ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রবির নাকে খত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৮
রবির নাকে খত মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, রবির লোগো ও মতিউল ইসলাম নওশাদ

ঢাকা: নাকে খত দিয়ে অপরাধ স্বীকার করলো মোবাইল ফোন অপারেটর রবি। শেষতক ফাঁকি দেওয়া করের টাকা পরিশোধে বাধ্য হচ্ছে অপারেটরটি। প্রায় ১৯ কোটি টাকা কর ফাঁকির বিষয়টি অস্বীকার করে হাইকোর্টে রিট করেও ঘায়েল হলো সেবার ক্ষেত্রে ‘সেরা’ দাবি করা এ প্রতিষ্ঠান। বিশ্লেষক ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির সিইও, করপোরেট অফিসারসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের কোনোরকম সহযোগিতা ছাড়া এই ফাঁকি সম্ভব নয়। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। মূল হোতা তারাই।

কর ফাঁকির অভিযোগে রবির ব্যাংক হিসাব জব্দ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে রিট করলেও পাওনা অর্থ ফেরত দিতে নির্দেশ দেন আদালত।

আইনি লড়াইয়ে হেরে নাকে খত দিয়ে সমঝোতায় এলে হিসাব খুলে দিতে বলে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)।  

রবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) এবং চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার ও চিফ করপোরেট অ্যান্ড পিপলস অফিসার মতিউল ইসলাম নওশাদসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। এতো মোটা অংকের টাকা সরকারের কোষাগারে না দিয়ে ফাঁকি দেওয়া তাদের অজ্ঞাতসারে করবে না বাংলাদেশে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া মাল্টিন্যাশনাল এ মোবাইল অপারেটরটি। প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থদের বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা প্রসূত পরিকল্পনায় এ ‘পুকুর চুরি’। মূল হোতা তারাই। ফাঁকিতে অবশ্যই রয়েছে তাদের সহযোগিতা। তাই ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে’র মতো বেকায়দায় পড়ে পাওনা অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

রবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরারবির ব্যবস্থাপনা কমিটির হেড অব এক্সারসাইজ বিজনেস মো. আদিল হোসেন, হেড অব রেগুলারেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম, হেড অব আইটি আসিফ নাইমুর রশিদ, হেড অব করপোরেট স্ট্রাটেজি রুহুল আমিন প্রমুখ কর্মকর্তাকে বড় আকারের কর ফাঁকির এ ঘটনার বাইরে রাখতে চান না বিশ্লেষকরা। কারণ কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন খাত থেকে। যেখানে জড়িত অনেক কর্মকর্তা। তাই হোতা হিসেবে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক।

এলটিইউ’র কর কমিশনার মতিউর রহমান এ ঘটনার পর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রবির কাছে এর বাইরেও যে সব টাকা বাকি রয়েছে সেগুলো আদায়ে জোর পদক্ষেপ নেবে এনবিআর।

রবির প্রতারণার বিষয়টি এখন স্পষ্ট সর্বসাধারণের কাছেও। নেটওয়ার্ক নিয়েও গ্রাহকের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে অপারেটরটির বিরুদ্ধে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক তাদের। সম্প্রতি অন্য অপারেটরগুলো ফোর-জি চালু করলেও রবি ঘোষণা দেয় তারা ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি সেবা দিচ্ছে। আর এটি যে কত বড় প্রতারণা এবং গ্রাহক ঠকানো প্রচারণা তা চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, মিরসরাইসহ বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে।  

এসব এলাকা থেকে একাধিক গ্রাহক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বাংলানিউজের কাছে সরাসরি অভিযোগ এনেছেন। তাদের বক্তব্য, সরকারের কর ফাঁকির মতো আরও অনেকভাবে প্রতারণা করছে রবি। দেশজুড়ে ফোর পয়েন্ট ফাইভ-জি সেবার কথা বললেও আদতে মিলছে না থ্রি-জি সেবাও।  

কোথাও কোথাও আবার নেটওয়ার্ক একেবারেই মিলছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এসব গ্রাহক বাধ্য হয়ে রবি ছেড়ে অন্য অপারেটরে ঝুঁকছে। ঢাকাসহ অন্য অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতেও ঠিকমতো মিলছে রবির নেটওয়ার্ক সেবা।  

১৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার ৩২ টাকা নির্ধারিত সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এনবিআর এক চিঠিতে সব ব্যাংকে রবির অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে চিঠি পাঠায়।  

পরে ব্যাংক হিসাব সচল রাখতে এনবিআরের সঙ্গে সমঝোতায় আসে রবি। পাওনাগুলো পরিশোধের অঙ্গীকারে ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে বলেছে এনবিআর।

আর কর কমিশনার মতিউর রহমান জানিয়ে দিয়েছেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বকেয়া অর্থ না দিলে আবারো শক্ত অবস্থান নেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।