ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জমে উঠছে শীত-পোশাকের বাজার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৭
জমে উঠছে শীত-পোশাকের বাজার রাজধানীতে জমে উঠেছে শীত-পোশাকের কেনাবেচা। বঙ্গবাজারের একটি দোকানের দৃশ্য বাংলানিউজের ক্যামেরায়

ঢাকা: নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি শুরু পর্যন্ত সময়টাকে ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশে শীতকাল ধরা হয়। তবে বাংলা মাসের হিসেবে পৌষ ও মাঘ মাসই শীতকাল। শীত এর আগে-পরে থাকলেও এই দুই মাসেই তীব্রতা বেশি। তবে হাড়কাঁপানো শীত নামে মাঘমাস জুড়ে। এজন্য বলা হয়: মাঘের শীতে বাঘ পালায়। পৌষ আর মাঘ এই দুই মাসে তাই শীতের পোশাক কেনাবেচার ধুম লাগে।

এবারও ব্যতিক্রম নয়। তীব্র শীত এখনো অনুভূত না হলেও শীত যে পড়তে শুরু করেছে তার চাক্ষুষ প্রমাণ মিললো রাজধানীর বঙ্গবাজারের শীত পোশাকের দোকানগুলোতে গিয়ে।

ক্রেতাদের আনাগোনাও বেশ শুরু হয়ে গেছে। আসছেন দূর দূরান্ত থেকে পাইকাররাও। সারাদেশ থেকে শীতের জ্যাকেট, সোয়েটার, জাম্পার, মাফলার, কম্বলসহ নানা রকমের শীত-পোশাক কিনতে পাইকাররা আসেন বঙ্গবাজারে।

ওদিকে নিউমার্কেট, পলওয়েল মার্কেট, ঢাকা কলেজের উল্টোদিকের ফুটপাত, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল শাপলা চত্বর, বায়তুল মোকাররমের আশেপাশের সব ফুটপাতই এখন শীত পোশাকের দখলে।

বঙ্গবাজারের এনেক্স ভবনের নীচ তলায় সারি সারি কম্বলের দোকান। সেখানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানা রকমের বাহারি কম্বল। দেশি বিদেশি, বেশিদামি–কমদামি।

রাশেদ বেডিং স্টোরে দেশি-বিদেশি নানা রকমের কম্বল সাজানো। দোকানে বসে আছেন মালিকের ভাই জয়। জিগ্যেস করলাম কেমন বেচাকেনা। জবাবে বললেন, এখনো শীতের প্রকোপ বেশি নয়। তবে আমাদের বেচাকেনা ভাল। এ বছর রোহিঙ্গাদের জন্য প্রচুর কম্বল বিক্রি হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গাদের দান করার জন্য লট-এ কম্বল নিয়ে যাচ্ছেন। একারণে কম্বলের বাজার ভাল। সব দোকানেই বেচাকেনা মোটামুটি ভাল।  

কম্বলের দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে দেশি কম্বল ১০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। আর চীনা-কোরিয়ান কম্বল বিক্রি হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত।

বঙ্গবাজারের ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল শত শত দোকানে থরে থরে সাজানো শীতের হরেক পোশাক। ক্রেতার সংখ্যাও কম না। তবে বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বললেন, ভরা মৌসুম এলে বাজারের ভেতরে হাঁটঁই কষ্টকর হবে। ক্রেতারা কেবল আসতে শুরু করেছে। শীত বাড়লে আসবে আরো বেশি সংখ্যায়।  

জ্যাকেট-সোয়েটারের পাইকারি দোকান রুমি-সুমি গার্মেন্ট’র মালিক মোজাম্মেল হকের ভাই আলমগীর। তিনি বললেন, আমরা সারা বছর পাইকারি বিক্রি করি। দু/একজন খুচরা ক্রেতা এলে ফিরিয়ে দিই না। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে বেশিই বেচাকেনা হয়। এ বছর এখনো শৈত্যপ্রবাহ আসেনি। শুনলাম এ সপ্তাহের শেষের দিকে শৈত্যপ্রবাহ আসবে। তখন বেচাকেনা অনেক বেশি হবে।

জাহাঙ্গীর অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক আব্দুর রহমান বলেন, ৫/৬ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। আমাদের দোকানে পাইকারি বিক্রি বেশি হয়। সারাদেশের দোকান-মালিকরা এখান থেকে মাল নিয়ে যায়। শীতের তিন মাস বেশি চলে বলেই এখন দোকান ভর্তি মাল। আগামী সপ্তাহ থেকে বেচাকেনা বেড়ে যাবে। দুদিনের বৃষ্টিতে শীত পড়া শুরু করেছে। ক্রেতাদেরও আসা শুরু হয়েছে।

মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় বেশিরভাগ দোকান পাইকারি বিক্রি করে। নিচতলায় খুচরা দোকান নাসরিন গার্মেন্টের মালিকের ভাই শামসুল আলম ও কর্মচারী রফিক। বললেন এখনো জমে ওঠেনি। তবে মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। দু/চার দিনের মধ্যে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে।

ওই দোকানের ক্রেতা ফরহাদ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, শীত এসে গেছে। শীতের পোশাক তো কিনতেই হবে। আমি এসেছি নিজের জন্য ও পরিবারের সবার জন্য শীতের পোশাক কিনতে। এখনো কেনা হয়নি।  

পাশের দোকানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেনাকাটা করছিলেন কয়েকজন ক্রেতা। জানতে চাইলে বললেন, ডিসেম্বর মাস চলছে। এখনই শীতের পোশাক কেনার সময়। এ মাসের শেষ দিকে ও  পুরো জানুয়ারি মাস শীত থাকবে। তাই সবার জন্য শীতের পোশাক কিনতে এসেছি।

বঙ্গবাজারের নীচতলা ও দোতলা মিলিয়ে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার দোকান। এর অর্ধেকেরও বেশি দোকানে এখন শোভা পাচ্ছে শীতের পোশাক। ছেলে মেয়েদের জ্যাকেট, ফুলহাতা গেঞ্জি, ব্লেজার, লেদার জ্যাকেট, হাফ সোয়েটার দিয়ে সাজানো রয়েছে দোকানগুলো। এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে বিভিন্ন আইটেমের সোয়েটার ও জ্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে। এই মার্কেটের ক্রেতা মূলত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ।

নিউমার্কেট ও ঢাকা কলেজ এলাকার ফুটপাতগুলোতেও শীতের পোশাকের আধিক্য দেখা গেল। সব দোকানেই এখন অন্যসব পোশাকের সঙ্গে রয়েছে শীতের পোশাক। এছাড়া গুলিস্তান, পল্টন, বায়তুল মোকাররমের আশে পাশের ফুটপাথগুলোতে বিক্রি হচ্ছে শীতের পোশাক। ঢাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে সঙ্গে এসব দোকান থেকে শীতের পোশাক কিনতে এসেছেন ঢাকার বাইরের ক্রেতারাও।

পল্টন মোড়ে শরিয়তপুরের রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, পদ্মার ওপারেই শরীয়তপুর। ঢাকা আসতে বেশি সময় লাগে না। তাছাড়া নিজের কাজ থাকায় ঢাকায় এসেছিলেন, ফুটপাতে কম দামে শীতের ভাল কাপড় পাওয়া যায়। তাই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৭
এমএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।