আলোচনায় ওঠার পর আইনটি বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কোনো ফলাফল মেলেনি।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন, নতুন ভ্যাট আইনে ওষুধের ওপরও ভ্যাট বসবে। রোগী ও মরদেহবাহী অ্যাম্বুল্যান্সকে মানবিক কারণে চলতি বাজেটে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও নতুন আইনে সে ছাড় নেই। এছাড়া খাতা-কলম থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এটা ব্যবসায়ী-ভোক্তা সবার জন্য গলার কাঁটা হয়ে বিঁধবে।
নতুন ভ্যাট আইনের বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসায়ীরা এখন আর পুরোপুরি এনবিআরকে বিশ্বাস করতে পারছে না। হয়তো এনবিআরও ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করছে না বিধায় নিজেদের ইচ্ছা মতো সব করছে। ব্যবসায়ীরা নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে এনবিআরকে সেবাখাতের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পরিবর্তে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। কিন্তু এনবিআর ব্যবসায়ীদের সেই প্রস্তাবে সাড়া দিচ্ছে না। এটা পারস্পরিক অবিশ্বাসের জায়গা তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ ইকোনমিকস ফোরামের (বিইএফ) সহ-সভাপতি ও ব্রিটিশ আমেরিকা টোবাকোর চেয়ারম্যান গোলাম মাইনউদ্দীন বলেন, ব্যবসায়ীদের কথা মাথায় না রেখে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন কতোটুকু গ্রহণযোগ্য, সে নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা যৌক্তিক। ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিষয়টি অবশ্যই দুঃখজনক। বিশ্বের কোনো দেশে প্রথমেই ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের নজির নেই। আইনটি নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের অনেক আলোচনা হয়েছে, কিন্তু ফলপ্রসূ কিছুই হয়নি। এমনও হতে পারে এনবিআর ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনায় না রেখেই আইনটি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করছে।
এ বিষয়ে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বাংলানিউজকে বলেন, পণ্য ও সেবার বিক্রয়মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ সমস্যার সৃষ্টি করবে। এতে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যাবে। ফলে জনমনে অসন্তোষ তৈরি হবে। মায়ানমার, শ্রীলংকা, লাওস এমনকি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও রাজ্যভিত্তিক ভ্যাট ব্যবস্থা চালু আছে। বাংলাদেশকেও সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে মাল্টিপল ভ্যাট হার রাখা উচিত।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে সাতটি প্রস্তাব দেওয়া হলেও কার্যত কোনোটিকেই বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। নতুন ভ্যাট আইনের আওতায় আমদানি পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক উঠে গেলে দেশীয় শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আবার সম্পূরক শুল্ক উঠিয়ে দিয়ে শিল্পখাতকে কিভাবে সুরক্ষা দেওয়া হবে সে বিষয়েও কিছু বলা হচ্ছে না। তাই, নতুন ভ্যাট আইনে যে সমস্যা দৃশ্যমান, তা সমাধান করেই এনবিআরের সামনে এগোনো উচিত হবে।
আর নতুন আইন ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নতুন ভ্যাট আইন ব্যবসা, শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব। এখানে ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুবিধা থাকবে। ১৫ শতাংশ ভ্যাটের আইন আগে থেকেই ছিলো, কিন্তু বাস্তবায়ন ছিলো না। এটি এখন বাস্তবায়ন হবে। সরকারের উন্নয়নকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করতে এই ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, নতুন যেকোনো আইনে সমস্যা থাকবে, ভ্যাট আইনটিতেও যে সমস্যা নেই সেটি কিন্তু নয়। তবে প্রথম প্রথম সমস্যা হলেও পরবর্তীতে কোনো সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৭
এসজে/এইচএ/