রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত বাজেট সংলাপে রুমিন ফারহানা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, একটি বাজেট সরকারের চরিত্রকে খুব স্পষ্ট করে দেয়।
রুমিন ফারহানা বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দরিদ্র কমার হার ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১০ সালের পর দরিদ্র কমার হার কমে হয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে সবচেয়ে কম উপার্জনকারী ৫ শতাংশ মানুষের আয় তিনভাগের এক ভাগে চলে এসেছে। ২০১০ সালে সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশ মানুষ জাতীয় আয়ে দশমিক ৭৪ শতাংশ অবদান রাখলেও তা ২০১৬ সালে দশমিক ২৩ শতাংশে নেমে এসেছে। এই যে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে, সেটা কমানোর বিষয়ে বাজেটে কিছুই বলা নেই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সময় পার করছে। এই সময়ে দেশে বেকারের সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লাখ (বিবিএস প্রতিবেদন)। অথচ এই বাজেট বলছে ২০৩০ সালের মধ্যে তারা ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করবে। ২০১৯ সাল চলছে। এখনই বেকারের সংখ্যা ৪ কোটি। সেখানে ২০৩০ সালে চাকরির সংখ্যা ৩ কোটি বাড়ানো হলে কি লাভটা হবে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির বিষয়ে তিনি বলেন, বাজেটে ঘাটতি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণের কথা বলা হয়েছে। বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। দেশের ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া হবে ৪৭ হাজার কোটি টাকা। এই বিরাট একটি অংক ৪৭ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে। ব্যাংকগুলোর অবস্থা কি? এই পরিমাণ ঋণ ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া হলে বিনিয়োগের অবস্থা কি দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, গত এক বছর ধরে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। আটকে আছে ২১ থেকে ২২ শতাংশের মধ্যে। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই। এই বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষাখাতে যে ব্যয় ধরা হয়েছে, তা আগের মতই। এসব খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর যে প্রত্যাশা ছিল তা হয়নি।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেওয়া হয় স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে। বাংলাদেশ যে আর্ন্তজাতিক সনদগুলোতে সই করেছে এবং স্বীকৃতি দিয়েছে সেই অনুযায়ী অন্তত জিডিপির ৬ শতাংশ বা বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়ার কথা। সেটা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। দেশের ৬৬ লাখ মানুষ স্বাস্থ্য সমস্যা মেটাতে গিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। এই বিষয়গুলো বাজেটে অ্যাড্রেস করা হয়নি।
খেলাপি ঋণ একটি মহামারী আকার ধারণ করেছে। এটি নিয়ে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা দেখছি। খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। অবলোপন ধরলে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, লুকিয়ে রাখা নানা রকম ঋণ আমরা ধরলে খেলাপি ঋণ দাঁড়াবে ৩ লাখ কোটি টাকার উপরে। সংখ্যাটি অ্যালার্মিং, কোনো সন্দেহ নেই।
ভারতের জিডিপি ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল। একই কথা সিপিডিও বলেছে। জিডিপির আসল অবস্থা তুলে ধরতে সিপিডির প্রতি আহ্বান জানান রুমিন ফারহানা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৯
এসই/জেডএস