২০ বছর আগে ১৯৯৭ সালে ছোট আকারে এলপি গ্যাস আমদানির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে বিকল্প এই জ্বালানি পৌঁছে দেয় সরকার। এছাড়া ২০১০ সালের দিকে অভ্যন্তরীণভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ করে দিলে এর চাহিদা অনেক বেড়ে যায়।
তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার এই সুযোগে গড়ে উঠে কিছু অবৈধ গ্যাস বোতল বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান। সংখ্যায় ও পরিমাণে কম হলেও তারা গ্যাস আমদানি না করেও কৌশলে নামি-দামি প্রতিষ্ঠানের বোতল সংগ্রহ করে অবৈধভাবে গ্যাস রিফিলিং এবং তা বাজারজাত করতে থাকে। কিন্তু নিম্নমানের বোতল আর কম ওজন দেওয়ায় টনক নড়ে সরকারের। সম্প্রতি বাসা-বাড়িতে অনিরাপদ ও নিম্নমানের বোতল সরবরাহের ফলে গ্যাস বিস্ফোরণ নিয়মিত বাড়তে থাকে। বিষয়টি সরকারের নজরে এলে সতর্ক করে চিঠি দেয় প্রকৃত গ্যাস আমদানিকারকদের। কিন্তু বাজারে সুনাম হারায় প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। সরকারের এই নির্দেশনার পর আমদানিকারকরা সর্তক হলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির জন্য ওই অসাধু চক্র মরিয়া হয়ে ওঠে।
উদ্যোক্তারা জানান, দেশের নামি-দামি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সাধারণ জনগণের জ্বালানি চাহিদা নিশ্চিত করা হলেও কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী আমদানি না করে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে গ্যাস রিফিল করে বাজারজাত করছে। এর ফলে ভোক্তারা দাম এবং ওজনে যেমন ঠকছে, একইসঙ্গে অনিরাপদ গ্যাস বোতল ব্যবহারের ফলে বাসা-বাড়িতে গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটনা গঠছে। ফলে অনিরাপদ হয়ে পড়ছে বিকল্প জ্বালানি এলপিজি।
এ বিষয়ে লাফ্স গ্যাস বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাঈদুল ইসলাম বলেন, ভোক্তাদের নিরাপদ জ্বালানি নিশ্চিত করাসহ ন্যায্য দামে গ্যাস সরবরাহের জন্য সম্প্রতি জ্বালানি মন্ত্রণালয় প্রকৃত আমদানিকারকদের নির্দেশ দেয়। এর ফলে তারা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু এতে বেকায়দায় পড়ে একদল অবৈধ সুবিধাভোগী বাজারে সংকটের গুজব ছড়াচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আমদানিকারকদের কাছ থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে ৪-৫টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪-৫ হাজার টন গ্যাস বোতলজাত করে বাজারে বিক্রি করতো। এসব বোতল যেমন নিম্নমানের, একইসঙ্গে ওজনে কম। ১২ কেজি একটি বোতলে ১০ কেজি দেওয়া হতো। এছাড়া নামি প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে কম দামে তারা বিক্রি করতো। যেসব এলাকায় তারা গ্যাস সরবরাহ করতো, ওইসব এলাকায় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢুকতেই দিতো না। ফলে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাছে দাম, মান এবং সুনামের দিক থেকে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছিল।
অসাধু এসব প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ বন্ধ হলে বাজারে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে কি-না জানতে চাইলে মোহাম্মদ সাঈদুল ইসলাম বলেন, বাজারে গ্যাসের কোনো সংকট নেই। বরং চাহিদার চেয়ে বাজারে সরবরাহ বেশি। এতোটা সক্ষমতা আছে যে, চোরাই বাজারের ওই পরিমাণ গ্যাস একটি প্রতিষ্ঠানই নিশ্চিত করতে পারে। তাছাড়া মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগও ভিত্তিহীন।
এ বিষয়ে বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও সম্প্রসারণ) প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া জালাল জানান, দেশের নামি প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন অবৈধ গ্যাস সরবরাহকারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছিল। বোটলিং প্রতিষ্ঠানগুলো ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সুনাম প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ভোক্তাদের ঠকিয়ে নিজেরা ফুলে-ফেপে বড় হলেও অনিরাপদ করে তুলছে এলপি গ্যাস শিল্প। ফলে অনেক বাসা-বাড়ি গ্যাস বিস্ফোরণের শিকার হচ্ছে।
তাই নিরাপদ জ্বালানি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি অবৈধ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনারও পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৮
এইচএ/