ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রাজারহাট চামড়ার মোকামে জমজমাট বেচাকেনা!

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৮
রাজারহাট চামড়ার মোকামে জমজমাট বেচাকেনা! রাজারহাটে মোকামে চামড়া দেখছেন এক ব্যবসায়ী। ছবি: বাংলানিউজ

যশোর: চামড়া কেনাবেচার বড় মৌসুম ঈদুল আজহা। প্রতিবছরই এ চামড়া কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে ওঠে দেশের বৃহত্তর চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটের ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (২৫ আগস্ট) ঈদের পর প্রথম চামড়ার এ হাটে জমজমাট বেচাকেনা হয়েছে।

সারাদেশে ট্যানারি মালিকদের কারসাজিতে চামড়ার দামে ধস নামলেও পূর্ব নির্ধারিত দামেই চামড়া বেচাকেনা হয়েছে রাজারহাটে।

দেশের বিভিন্ন এলাকার বড় বড় আড়ৎ থেকে পাইকাররা এ মোকামে চামড়া কিনতে আসায় চাহিদা ভালো ছিল, কিন্তু সেই তুলনায় চামড়া আসেনি মোকামে।  

খুচরা চামড়া বিক্রেতারা বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের পর রাজারহাটে এই প্রথম ট্যানারি এবং রাজধানীর পোস্তা এলাকা থেকে আসা পাইকারদের তুলনায় বেশি দামেই চামড়া কিনেছেন স্থানীয় আড়তগুলো। যদিও পাইকাররা দাবি করছেন, স্থানীয়রা না বুঝে চড়া দামে চামড়া কিনছেন এতে পরে ঠকবেন তারা।

বিক্রেতারা জানান, ভালো মানের গরুর চামড়া ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে ফুট বেচাকেনা হয়েছে। সে হিসেবে প্রতি পিস গরুর চামড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর প্রতি পিস ছাগলের চামড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।  

রাজরহাটের আড়ৎ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতবছরের মতো এবারও নানা অজুহাতে ঢাকার ট্যানারি মালিক ও মহাজনরা চামড়া কিনতে অগ্রিম টাকা দেওয়া তো দুরের কথা, রাজারহাট মোকামের ব্যবসায়ীদের বকেয়া ২০কোটি টাকাও পরিশোধ করেনি। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পুঁজি সংকটের কারণে চামড়ার বাজারে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। পুঁজি সংকটের কারণেই মৌসুমী ব্যবসায়ীদের টাকা দিতে না পারায় ঈদের দিন প্রান্তিক পর্যায়ে পানির দরে চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে চামড়া শিল্প হুমকির মুখে পড়বে বলেও মতামত সংশ্লিষ্টদের।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজারহাট চামড়া মোকামে গোটা খুলনা বিভাগের ১০টি জেলা ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ পশুর চামড়া এ হাটেই বেচাকেনা হয়। এই মোকামে শতাধিক স্থায়ী চামড়ার আড়ৎ, কয়েকশত ব্যাপারি ছাড়াও চামড়া ব্যবসার সঙ্গে খুলনা বিভাগের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিবছর ঈদুল আজহার পরে হাটগুলোতে কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়। শনিবার প্রথম এ হাটে অন্তত ৩৫ হাজার গরু এবং পাঁচ হাজার ছাগলের চামড়া মিলিয়ে চার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়েছে।  

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর, খুলনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর এলাকার খুচরা ব্যবসায়ীরা রাজারহাটের এ মোকামে চামড়া বিক্রি করেন। এসব খুচরা বিক্রেতাদের কেন্দ্র করে রাজারহাটে অর্ধশত স্থায়ী আড়ৎ ও দুই শতাধিক ব্যাপারি রয়েছে। এছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, নাটোর, পাবনা ও ঈশ্বরদী এলাকা থেকে অন্তত ৩০-৪০জন পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি প্রতিনিধিরা রাজারহাটে আসেন।  

রাজারহাটের চামড়া ব্যবসায়ী খায়রুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রথম হাটে তুলনামূলক কম চামড়া এসেছে, তাই কেউ কম দামে চামড়া বিক্রি করতে চাইনি। এজন্য যেসব পাইকারের চামড়া দরকার তারা একটু বেশি দাম দিয়েই চামড়া কিনেছেন।  

তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যবসায়ী চামড়া কিনতে ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে কখনোই অগ্রিম টাকা পায় না, এবারও পায়নি। বরং অধিকাংশ ব্যবসায়ী তাদের পাওনা টাকার ২০ শতাংশ অর্থাৎ এক লাখ ২০ হাজার করে বকেয়া টাকা পেয়েছে। এ সামান্য টাকা দিয়ে তারা চামড়া কিনতে পারছেন না, সেই সুযোগে তুলনামূলক কম দামে ট্যানারি মালিকরাই অন্য লোকমারফত চামড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা থাকলে আরও বেশি দামে চামড়া বেচাকেনা হতো।  

রাজারহাট চামড়া মোকামের ইজারাদার শেখ হাসানুজ্জামান হাসু বাংলানিউজকে বলেন, হিসাব না করে বেচাকেনার পরিসংখ্যান দেওয়া সম্ভব না, তবে প্রথম হাটেই অন্তত তিন  থেকে চার কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। কেউ চামড়া মোকামে এনে ফেরত যাননি। আরও বেশি চামড়া মোকামে আনলেও বিক্রি হতো (যোগ করেন তিনি)।

তিনি আরও বলেন, চামড়া পাচার ঠেকাতে এবং নির্বিগ্নে লেনদেনের জন্য মোকামে পুলিশ ক্যাম্প বসেছে। এছাড়াও ভারতীয় সীমান্তের দিকে যাতে চামড়ার গাড়ি না যায় সেদিকে নজর রেখেছে প্রশাসন।  

বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘টাকার জন্য মূলত চামড়া কিনতে পারছি না, তবুও আমরা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ন্যায্য দামেই চামড়া কিনেছেন, এখন লাভ-লোকসান ট্যানারি মালিকদের হাতে। আগামী মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) আবারও হাট জমবে বলে আশা করছি, ওই হাটে আরও বেশি সংখ্যক বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা আসবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৮
ইউজি/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।