দাঁড়ানোমাত্র মাথায় সব্জির বোঝা নিয়ে ধাক্কা লাগাল একজন কুলি। গা বাঁচানোর উপায় নেই তার।
পায়ের নিচে থিকথিকে ঘিনঘিনে কাদা-পানি, বৃষ্টির ছাঁট, ভিড় আর কুলিদের ঠেলা সয়ে অনেকক্ষণ এসে দাঁড়ালেন সোলাইমানের সব্জির দোকানে। উদ্দেশ্য, ভালো দেখে একটা লাউ কিনবেন। পাইকারি বাজার বলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পয়সা বাঁচিয়ে শ্যামবাজার থেকেই সদাই করেন। থাকেন বাবুবাজারে। সেখানেই একটি দোকানে কাজ করেন আনিসুর রহমান।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দু’টো লাউয়ের দাম জানতে চাইলেন। বিক্রেতা সোলাইমান বললেন, একদাম ১২০ টাকা। দাম শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। জানালেন, ১০০ টাকায় হলে নিতে পারবেন। কিন্তু বিক্রেতা সোলাইমান অনড়। তার এখানে সবই ‘এককথা, এক দর’। অগ্যতা না কিনেই ফিরে যেতে হলো তাকে। ‘সাধের লাউ’ কেনা তার সাধ্যে কুলাল না। কারণ তিনি স্বল্প আয়ের মানুষ। কায়ক্লেশের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
বিক্রেতা সোলাইমান জানালেন, ময়মনসিংহ থেকে লাউ এনে প্রতিদিন শ্যামবাজারেই তিনি বিক্রি করেন তিনি। পাইকারী দর ৬০ টাকা। কোনো কোনো দিন কমও যায়। তবে তার ভাষায় এখন ‘আমদানি কম’(যোগান কম) বলে ৬০ টাকার কমে দিতে পারছেন না। খুচরা বাজারে এই লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।
আবুল হোসেন মুন্সিগঞ্জ থেকে লাউ এনেছেন ১’শটি। সকাল ৯টা নাগাদ বিক্রিও হয়েছে ৪০টির মতো। সাইজ অনুসারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দাম হাঁকছেন তিনি। তার দোকানে এসেও আনিসুর রহমানকে ফিরে যেতে হলো।
আনিসুরের মতো আরো বেশ কয়েকজন সাধারণ নিন্মবিত্ত শ্রেণীর ক্রেতাকে ফিরে যেতে দেখা গেল। এদের অনেককেই দেখা গেল লাউ কেনার পরিবর্তে কুমড়া কিনে নিলেন। কুমড়ার দাম কিছুটা কম। ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় রফা হচ্ছে।
রমজান আলী নামের এক ক্রেতা বললেন, সাধের লাউ কিনুম ক্যামতে! দাম তো ম্যালা বেশি। তাই কুমড়াই ভি কিনলাম।
সারাদেশে বৃষ্টির বাগড়ায় সব্জির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই পাইকারী বাজার ঘুরেও স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারছেন না নিন্মবিত্ত মানুষ। দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতির মূর্ত প্রতীক যেন কাঁচাবাজারও। ফলে লাউ, শিম, বেগুন থেকে শুরু করে সব সব্জির দামই চড়া। ব্যাপারিরা বলছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে দাম আরো বাড়বে।
আর বৃষ্টি-বাদলা এভাবে চলতে থাকলে সেটাই হবে। আর তাতে নিম্নবিত্ত, গরিব মানুষের জন্য তা হবে বড় দুশ্চিন্তা। তাদের বাজার খরচে টান পড়বে। একেই বলে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা!’
বাংলাদেশ সময়:১৩৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
ইইউডি/জেএম