অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে শাক-সবজি ও ফল রপ্তানি করা হতো। অতীতে এসব পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমদানিকারক দেশ থেকে পণ্যের মান সম্পর্কে তেমন প্রশ্ন উত্থাপন করা হতো না।
সম্প্রতি বাংলাদেশের মরিচ, ক্যাপসিকাম, আম, করলা, চিচিংগা, বরই ইউরোপে নিষিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কায় নিবারণমূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেশেই স্ব-নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও বাংলাদেশি শাক সবজির মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এজন্য বিদেশে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়ার পাশাপাশি ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও কিছু অসাধু রপ্তানিকারককে কোনোভাবেই ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। একদিকে রপ্তানি বাজার হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা ও রপ্তানির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমে প্রকৃত ও সৎ রপ্তানিকারকদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্ল্যান্ট হেলথ অডিট এর অভিযোগ হলো- বাংলাদেশি শাক সবজির মান নিয়ে উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তর এর ফাইটোস্যানিটারি সনদ থাকা সত্ত্বেও শাক-সবজির গুণগত ও রাসায়নিক মান ঠিক থাকছে না। ফাইটোস্যানিটারি সনদপত্রের আড়ালে সনদ বিহীন শাক-সবজি রপ্তানি হচ্ছে।
এ বিষয়ে এক শাক-সবজি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের এক কর্ণধার বাংলানিউজকে বলেন, সততার সঙ্গে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন রোগ বালাইযুক্ত সবজি রপ্তানি করায় সবজির বাজার ইউরোপে হুমকির মুখে পড়েছে।
দেশের রপ্তানি বাজার যেন হুমকির মুখে না পড়ে সেজন্য সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। যারা এমন জঘন্য কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কেননা একবার সবজি রপ্তানি বন্ধ হলে তা যেমন দেশের জন্য যেমন সম্মানহানিকর, তেমনি নতুন করে চালু করতেও সরকারকে বেশ বেগ পোহাতে হবে।
এ বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পণ্য উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক আব্দুর রউফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তরের (রপ্তানি) উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেন খান বাংলানিউজকে বলেন, জমিতে চাষাবাদের সময় থেকে শুরু করে সার, কীটনাশক, সেচ প্রভৃতি সব পর্যায়ে নির্ধারিত মান ও বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া মেনে চাষ করলে কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করা সম্ভব। অপরদিকে যে কোনো পণ্য রপ্তানির পূর্বে উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তর থেকে মান যাচাই সনদপত্র নিতে হয়। কিন্তু উদ্ভিদ সংগনিরোধদপ্তরের মান যাচাই প্রক্রিয়া আধুনিক নয়, তাদের রয়েছে প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদির ঘাটতি। ফলে সমস্যা থাকতেই পারে।
ঢাকা কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মো. আল আমিন বলেন, শাহজালাল দিয়ে প্রতিদিন শাক-সবজি ও ফলের গড়ে ৩০-৩৫টি চালান রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানির স্বার্থে মাত্র ১০ শতাংশ পরীক্ষা করার বিধান থাকলেও সম্প্রতি বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি চালান জব্দ করেছে কাস্টমস। যথাযথ নজরদারিও অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
জেডএম/