ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ইতালিতে জনতা একচেঞ্জ কোম্পানি বন্ধের নির্দেশ

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৮
ইতালিতে জনতা একচেঞ্জ কোম্পানি বন্ধের নির্দেশ

ঢাকা: ধারাবাহিকভাবে ৮ বছর ধরে লোকসান গোনায় ইতালিতে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান জনতা একচেঞ্জ কোম্পানি এসআরএল’র কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জনতা ব্যাংকের পক্ষ থেকে সর্বশেষ তিন বছরে (২০১৫-২০১৭) লোকসান হওয়া প্রায় ১২ লাখ ইউরো পুনঃভরনের আবেদন করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতালিতে কার্যরত কোম্পানির দুটি শাখার মধ্যে বেশি লোকসানি শাখাটি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।

ইতালিতে কর্মরত বাংলাদেশিদের অর্থ দেশে আনার জন্য ২০০২ সালে রোম ও মিলানে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কোম্পানি ‘জনতা একচেঞ্জ কোম্পানি এসআরএল’ নামে দুটি শাখা খুলে কার্যক্রম শুরু করে জনতা ব্যাংক।

কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত লাভজনক অবস্থায় থাকলেও ২০০৯ সাল থেকে লোকসান শুরু হয়। কর্মচারীদের আয়কর বৃদ্ধি, সীমিত নেটওয়ার্ক, নতুন অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইনের প্রবর্তন এবং পেমেন্ট ইনস্টিটিউশন হিসেবে লাইসেন্স প্রবর্তন করা রেগুলেটরি ও কমপ্লায়েন্স সংক্রান্ত ব্যয় বাড়ায় ২০১৪ সাল পর্যন্ত লোকসান হয় ১২ লাখ ৭১ হাজার ২৭০ ইউরো।  
ওই সময়ে জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনযুয়ায়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সমপরিমাণ অর্থ পুনঃভরনের আবেদন করে জনতা ব্যাংক; তাতে অনুমোদনও দেওয়া হয়।  

জনতা ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ধারাবাহিকভাবে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়া ও প্রশাসনিক ব্যয় বাড়ার কারণে ২০১৫ সালে ৩ লাখ ২০ হাজার ৭৪৭ ইউরো, ২০১৬ সালে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৮ ইউরো এবং ২০১৭ সালে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৬২১ ইউরো লোকসান হয়েছে।

লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্য সমপরিমাণ অর্থ পুনঃভরনের জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৫২২তম সভায় উপস্থাপন করা হলে তাতে অনুমোদন দেওয়া হয়।  

পরবর্তীতে জনতা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ এ অর্থ ছাড় করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে অনুমোদন চান।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চেয়ে চিঠি দেয়। পরে এ বিষয় বিবেচনা করে সর্বশেষ তিন বছরে লোকসান হওয়া অর্থছাড়ের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইতালির মতো দেশে জনতা একচেঞ্জ কোম্পানি এসআরএলকে লাভজনকভাবে পরিচালনা করার সক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন ব্যয় কমানোর কোনো বিকল্প নেই।

তাই প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যমান রোম ও মিলান শাখার মধ্যে যে শাখাটির পরিচালন ব্যয় কম সেটি চালু রেখে অপর শাখাটির কার্যক্রম বন্ধের জন্য জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠিতে।  

এদিকে জনতা ব্যাংক বলছে, ইতালির আইন অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠানের এক তৃতীয়াংশের বেশি মূলধন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য দেউলিয়া ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়। সেক্ষেত্রে মূলধন ঘাটতি পূরণ না করলে জনতা একচেঞ্জ কোম্পানি এসআরএল দেউলিয়া কোম্পানির তালিকায় পড়বে।

এ অবস্থায় লাভজনক করতে দুই বছরের একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে জনতা একচেঞ্জ কোম্পানি এসআরএল। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ৫টি এজেন্টের মাধ্যমে এবং ২০১৯ সালে ৩৫ এজেন্টের মাধ্যমে রেমিটেন্স সংগ্রহ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

দেশব্যাপী ৯১২টি শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনাকারী জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ চলতি বছরের মার্চ শেষে ৯ হাজার ৭০২ কোটি টাকা।  

আমানতের পরিমাণ ৬৪ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা আর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৪৫ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ৩ হাজার কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৮
এসই/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।