ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে বেশি দামে চামড়া কিনছেন ব্যবসায়ীরাও!

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৮
ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে বেশি দামে চামড়া কিনছেন ব্যবসায়ীরাও! চমড়া সংগ্রহ চলছে-ছবি-বাংলানিউজ

রাজশাহী: ক্ষতির আশঙ্কা মাথায় রেখেই এবার সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে চামড়া কিনছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। দিনব্যাপী ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে তারাও এ পথে পা বাড়িয়েছেন! ফলে এবার চামড়া নিয়ে লাভের চেয়ে লোকসানের পাল্লাই ভারী হবে বলে দুর্ভাবনা ভর করেছে ব্যবসায়ীদের মনে। 

এ বছর সরকার ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ফুট প্রতি ৪৫ থেকে ৫০, ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০, খাসি ১৮ থেকে ২০ এবং বকরির চামড়ার দাম ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু বর্গফুট নয় আকারের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত দামের চেয়ে গড়ে চামড়া প্রতি ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা বেশি দিয়ে বুধবার (২২ আগস্ট) দিনব্যাপী পাড়া-মহল্লা ঘুরে চামড়া কিনেছেন ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা।

 

মহানগরীর শিরোইল কলোনি এলাকার ফড়িয়া চামড়া ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ বাংলানিউজকে জানান, পাড়া-মহল্লা থেকে গড়ে দুই হাজার থেকে ২৩শ' টাকা দামে কাঁচা চামড়া কিনেছেন। তাদের কাছে বর্গফুটের কোনো হিসাব নেই। এখন পর্যন্ত চামড়া জড়ো করছে তার লোকজন।  

রাতে না পারলেও বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট) সকালে এগুলো আড়তে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপরই বোঝা যাবে লাভ হচ্ছে না ক্ষতি। তবে আড়তদাররাও এবার তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চামড়া কিনেছেন বলে জানান। আর তারাও বেশি দামে পাড়া-মহল্লায় চামড়া কিনেছেন। ফলে লাভ হলে উভয়েরই হবে, না হলে ক্ষতি। দু’পক্ষেরই ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ।  

রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বাংলানিউজকে জানান, অদৃশ্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাড়া-মহাল্লা থেকে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা ঈদের প্রথম দিনে প্রায় ৮০ ভাগ চামড়াই কিনে নিয়েছেন। কিন্তু ওই চামড়ার একটি বড় অংশ এখনও তাদের হাতে রয়েছে। বেশি দাম চাওয়ায় লোকসানের ভয়ে তাদের কাছ থেকে চামড়া কিনছে না আড়তগুলো। ফলে তারা চামড়া নিয়ে এখনই বেকায়দায় পড়েছেন।  

এছাড়া তাদের ঠেকাতে গিয়ে আকারের ওপর ভিত্তি করে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা বেশিতে চামড়া কিনেছেন। এক্ষেত্রে ছোট চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা দরে। মাঝারি চামড়া ৬শ’ থেকে এক হাজার টাকা এবং বড় আকারের চামড়া ব্যবসায়ীরা কিনছেন সর্বোচ্চ এক হাজার থেকে এক হাজার ৩শ’ টাকা দরে। বৃহস্পতিবারও অনেক এলাকায় পশু কোরবানি হবে। ফলে এবার তারাও দুর্ভাবনায় পড়েছেন বলে জানান জেলা চামড়া ব্যবসায়ীদের এই নেতা 

রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রৌফ বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত প্রতি বছর ঈদে ৮০ থেকে ৯০ হাজার গরু-মহিষ ও প্রায় দেড় লাখ খাসি-ভেড়া কোরবানি হয় জেলায়। বিপুল পরিমাণ এই চামড়া তারা কিনে লবণ দিয়ে কয়েকদিন সংরক্ষণের পর নাটোরের আড়তগুলোতে নিয়ে যান। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা সেখান থেকে চামড়া কিনে নিয়ে যান।  

একটি বড় গরুর চামড়া স্বাভাবিকভাবে ২৮ ফুট হয়। সরকারি হিসাবে সেই চামড়ার দাম আসে এক হাজার ১২০ টাকা। এখন তারা বা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা যে যত বেশি দামেই চামড়া কিনুক এর চেয়ে বেশি দামে তাদের কাছ থেকে চামড়া কেনা কোনো ব্যবসায়ীর পক্ষে সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া কিনেছেন। কিন্তু তাদের হাতে চামড়া গেলে অনেক সময় কোনো খোঁজ থাকে না। অনেকেই আছেন যারা ক্ষতি সামলিয়ে চামড়া বিক্রি করবেন না। ফলে দাম না পেলে শেষ পর্যন্ত তারা সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচারের চেষ্টা করবেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

এদিকে, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৪৫-৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা।  

এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম সারাদেশে ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। আর বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। যা গত বছর ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা। তবে মহিষের চামড়ার দামের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। ফলে চামড়া নিয়ে বড় ধরনের লোকসান ও পাচারের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে রাজশাহীতে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৮
এসএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।