ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মাছের আঁশ ছাড়ানোয় ভাগ্য বদল

ইয়াসির আরাফাত রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৮
মাছের আঁশ ছাড়ানোয় ভাগ্য বদল মাছের আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত তারা, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: এক সময় সংসারে অভাব যেনো নিত্য সঙ্গী ছিল নরসিংদীর ইয়াসমিনের। তিন ছেলেমেয়ের খরচ জোগাতে ঋণে জড়িয়েছিলেন তারা স্বামী-স্ত্রী। পরে সংসারে সুখের আশায় চলে আসেন রাজধানীতে। স্বামী মকবুল হোসেন রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেন। তাতে কোনোদিন কাজ থাকে আবার থাকে না। ঢাকাতেও যেনো আলো খুঁজে পাচ্ছিলেন না ইয়াসমিন।

একপর্যায়ে নিজ উদ্যোগে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছের আঁশ ছাড়ানোর কাজ শুরু করেন তিনি। দিন শেষে চার থেকে পাঁচশ’ টাকা আসে তার।

সংসারে আলো দেখা পেতে থাকে। শেষে স্বামী ওমর ফারুক তার মিস্ত্রীর কাজ ছেড়ে দিয়ে তাকে সহযোগিতায় নেমে পড়েন।

ভালোই চলে তাদের সংসার। লেখাপড়া করছে তিন ছেলে-মেয়ে। গ্রামে জমি কিনেছেন স্বামী-স্ত্রী। নিজেরা আর ঋণগ্রস্ত না, কিছু টাকাও সঞ্চয় হয়েছে।

কিভাবে এ পেশায় এসে ভাগ্য বদল করলেন তার বর্ণনা এভাবেই বাংলানিউজকে দিলেন ইয়াসমিন।

তিনি বলেন, নরসিংদীর লায়বুড়া থেকে যখন ঢাকায় আসি, তখন কিছুই ছিল না। আমার স্বামী কাজে বের হলে ভাবতাম কিছু খাবার আসবে। কিন্তু দিন শেষে যখন এসে বলতো আজ কাজ পাইনি, বাজারও আনতে পারিনি। তখন সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে কান্না বের হয়ে আসতো।

মাছের আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত তারা, ছবি: বাংলানিউজ‘এভাবে বেশ কিছুদিন পার হলো। একদিন আমার স্বামী খালি হাতে বাসায় এসে ঘুমায়। আমি বুঝতে পারি সে আজ কাজ পায়নি। পরে আমি নিজ উদ্যোগে একটি বঁটি নিয়ে বের হয়ে যাই কারওয়ান বাজারের মাছ বাজারে। তারপর অন্যের কেনা মাছের আঁশ ছাড়িয়ে প্রথম দিনেই আমার আসে ২০০ টাকা। সে টাকা দিয়ে বাজার শেষ করে বাসায় এসে ছেলে-মেয়েকে রান্না করে খাওয়াই। এরপর থেকে এটা পেশা হিসেবেই নেই। এখন আমার স্বামী আর মিস্ত্রীর কাজ করে না। সে আমাকে সহযোগিতা করে। দিন শেষে দু’জন মিলে ৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় করি। কোনো কোনো দিন আরও বেশি আসে। ’

ইয়াসমিনের মতো স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে কাজ করছে নোয়াখালীর আবদুল মালেক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মকবুল হোসেন, আয়ুবসহ প্রায় ৪০টি পরিবার। তারা প্রত্যেকে এখন ভালো অবস্থানে আছে। তাদের সন্তানরা পড়ালেখা করছে।

নোয়াখালীর আবদুল মালেক বাংলানিউজকে বলেন, আগে আমি রিকশা চালাতাম। সেখান থেকে যে টাকা আসতো তা দিয়ে শুধু সংসার চলতো, সঞ্চয় হতো না। গত এক বছর ধরে আমি মাছ কাটা ও মাছের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করি। এখন আমার দুই ছেলে পড়ালেখা করে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। সংসার, সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালানোর পরও মাস শেষে আট থেকে ১০ হাজার টাকা জমা থাকে। সংসারে অশান্তি নেই। অভাব না থাকলে অশান্তি আসে না।

মাছের আঁশ ছাড়াতে এসেছেন ইকরাম হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি মাসেই কারওয়ান বাজার থেকে বেশি করে মাছ কেনা হয়। এসব মাছের আঁশ ছাড়িয়ে বাসায় নেই। এতে বাড়তি ঝামেলা থাকে না। রান্নার জন্য সহজ। তাছাড়া দাম রাখে কম। তাই এখান থেকেই আঁশ 
ফেলে নিয়ে যাই।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবনের সামনে ও রেল লাইনের ওপরে বসে মাছের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করেন তারা। মাছের ওজনভেদে খরচেও ভিন্নতা আছে।  

বড় মাছের আঁশ ছাড়ানো ও কাটার জন্য গুনতে হবে কেজিপ্রতি ১০ টাকা, শিং মাছ ২৫ টাকা, কৈ মাছ ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও ইলিশ হালি প্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৮
ইএআর/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।