ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রপ্তানি বেড়েছে চামড়াজাত পণ্যের, কমেছে চামড়ার

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
রপ্তানি বেড়েছে চামড়াজাত পণ্যের, কমেছে চামড়ার

ঢাকা: আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়াজাত পণ্যের বিক্রি ও চাহিদা কমে গেছে অজুহাতে দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা কোরবানির মৌসুম এলেই আহাজারি শুরু করেন। অথচ, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা দেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধির প্রায় দ্বিগুণ। এ প্রবৃদ্ধির বড় অংশই এসেছে শুধু চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে। 

চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বাড়লেও কমেছে চামড়া রপ্তানি। জুলাই মাসে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৬১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

বিপরীতে চামড়া রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।  

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, বিদায়ী (২০১৮-১৯) অর্থবছরে চামড়া রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের (জুলাই) তুলনায় কমলেও বেড়েই চলেছে আমদানি নির্ভর (চামড়া) চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয়। জুলাই মাসে ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে। অর্থাৎ, বাংলাদেশ থেকে চামড়ার বেল্ট, ব্যাগসহ অন্য পণ্য রপ্তানির পরিমাণ গত বছরের জুলাই মাসে ১০০ টাকা হলে এবার হয়েছে ১৬১ টাকা। আর, চামড়ার তৈরি জুতা রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ শতাংশের বেশি। এ বছর দাম না থাকায় নষ্ট হয়েছে অনেক চামড়া।  ফাইল ছবিবাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) জুলাই মাসে দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে আয় হয়েছে ১০ কোটি ৬১ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৭ কোটি ২৩ লাখ ডলারের চামড়ার জুতা, ২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের চামড়াপণ্য ও ৯০ লাখ ডলারের চামড়া রপ্তানি হয়েছে। সব মিলিয়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা জুলাই মাসের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৫ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।

পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা যায়, জুলাইয়ে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।

জানা গেছে, বাংলাদেশে এখন প্রায় ১৫০ কোটি ডলার চামড়াপণ্যের বাজার রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চামড়া দিয়ে তৈরি জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগ, মানিব্যাগ, বেল্ট, জ্যাকেট ইত্যাদি। কোম্পানি ভেদে পণ্যের মূল্যে রকমফের থাকলেও, তাদের কারো পণ্যেই কাঁচামালের দরপতনের প্রভাব দেখা যায়নি।  

কাঁচামালের মূল্য কমলে এসব পণ্যের খুচরা বিক্রয়মূল্যও কমার কথা। তা না হওয়ায় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রিতে একটি চক্র আছে। ট্যানারির মালিকরা দাম কম দিলে অন্যরাও কম দিতে বাধ্য হয়। তবে, ট্যানারি মালিকরা বিশ্ববাজারে ভালো দামে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের বাণিজ্য করলেও আড়তদার, চামড়া সংগ্রহকারীদের সে সুযোগ থাকে না। এছাড়া, কাঁচামালের সঙ্গে তৈরি পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবসময়ই পার্থক্য থাকবে। কিন্তু, সেটা যৌক্তিক হচ্ছে কি-না, বাংলাদেশে সে ধরনের নজরদারি নেই। এজন্য চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে হলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। চামড়ার দাম নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশের ফিনিশড লেদার ও লেদার সামগ্রী প্রস্ততকারক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলন, আমাদের দেশের বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) ঠিকভাবে না থাকায় ব্যবসায়ীরা বিদেশি বড় কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। এজন্য অনেক ক্রেতা এ দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ট্যানারি মালিকদের। কমে গেছে চামড়া রপ্তানি।  ফাইল ফটোআন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা কমলে দামও কমে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশেও চামড়াজাত পণ্যের দাম কমার কথা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাঁচামালের সঙ্গে তৈরি হওয়া পণ্যের দাম মেলানো যাবে না। চামড়ার মতো কাঁচামাল অনেক হাত ঘুরে আমাদের কাছে আসে। এখন যে চামড়া আপনি তিনশ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলছেন, আমাদের কাছে তখন সেটার দর অনেক বেড়ে যায়। কারণ, সেটাকে প্রক্রিয়াজাত করার খরচ, কারখানার খরচ, শ্রমিক খরচ যোগ হবে। এরপর সে চামড়াটা আরেকজন কিনে নিয়ে দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার মতো জুতা, স্যান্ডেল বা ব্যাগ তৈরি করবে। তার কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ড এসব পণ্য কিনে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করে। কারণ, আন্তর্জাতিকভাবেই মনে করা হয়, কয়েকগুণ বেশি দাম না ধরা হলে তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাংলাদেশের বাজারে একবার কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে আর কমে না। যখন কোনো পণ্যের দাম নির্ধারিত হয়, তখন শুধু কাঁচামাল নয়, অনেক বিষয় বিবেচনা করেই সেটির দাম নির্ধারিত হয়। যেমন- কারখানার ভাড়া, বিদ্যুৎ, পানি, শ্রমিক বেতন ইত্যাদি। কাঁচামালের দাম কমলেও সেগুলো তো কমেনি। আর, এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের ভোক্তাদের অধিকার না থাকার কারণে। ফলে, পণ্যের উৎপাদকরা যে দাম নির্ধারণ করেন, সেটাই গ্রহণ করতে হয়। তাদের উৎপাদন খরচ কমলো কি-না, সেটা আর যাচাই করা হয় না। সেটা শুধুমাত্র চামড়াজাত পণ্যই নয়, অন্য পণ্যের ক্ষেত্রেও ঘটছে। এজন্য ভোক্তারা তাদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হলে আর ভোক্তা অধিকার আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমেই এ পার্থক্য কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

ইপিবির তথ্যমতে, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয় ১১৩ কোটি ডলার। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১১৬ কোটি ডলারে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এ আয়ের পরিমাণ আরও বেড়ে হয় ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। কিন্তু, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে রপ্তানি আয় অস্বাভাবিক কমে ১০৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। ওই অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১২ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে ৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে চামড়া খাত থেকে ৮৩ কোটি ৭১ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যদিও এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ ও আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ আয় কমেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘন্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯ 
জিসিজি/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।