ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সমন্বিত খামারে প্রতি মাসে লাখ টাকা আয়

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
সমন্বিত খামারে প্রতি মাসে লাখ টাকা আয় লেয়ার মুরগির শেড থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন জাকারিয়া হাসান

ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী বক্তারমুন্সী মির্জাপুর এলাকার যুবক জাকারিয়া হাসান। উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ শেষ করে পড়ালেখায় নিয়মিত হতে পারেন নি। জীবিকার তাগিদে এলাকার অন্য যুবকরা বিদেশে পাড়ি দিলেও জাকারিয়া হাসান তা করেননি, খোঁজেননি কোনো চাকরিও। নিজেই কিছু করার আত্মবিশ্বাসে কাজ শুরু করেন বাবা আমিরুল ইসলামের পোল্ট্রি খামারে।

সেই থেকে আর থামতে হয়নি কর্মোদ্যমী এ যুবককে। বাড়ির পাশের প্রায় ১০ একর জমিতে গড়ে ওঠা সমন্বিত খামার থেকে প্রতি মাসে আয় করেন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।

পাঁচ বছর খামারে কাজ করে জাকারিয়া বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন কয়েকগুণ। সম্প্রতি তার খামারে গিয়ে দেখা যায় সমন্বিত খামারায়নের এ চিত্র।

জাকারিয়া হাসান জানান, ১৯৮৬ সালে তার বাবা আমিরুল ইসলাম মাত্র দু’শ’ ব্রয়লার মুরগী নিয়ে খামার শুরু করেন। সময়ের ব্যবধানে ১০ একর জমির উপর খামারের বর্তমান বিনিয়োগ প্রায় ২ কোটি টাকা।  

খামারে মোট ৭ হাজার মুরগি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে এ যুবক বলেন, বর্তমানে চার হাজার লেয়ার মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন ডিম আসে ৩৮০০টির মতো। শুধু ডিম বিক্রি করেই দিনে আয় ১৯ হাজার টাকা, যা মাস শেষে গিয়ে ঠেকে প্রায় ৬ লাখ টাকায়। সব খরচ বাদ দিলে ডিম বিক্রি থেকেই মাসে আয় হয় ২ লাখ টাকার মতো।  

এতো গেলো লেয়ার মুরগি লালন-পালন করে আয়ের হিসেব। মুরগির শেডগুলোর পাশের জায়গায় পুকুরে তেলাপিয়া, রুই, কাতল, মৃগেল, শিং মাছ চাষ করে প্রতি বছর জাকারিয়ার আয় হয় তিন লাখ টাকার উপরে।  

জাকারিয়া জানান, মুরগি, মাছের পাশাপাশি রয়েছে গবাদি পশু। দু’টি অস্ট্রেলিয়ান হলেস্টিন জাতের গরু থেকে ২০ লিটারের মতো দুধ পাওয়া যায়। প্রতিদিন ১ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে এ খাত থেকে আসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। আর এককালীন প্রতিটি গরু বিক্রি করা যাবে দুই লাখ টাকার উপরে।

সবজি খেতে সমন্বিত খামারি জাকারিয়া  

জাকারিয়া হাসানের খামারে পাওয়া যায় একটি আদর্শ খামারের চিত্র। তার খামারে মুরগি ও গবাদি পশুর বিষ্টা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে বায়োগ্যাস। এ গ্যাস দিয়ে চলে ৬টি চুলা। প্রতি মাসে এ খাত থেকে আসে আরো ৯ হাজার টাকা। এছাড়া খামারের খালি যে জায়গায় আবাদ করা হয়েছে বিভিন্ন জাতের শাক-সবজি, এসব সবজি চাষ করেও বার্তি আয় করছেন তারা।  

জাকারিয়া হাসান জানান, যদি সমন্বিতভাবে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে খামার পরিচালনা করা যায়, তাহলে অনেক কিছুই করা যায়। আমাদের এলাকার যুবকরা পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে দৌড়ান, অথবা লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পাড়ি জমান। এসব না করে যদি খামারের দিকে আগ্রহী হওয়া যায় তাহলে সাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

নতুন খামারিদের ব্যাপারে স্বাবলম্বী এ যুবক বলেন, খামার করতে হলে বুঝতে হবে, শিখতে হবে। কারণ এখানে মুরগি, গবাদি পশুর খাবারের বিষয়গুলো অভিজ্ঞতা ছাড়া সম্ভব নয়।  

খাতটি সম্ভাবনার জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের স্থানীয় সরকার, উপজেলা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না থাকায় যুবকরা এগিয়ে আসতে পারছেন না। এছাড়া পাওয়া যায়না কোনো ধরনের ঋণ সুবিধা। এসব বিষয়ে সহযোগিতা করা হলে দেশের যুবকরা আর বেকার রইবেনা, খামার করেই হবে স্বাবলম্বী।  

‘বর্তমানে পোল্টি ব্যবসায় খামারিদের টিকে থাকা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দেশের বাইরে থেকে ডিম আমদানির কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন দেশীয় খামারিরা। খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। সরকারের উচিৎ এ বিষয়টির উপর খেয়াল রাখা। কারণ এখানে সম্পৃক্ত রয়েছে দেশের হাজার হাজার মানুষ। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
এসএইচডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।