ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘সবখানে প্রশংসা, ২ রাষ্ট্র ছাড়া বাংলাদেশের সামনে নেই কেউ’

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯
‘সবখানে প্রশংসা, ২ রাষ্ট্র ছাড়া বাংলাদেশের সামনে নেই কেউ’ বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে বেশ কয়েকটি সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। ছবি: বাংলানিউজ

যুক্তরাষ্ট্র (ওয়াশিংটন) থেকে: যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে নিম্নমুখীতা দেখা দিয়েছে। এতে চীনের প্রবৃদ্ধি ১৪ থেকে নেমে হয়েছে ৭ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এটাকে কোনো কল্প কাহিনীর মতো মনে হলেও এটাই বাস্তবতা। এতে সবচেয়ে বড় অবদান বাংলাদেশের মানুষের। আইএমএফ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। চলমান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভার সব খানেই বাংলাদেশের অগ্রগতিকে বিস্ময় বলা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে আইএমফের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটানের নির্বাহী পরিচালক অপর্ণা সুভ্রামনির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এক ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে বেশ কয়েকটি সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন মন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দু’টি রাষ্ট্র সাউথ সুদান ও ইথিওপিয়া ছাড়া বাংলাদেশের সামনে কেউ নেই। বিশ্বে নানা মন্দার মধ্যেও প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। আইএমএফ বলছে পঞ্জিকা বছর শেষে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপরও ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ সুদান ও ইথিওপিয়া ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্রের নেই। ফলে অনেকে বিশ্বব্যাংকের ঋণ খরচও করতে পারেনি। এক্ষেত্রে সক্ষমতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ।

সব বৈঠকেই বাংলাদেশের ভূয়সী প্রসংশা করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে বিশ্ব মন্দার সময়েও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোনো রকম প্রভাব পড়েনি। কেননা, আমাদের উৎপাদন আর চাহিদা আমরা নিজেরাই তৈরি করি। ফলে আমাদের আর্থিক খাতে এ মুহূর্তে কোনো রকম ঝুঁকি নেই।

‘বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনীতির ভূয়সী প্রশংসা করেছে। আমাদের অগ্রগতি দেখে তারা অভিভূত। অন্য দেশগুলোর কাছে আমাদেরকে তারা ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করছে। আইএমএফ তাদের আউটলুকে বলেছে, এ বছরের শেষে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এটা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ’

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০৩০ সাল নাগাদ ৩ কোটি যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। ২০৩০ সালে কর্মসংস্থানের কোনো অভাব থাকবে না। এসময় সবাইকে ডাবল চাকরি করতে হবে। এখন গ্রামে মেশিন দিয়েও ধান কাটার মানুষ পাওয়া যায় না। বর্তমানে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থানের প্রসংশা করেছে। প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্ব সেরা। দু’টি দ্বীপ রাষ্ট্র ছাড়া বাংলাদেশের সামনে কেউ নেই। ’

দেশের সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বছর শেষে বিশ্বব্যাংক বলছে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। বিশ্বব্যাংক কখনও বেশি বলে না। তবে আমি বলতে পারি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৩ শতাংশের কম হবে না। দেশের সার্বিক অগ্রগতির রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনে সব পর্যায়ের মানুষ অবদান রাখছেন। কৃষি খাতে ২০, শিল্পে ৩০ ও সেবাখাতের অবদান ৫০ শতাংশ। ’

ভারতের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল।  ছবি: বাংলানিউজ

‘বিশ্বে ১৯৯৭ ও ২০০৮ সালে নানা কারণে অর্থনীতির নেতিবাচক ধারা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থেকেছে। বৈশ্বিক মন্দা বুঝতে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র্রেও অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বর্তমানে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক যুদ্ধ চলছে। তারপরও বাংলাদেশ সঠিক অবস্থান ধরে রেখেছে। আমরা দ্রুত সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, প্রত্যেকে আমাদের সুনাম করছে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ বৃহত্তর ২০টি অর্থনীতির দেশের মধ্যে থাকবে। ২০৩৩ সালে ২৪তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। এ সময় অর্থনীতির আকার হবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার, আমরা সে অপেক্ষায় আছি। ’

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ক্রিস্টিলিনা জর্জিভা। দায়িত্ব নিয়েই তিনি বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্য ব্যবস্থা কিছুটা অস্থিতিশীল সময় পার করছে।

অন্যদিকে সংবাদ সম্মেলন করে ধনী দেশগুলোকে গরীব দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস।

বাংলাদেশে আসছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী

বিশ্বব্যাংকের সভায় অংশ নিয়ে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ও বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পৃথক সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় নির্মলাকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান মুস্তফা কামাল। এসময় নির্মলা সীতারমন ঢাকা সফরে আসার আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রীকে।  পরে অর্থমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯
এমআইএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।