শনিবার (১১ নভেম্বর) অসহনীয় দ্রব্যমূল্যের জন্য নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বাংলানিউজকে কথাগুলো বলেন রিকশাচালক লাল মিয়া।
লাল মিয়া রাজধানীর আজিমপুর এলাকায় থাকেন পরিবার পরিজন নিয়ে।
দরিদ্র এই রিকশাচালকের পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৫ জন। প্রতিদিন বাজার খরচ ৪০০ টাকার কমে হয় না। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রিকশা চালিয়ে আয় করেন ৫০০ টাকা। ফলে ছেলেদের পড়াশোনার খরচ ও বাসা ভাড়ার টাকা যোগাতে গত একমাস ধরে শুধু ডাল-ভাত খেয়ে আছেন। বাজারে চাল থেকে শুরু করে সবজি, পেঁয়াজ কোনোটিই নেই তার হাতের নাগালে।
দ্রব্যমূল্যের এই পাগলাগতির কারণে শুধু লালা মিয়া নন, নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষদের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদার তালিকাটা দিনে দিনে ছোট হয়ে আসছে।
রাজধানীর পান্থপথের একটি চা স্টলে জনাকয় নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের লোক বসে চা পান করছেন। স্টলে ঢুকতেই তাদের মুখে শোনা গেল দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে হা-হুতাশ।
তাদের মধ্যে আরেকজন হচ্ছেন বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা জীবন।
সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর বাংলানিউজের এই প্রতিনিধিকে তিনি বললেন, চাল কিনলে থাকে না মাছ কেনার টাকা। মাছ কিনলে থাকে না সবজি কেনার টাকা। আর কোনোমতে এসব কষ্ট করে কিনলেও পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে ভড়কে যেতে হয়। অথচ পেঁয়াজ ছাড়া কি কোনো তরকারি রান্না করা যায়! পেঁয়াজ, চাল ও সবজির যোগান দিতে গিয়ে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা কিংবা বাসা ভাড়ার কথা চিন্তা করার কোনো সুযোগই পাচ্ছি না।
চা-পানরতদের একজন ইস্ত্রি দোকানি জিন্নাত। বাংলানিউজকে তিনি বললেন, যে টাকা আয় করি তা দিয়া ছেলেমেয়ের পড়াশুনা চালাই ক্যামনে, বাজায় সদাই করি ক্যামনে আর বাসাভাড়ার টাকাইবা জমাই কেমনে! প্রতিদিন বাজার করতেই তো লাগে ৩৫০ টাকার বেশি। ৪ জনের পরিবারের জন্য চাল, ডাল, তেল পেঁয়াজ কিনতেই তো হাতের টেকাটুকা সব শ্যাষ হয়া যায়! এরপর আবার মাছ বা সবজি কিনমু কি দিয়া?
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। এই অবস্থা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এইসব পণ্যের দাম যে আগের মতো হয়ে যাবে সেটি ভাবার বা আশা করারও কোনো কারণ নেই।
সর্বশেষ সবজির খুচরা বাজারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিকেজি ধনিয়াপাতা ১৮০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, শিম ১৪০, বরবটি ১০০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, গাজর ৭০ টাকা, প্রতি পিস বাঁধাকপি ৩৫ টাকা, প্রতি পিস ফুল কপি ৩৫ টাকা ও প্রতিকেজি আলু ২৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৫৫ টাকা ও আদা ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে চালের দামে লাগা আগুন এখনও নেভেনি। প্রতিকেজি নাজির শাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে। এছাড়া প্রতিকেজি মিনিকেট ৬০ টাকা, বিআর-২৮ কেজিপ্রতি ৫০-৫৫ টাকা আর স্বর্ণা ও পারিজা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা দরে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
এমএসি/জেএম