ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লোকসানের ঝুঁকিতে হাটে বড় গরুর সংখ্যা কম

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৮
লোকসানের ঝুঁকিতে হাটে বড় গরুর সংখ্যা কম গাবতলী পশুর হাটে আনা একটি গরু

গাবতলী পশুর হাট ঘুরে: পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের আর বাকি পাঁচদিন। নগরীর একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে কোরবানির পশু আসা শুরু করেছে। হাতে সময় কম। অনেকের মধ্যে শুরু হয়েছে গরু-ছাগল কেনার প্রস্তুতি।

ব্যাপারীরা জানান, মূলত বুধবার ভোর থেকেই ট্রাকে ট্রাকে গরু আসছে গাবতলীতে। শুক্রবার থেকে হাট জমে উঠবে ধারণা করা গেলেও এখনও সেভাবে হাট জমেনি।

গাবতলী পশুর হাটের প্রবেশপথেই একপাশে বাঁশ আর ত্রিপল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আচ্ছাদন। মূলত কোরবানি উপলক্ষে বড় গরু রাখার জন্য এই অংশ বরাদ্দ। কিন্তু বড় গরু রাখার ডোবাগুলো এখনও শূন্য। অথচ অন্যান্যবার এখানে খামারিদের বড় গরুতে পরিপূর্ণ হয়ে যেতো।

ব্যাপারীরা জানান, বিগত বছরগুলোতে গাবতলী পশুর হাটে ছোট ও মাঝারি গরুর ব্যাপারীরা লাভবান হলেও লোকসান গুণতে হয়েছে বড় গরুর ব্যাপারীদের। এজন্য গাবতলী পশুর হাটে এবার বড় গরুর সরবরাহ কম।

নাটোর গুরুদাশপুরের আমজাদ হোসেন ব্যাপারী ১২ বছর ধরে বড় গরুর ব্যবসা করেন। প্রতি বছর কোরবানি উপলক্ষে ১৫-২০টি গরু গাবতলী হাটে তোলেন তিনি। গত বছর সাত লাখ টাকা লোকসান হয়েছে তার। তাই এ বছর মাত্র পাঁচটা বড় গরু হাটে তুলেছেন। এসব গরুর দাম গড়ে ৭ থেকে ১২ লাখ টাকা হাঁকছেন আমজাদ। লোকসানের হাত থেকে বাঁচতেই মাত্র পাঁচটি গরু হাটে তুলেছেন তিনি।
গাবতলী পশুর হাটে বড় গরু রাখার জায়গাগুলো ফাঁকা হয়ে আছেবড় গরুর ব্যাপারী আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, “ইবার হাটে বড় গরুর সংখ্যা কম। খাদ্যসহ সব কিছুর দাম বেশি। এক সময় মনে করেন যে, ২০টা কইরে গরু পাললাম এখন পাঁচটায় আইচি। লসখাতি খাতি মনে করেন যে, পাঁচটার পরে আইচি!”

কোরবানির সামনে বেড়েছে গো-খাদ্যের চাহিদাও। ফলে আগের তুলনায় দামও বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চালের কুড়া, ভূষি, খুদ ও ভুট্টা জাতীয় গো-খাদ্যের পণ্য। এছাড়া আছে কাঁচা ঘাস ও খড়।

ব্যাপারীরা জানান, বর্তমানে বাজারে গমের ভূষি ১ হাজার ৪০০ টাকা প্রতি বস্তা (৫০ কেজি)। দুই মাস আগে ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা। একইভাবে ডাল-ভূষির (মুগ) দাম আগে ছিল ১ হাজার ৬০০ টাকা, এখন ১ হাজার ৮০০ টাকা। মসুরির ভূষি এক হাজারে বিক্রি হতো, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকা।

তারা জানান, গমের ভূষি বর্তমানে ৪০ টাকা, যা আগে ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। খৈল ৫০ টাকা কেজি। বিচালি (খড়) ২০ টাকা ছোট আটি। গো-খাদ্যের সব পণ্যের দাম বাড়তি। গড়ে একটা বড় গরুর জন্য দৈনিক ৬ থেকে ৮শ’ টাকা খরচ। বেশি টাকা খরচ করে গরু পালন করে ঝুঁকিতে পড়তে চান না খামারিরা।

ঝিনাইদহের শিমুল এবার একটা বড় গরু হাটে তুলেছেন। গরুর দাম হাঁকছেন ২০ লাখ টাকা। বড় গরুর সঙ্গে একটা খাসিও ফ্রি দিচ্ছেন তিনি। বাংলানিউজকে শিমুল বলেন, “গরুর খাবারের দাম মানুষের খাবারের মতোই দামি। বড় গরু পালাও কঠিন। একবার কোনো ব্যাপারী লোকসান খাইলে এটা কাটিয়ে উঠতে মেলা সময় লাগে। তাই হাটে বড় গরু কম। ”

বড় গরুর দীর্ঘপথ ভ্রমণ করলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রচণ্ড গরমে হাটে তোলাও একটা সমস্যা। তাই অনেকে খামার থেকে অনলাইনের মাধ্যমে বড় গরু বিক্রি করছেন। তাই হাটে বড় গরু নিয়ে ঝামেলায় পড়তে চান না খামারিরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৮
এমআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।