জনশক্তি রফতানি ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়লেও তুলনামূলক ভাবে নতুন কোনো মানি একচেঞ্জের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। যার কারণে রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা ছাড়াও উত্তরা-গুলশানে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অবৈধ মানি একচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান।
ব্যবসায়ীরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্য ব্যাংকের চেয়ে বাইরে বেশি পাওয়ায় গ্রাহকরা অবৈধ প্রতিষ্ঠানের দিকেই ঝুঁকেছেন। তাই অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে লেনদেন বেশি হয়।
১৯৯৮ সালের পর থেকে দেশে নতুন মানি একচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তেমনি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসা করায় নিবন্ধন বাতিলের ফলে ১৮ বছরে লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে চারশতাধিক প্রতিষ্ঠানের। বর্তমানে দেশে দুইশতাধিক প্রতিষ্ঠান মানি একচঞ্জের ব্যবসা করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব মানি একচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে কোনো গ্রাহকের অনুকুলে এক হাজারের বেশি ডলার বিনিময় করার সুযোগ নেই। আর এক হাজার ডলার লেনদেন করার জন্য গ্রাহকের পাসপোর্টসহ মানি একচেঞ্জ হাউজে যেতে হয়। এক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ গ্রাহক ডলার ক্রয়-বিক্রয় করতে পাসপোর্ট নিয়ে যান না। তাই লেনদেন চলছে হিসাবের বাইরে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ১৯৯৯ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬১ শতাংশ মানি এক্সচেঞ্জের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে বর্তমানে অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জের সংখ্যা ২৩৩টিতে এসে ঠেকেছে। সর্বশেষ বাতিল করা হয়েছে এজে মানি এক্সচেঞ্জের নিবন্ধন। বাতিল হওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই আবার হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠানগুলো লেনদেনের সঠিক হিসাব সংরক্ষণ করে না। যখন হিসাবের বিবরণ সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয় তখন তারা প্রতিদিনের লেনদেন হিসেব যৎসামান্য উল্লেখ করেন। কিন্তু পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে ড্রয়ার ভর্তি ডলার। অনুমোদন ছাড়াই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে শাখা স্থাপন করেছে।
এবিষয়ে মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মোস্তফা খান বলেন, ‘মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা প্রায় ধংসের মুখে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে একজন গ্রাহকের কাছে ভিসা ছাড়া মাত্র ২০০ ডলার বিনিময় করতে পারে। আর ভিসার বিপরীতে বিনিময় করা যায় সর্বোচ্চ এক হাজার ডলার। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অনেক সহযোগিতা চেয়েছি। তারা আমাদের অনুরোধ আমলেই নেন না। ’
মোস্তফা খান আরো বলেন, ‘কিছু মানি একচেঞ্জ অবৈধভাবে ব্যবসা করছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থাও নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনেক মানি এক্সচেঞ্জের মূল মালিক এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন না। নাম ভাঙিয়ে অন্য একটা গোষ্ঠী এসব প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগাচ্ছে।
তবে এখতিয়ার না থাকায় অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রশাসনের সহযোগিতায় দুই-একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে উচ্ছেদ করা গেলেও এখনো অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান বাজারে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
২০১৫ সালে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের সব হিসাব অনলাইনে করার নির্দেশনা দিয়েছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর আপত্তিতে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অর্থপাচার রোধে এসব প্রতিষ্ঠানকে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘আমরা সব মানি এক্সচেঞ্জকে একটা নির্দিষ্ট কাঠামোর ভেতর আনতে চেষ্টা করেছিলাম। যারা আসতে পারেনি ও নিয়ম লঙ্ঘন করেছে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও যারা নিয়মবহির্ভূত কাজ করবে তাদেরও এই শাস্তির আওতায় আনা হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৭
এসই/বিএস