বন্দর বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়েন। এ বিষয়ে বিকল্প কিছু চিন্তা করতে হবে। কেননা, সপ্তাহের তিনদিন বাণিজ্য বন্ধ থাকতে পারে না’।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
আরএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।