ভাই ভাই স্টোরের মালিক আরিফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পাইকারিতে বাড়তি দাম। আমরি কী করবো! পাইকারী বাজারের লোকেরা বলে, বাজারে পেঁয়াজের সংকট।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে রসিকতা করে তিনি বলেন, যখন ২০-২২ ট্যাকা দেশি পেঁয়াজের দাম ছিলো তখন পাবলিক খাইতো না। দাম কমলে পাবলিক কয় আরও নাকি কমবো। দাম বাড়লে ব্যাকে(সকল ক্রেতা) বেশি খায়। এখন ৫০-৫৫ টাকা দরে পাবলিক(ক্রেতা) পেঁয়াজ কিইন্না লাগড় (নাগাল) পায় না। ’
খুচরা বিক্রেতারা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির দায় চাপাচ্ছেন পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীদের ওপর। কারওয়ানবাজারে খুচরা ও পাইকারি বাজারের অবস্থান প্রায় পাশাপাশি।
শুক্রবার(১১ আগস্ট)পাইকারী পেঁয়াজবিক্রেতা জহুরুল ইসলাম বলেন, প্রতি পাল্লা(৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ ২৭০ এবং ভারত থেকে আমদানি করা মোটা পেঁয়াজ ২৫৫ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৪ টাকা এবং ভারতীয় মোটা (নাসিক) পেঁয়াজ ৫১ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ’
অন্য এক বিক্রেতা বলেন, অহনে (এখন) পেঁয়াজের ‘শট খাইছে’ (সংকট দেখা দিয়েছে)। শটের কারণে পেঁয়াজের দাম বাইড়া গ্যাছে গা। ভারতেও বন্যা। দ্যাশেও বন্যা। যদি শট (সংকট) চলতে থাকে, তাইলে (তাহলে) পেঁয়াজের বাজার সামনে আরও বাইড়া যাইব গা (আগামীতে বাজার আরও চড়া হবে)।
আমদানি না থাকা এবং বৃষ্টি-বাদলা ও বন্যার কারণে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের যোগানের সংকট চলছে বলেই দাম বাড়তি দিকে। এমনটাই দাবি করলেন পাইকারি বিক্রেতারা।
জহুরুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বললেন, পেঁয়াজের আমদানি কম বলেই দাম বেশ চড়া। সব ধরনের পেঁয়াজেরই আমদানি কম হইছে এইবার। আমদানি একটু বেশি হইলেই পেঁয়াজের দম কইমা যাবে। ভারতের পেঁয়াজও দ্যাশে কম ঢুকছে(ঢুকেছে)। ভারতের পেঁয়াজ কম আসায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ পড়ছে (পড়েছে)। দামও তাই বাড়তি। এবার চাষিদের ফসলও নষ্ট হয়া গেছে। বন্যা ও শিল (শিলাবৃষ্টি) পইড়া পেঁয়াজ খেত নষ্ট হইছে। গুদামে আসার পরও পানি ঢুইকা বহুত পেঁয়াজ নষ্ট হইচে।
মাত্র এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি ১০ টাকার বেশি বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। শনিবার ৫ আগস্ট প্রতি পাল্লা(৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ ২২০ এবং ভারতীয় মোটা নাসিক পেঁয়াজ ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে পাইকারিতে প্রতিকেজি দেশি ৪৪ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
একই সময় শ্যামবাজারেও দেশি পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য কেজিতে ছিলো ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল তখন কেজিতে ৩৮ টাকা।
প্রতিবছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৭ থেকে ১৮ লাখ টন দেশেই উৎপাদিত হয়। বাকি পেঁয়াজ ভারত, মায়ানমার ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়। হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয়ও পড়েছে অস্বস্তিতে।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইং জানায়, বৃষ্টিতে পেঁয়াজের উৎপাদনে খুব একটা ক্ষতি হয়নি। উৎপাদনের থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে সংরক্ষণে। এবার দেশে দুই লাখ হেক্টর জমিতে ২০ থেকে ২১ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে।
পাবনা, ফরিদপুর, যশোর, রাজশাহী, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, কুমিল্লা, টাংগাইল, মুন্সিগঞ্জ ও নরসিংদীতে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ উত্পাদন হয়। কিন্তু পেঁয়াজের বীজ উত্পাদনে ফরিদপুরের নাম সবার আগে আসে। ফরিদপুরে অধিক পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপাদন করা হয়।
তবে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। তবে এরই মধ্যে প্রচুর আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে এলে দাম কমলেও কমতে পারে। বাংলাদেশ সময়:...ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
এমআইএস/জেএম