ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ভরা মৌসুমেও মাল নাই’ 

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৮
‘ভরা মৌসুমেও মাল নাই’  রাজধানীর বাজারে যেটুকু সবজি পাওয়া যাচ্ছে দামের কারণে তাতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস-ছবি- সুমন শেখ

ঢাকা: ‘ভরা মৌসুমেও মাল নাই। এ সময়ে আলুর কেজি ১৫ টাকা হওয়ার কথা, কিন্তু এখন আলু ২৫ টাকা বেচতে হইতাছে। মোকামে গিয়া এখন সবজিই পাওয়া যায় না’।

শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজারে বিক্রেতা মো. মানিক সবজির বাজার দরের তাণ্ডব নিয়ে বাংলানিউজের কাছে এভাবেই আক্ষেপ ঝাড়েন।

শুধু মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজারের সবজির খুচরা বিক্রেতা মানিকই নন, রাজধানীর বেশ কয়েকটি সবজির বাজারের খুচরা বিক্রেতার একই প্রশ্ন, শীতের সবজি গেলো কোথায়?

রাজধানীর বিভিন্ন সবজি বাজারের খুচরা বিক্রেতারা অভিযোগ করে বলছেন, অন্যান্য বছর শীতের সময় সবজির আমদানি এতো হতো যে শেষ পর্যন্ত বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিতে হতো।

কিন্তু এবার শীতের সবজি গেলো কোথায়। মোকামে গিয়ে সবজিই পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে দিগুণ দাম দিয়ে সবজি কিনতে হচ্ছে পাইকারি বাজারে। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।  

এদিকে রাজধানীর সবজির খুচরা বাজারগুলোতে দামের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। আর ক্রেতাদের মন্তব্য কোনো বাজারের সবজির দামই স্থিতিশীল নয়।  

রাজধানীর বেশ কয়েকটি সবজি বাজারের সর্বশেষ খুচরা বিক্রিমূল্য অনুযায়ী, প্রতিকেজি বেগুন ৫০-৬০ টাকা, টমেটো ৪০-৫০ টাকা, আলু ১৬-২৬ টাকা, সিম ৩০-৫০ টাকা, পেঁপে ১৫-২০ টাকা, মুলা ১৫-২০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০-৮০ টাকা, ধনিয়াপাতা ৬০-৮০ টাকা, গাজর ৩০-৪০ টাকা, শালগম ২৫-৩০ টাকা, পেঁয়াজ পাতা ১০ টাকা (আঁটি), চিচিঙ্গা ৪৫-৫০ টাকা, বাঁধাকপি পিস ২০-৩০ টাকা, ফুলকপি ২০-৩০ টাকা, প্রতি আঁটি কমলি শাক ৫-১০ টাকা, লাল শাক, পালং শাক ও ডাটা শাক দুই আঁটি ১৫-২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর ধানমন্ডি কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা মিজান বাংলানিউজকে বলেন, মোকামে গিয়ে সবজি চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছি না। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন- কুয়াশায় সবজি নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া শীতে পরিবহন সংকটেও দামের প্রভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, আসলে তাদের কথা সত্যি না মিথ্যা কে জানে। আমরা সরাসরি তাদের কাছে বেশি টাকা দিয়ে সবজি কিনছি, তাই বাজার চড়া।  অনেকে মনে করতে পারেন বেশি দামে বিক্রি করে আমরা বেশি লাভ করছি। কিন্তু এটা সত্য নয়, বরং আমরা আরও লোকসানে আছি।

সবজির এমন লাগামহীন বাজার দরের কারণে ক্রেতাদের মধ্যে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে। তারা অভিযোগ করে বলছেন, শীতে সবজি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে বলে মানুষ সবজি বেশি খায়। এর ফলে মাছ-মাংসের ওপর চাপ কমে, সঙ্গে দামও। কিন্তু এবার পরিস্থিতি উল্টো। বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন সবজির দাম বেশি।  

মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী মো. কাইসার বাংলানিউজকে বলেন, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে সবজির বাজার স্থিতিশীল থাকে সব থেকে বেশি। কিন্তু এবার কেন এমন হচ্ছে। অন্যবার শীতে তো সবজি এতো নষ্ট বা কুয়াশায় এতো পরিবহন সংকট হয়নি।

ধানমন্ডি ১৫ নম্বর কাঁচা বাজারে বাজার করতে আসা সরকারি চাকরিজীবী মো. পারভেজ আলম বাংলানিউজকে বলেন, পণ্যের দাম বাড়িয়ে সবজি বিক্রেতারাও অনৈতিকভাবে মুনাফা করছেন। কেননা কোনোভাবেই শীত মৌসুমে সবজির দাম এতো হওয়ার কথা না।

তবে সবজির পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিছুটা আশার বাণী শোনাচ্ছেন ক্রেতাদের। তাদের ভাষ্যমতে, আগামী সপ্তাহ থেকে দাম কিছুটা স্বস্তি দেবে। যদিও তাদের এমন বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারছেন না ক্রেতা ও সবজির খুচরা বিক্রেতারা।

এছাড়া বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়টি নিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, এই দাম সঠিক কি-না এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের মনিটরিং তারা দেখছেন না। ফলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রেতারা সবজির দাম বাড়াতে পারেন বলেও ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৮
এমএসি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।