শ্রমিকরা জানান, দেশের চামড়া শিল্পের ইতিহাসে দু’একটি কারখানা ছাড়া কোথাও কখনো শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। গত বছরের ১৯ জুন শ্রমিকপক্ষের সঙ্গে ট্যানারি মালিকরা চুক্তি করে নিয়োগপত্রের বদলে প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
যদিও শ্রম আইন অনুসারে তাদের প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে মালিকপক্ষ এ প্রত্যয়নপত্রের ফাঁদ পেতেছেন বলে অভিযোগ করে আসছেন শ্রমিকরা। তাদের দাবি, প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে ট্যানারি শ্রমিক হিসেবে গণ্য হলেও শ্রম আইনের কোনো সুবিধা পাবেন না তারা।
যে চুক্তি হোকই না কেন, নিয়োগপত্রের বিকল্প কখনোই প্রত্যয়নপত্র হতে পারে না। শ্রমিকদের ঠকাতে এটি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবী রিজওয়ানা হাসানও।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘শ্রমিক নিয়োগে নিয়োগপত্র যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য বাধ্যতামূলক। তার বিকল্প কখনোই প্রত্যয়নপত্র হতে পারে না। ট্যানারি মালিকরা এতোদিন শুধু যে পরিবেশ দূষণ করেছেন তাই নয়, তারা শ্রমিকদের ওপরও শোষণ করেছেন। কিন্তু নিয়োগপত্র না থাকায় কখনোই মুখ খুলতে পারেননি শ্রমিকরা’।
‘আমরা আগামী ঈদ-উল ফিতরের পরে আদালতে ট্যানারি শ্রমিকদের নিয়োগপত্রের ইস্যুটিও তুলবো’।
শ্রম আইন-২০০৬ এর ৫ ধারায় শ্রমিকদের জন্য নিয়োগপত্র প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান এর ব্যত্যয় করলে তা আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য বলে জানান শ্রম আইন বিশেষজ্ঞরা।
নিয়োগপত্র না থাকায় ট্যানারি শ্রমিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘নিয়োগপত্র না থাকায় ট্যানারি শ্রমিকরা কখনোই কোনো মর্যাদা পাননি। বঞ্চিত হয়েছেন ন্যায্য অধিকার থেকেও। এ নিয়ে মালিকদের সঙ্গে একাধিকবার আমরা আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ শ্রমিক হিসেবে তারা একটি প্রত্যয়নপত্র দিতে চাইলেও বেশিরভাগ মালিকই তাও দিচ্ছেন না। ফলে কোনো শ্রমিক নির্যাতিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন না শ্রমিকরা’।
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অভিযোগ, ট্যানারি মালিকরা নিয়োগপত্র দিলে শ্রমিকদের চিকিৎসা ভাতা, বাসস্থান ভাতা, বার্ষিক ছুটিসহ সব প্রাপ্য দিতে হবে। এসব কিছু এড়িয়ে যেতেই নিয়োগপত্র দেননি মালিকরা। এ বিষয়ে কখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি শ্রম অধিদফতরও।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন লেদার গুডস্ অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৭
ইউএম/এএসআর