দেশের বাজারে বর্তমানে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম রয়েছে ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ হাজার ৫২৯ টাকায়।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস) চলতি বছরের ১৮ আগস্ট সবশেষ স্বর্ণের দাম বাড়ানার যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে এই দাম নির্ধারণ করা হয়। এর আগে আগস্ট মাসে আরও দুই দফায় স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছে বাজুস।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগস্টের শুরু থেকেই বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে দরপতনের আভাস দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
সবশেষ ১৫ আগস্ট জাপানের শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটে। তার কিছুদিন আগেই দরপতন হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে। চীনের সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স, হংকংয়ের হ্যাং সেং, যুক্তরাষ্ট্রের ডাও জোসন ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ, স্ট্যান্ডার্ড অ্যানাড পুরস-৫০০ ও নাসদাক এর দরপতন হয়েছে। দেশে শেয়ার বাজারেরও উত্থান-পতন হচ্ছে যে কোনো সময়।
শেয়ার বাজারে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ না করে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের নজর এখন স্বর্ণ মজুদে। যেখানে শেয়ারবাজারের তুলনায় পুঁজি হারানোর ভয় অনেক কম। শেয়ারবাজার ছেড়ে স্বর্ণে বিনিয়োগ স্বর্ণের দাম বাড়াতে অনেকটাই ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন বলেন, ২০১০ সাল থেকে দেশের পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের কারণে লাখ লাখ মানুষের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। মানুষ আর কত অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে চায়। সবাই চায় নিরাপদ ও নিশ্চিত রিটার্ন বিনিয়োগ। তাই পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী এই সংস্কৃতি শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ছে তাই আমাদেরও বাড়াতে হচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ব বাজারে আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২৫০ ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক ২১ হাজার টাকার মতো। আমরা এই ২১ হাজার টাকা এক সঙ্গে না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করছি।
তার ভাষ্য, সরকার স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা করলেও এখনও সেই নীতিমালার আলোকে আমদানি শুরু হয়নি। দেশে যেটুকু আসছে তা লাগেজের মাধ্যমে। আর বিদেশ থেকে তো আন্তর্জাতিকবাজারের দামেই কিনতে হচ্ছে। তাই আমাদের দেশে দাম বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক স্বর্ণের বাজারে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম চীনা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এরপরে চীন স্বর্ণের মজুদ বাড়িয়ে দিলে ডলারে দরপতন হয়। যার প্রভাব পড়েছে স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজারে। এক্ষেত্রে বলাই যায় খুব সহসাই স্বর্ণের দাম কমছে না।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ৭ বার বেড়েছে অলঙ্কার তৈরির এই ধাতুর দাম। বছরের শুরুতে ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণের দাম ৪৮ হাজার ৯৮৮ টাকা ছিল।
আগস্টের মাঝামাঝি এসে ২২ ক্যারেটের একভরি স্বর্ণের দাম হয়েছে ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকা। ৮মাসের ব্যবধানে একভরি স্বর্ণের অলঙ্কার তৈরি করতে ভোক্তাকে বেশি খরচ করতে হবে প্রায় ৭ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
এসই/এমএ