ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ভ্যাটের মামলায় ঝুলে আছে হাজার কোটি টাকা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৭
ভ্যাটের মামলায় ঝুলে আছে হাজার কোটি টাকা

ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) ভ্যাট বিভাগের ৮০৪টি মামলায় ঝুলে আছে ৩৩ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। আর এসব মামলা বিচারাধীন থাকায় রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে পড়ছে এনবিআর।

বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) সূত্রে জানা যায়, আদালতে ভ্যাট ফাঁকির বিচারাধীন মামলাগুলোর মধ্যে আপীল ট্রাইব্যুনালে আছে ৩৯টি। এ মামলাগুলোর বিপরীতে আটকে আছে ৩ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা।

হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীনে আছে ৬৫৯টি মামলার বিপরীতে ১৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা। আপীল বিভাগে ১৩টি মামলার বিপরীতে আটকে আছে ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা ও অন্যান্য মামলার বিপরীতে প্রায় ১৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা অনাদায়ী আছে।
 
শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট বিভাগের মামলাগুলো ঝুলে আছে। এতে সরকারের রাজস্ব আহরণ তথা উন্নয়নে সমস্যা হচ্ছে। অপরদিকে অডিট কর্মকর্তারা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দাবিনামা জারি করলেই আদালতে রিট করা হচ্ছে। এতে করে দাবিনামার পুরো অর্থই বছরের পর বছর পড়ে থাকছে। কেননা আদালতে রিট করলে সেটা নিষ্পত্তি না হওয়া অবধি বিষয়টি ঝুলে থাকে। ফলে রাজস্ব আহরণে এনবিআরকে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে।
 
এলটিইউ সূত্রে আরো জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে গত ৯ মাসে বেশ কয়েকটি মামলার চূড়ান্ত রায় হয়েছে। এতে প্রায় ৯৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। অর্থবছরের বাদবাকি সময়ে আরো দেড় হাজার কোটি টাকা এ প্রক্রিয়ায় আদায় করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে এনবিআরের একটি পক্ষ বলছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দক্ষ জনবলের অভাব আছে। যার কারণে মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে আছে। এমনকি ভ্যাট বিভাগ থেকে দায়ের করা একটি মামলা ৫ বছরের বেশি সময় ধরেও চলছে। এজন্য আইন বোঝা ‍তথা মামলা পরিচালনায় দক্ষ জনবলের প্রয়োজন আছে। তথাপি এনবিআরকে আরো শক্তিশালী করতে ভ্যাট বিভাগে দক্ষ জনবল নিয়োগ করতে হবে। তবে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে রাজস্ব দাবি করা হলে মামলা করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাজস্ব আটকে রাখা হচ্ছে।
 
আর অতীতে আইনি প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত রায়ের বেশিরভাগই এসেছে এনবিআরের পক্ষে। এমনকি বৃহস্পতিবার ( ১১ মে) একটি মামলায় সফল হয়েছে এলটিইউ। এতে প্রায় ৮৪ কোটি টাকার মত অর্থ আদায় হবে।

তবে এনবিআর যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে ভ্যাট ফাঁকির দাবি করলে প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে এনবিআরের আপীল ট্রাইব্যুনালে বা উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করতে পারে। আর রিট দায়ের করার পর উচ্চ আদালত আবেদন খারিজ করে এনবিআরে পাঠাতে পারেন। সেক্ষেত্রে এনবিআরের আপীল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হয়। এজন্য দাবিকৃত অর্থের ১০ শতাংশ পরিশোধ করতে হয় প্রতিষ্ঠানকে। আপীল ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজনীয় শুনানি শেষে রায় দেন। এর পর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ফের উচ্চ আদালতে আপিল করে। এভাবে গড়িয়ে যায় বছরের পর বছর।
 
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ভ্যাট বিভাগের মামলাগুলো বিচারাধীন থাকায় সরকারের রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিলে তাদের বিরুদ্ধে ভ্যাট বিভাগ মামলা করে থাকে। এরপর মামলাগুলো বিচারাধীন থাকায় লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখন বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে করে পড়ে থাকা রাজস্ব আদায় হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, মে ১৮,২০১৭
এসজে/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।