বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তৃতীয় বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-২০১৯-এর উদ্বোধনকালে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প থেকে কাঙ্ক্ষিত রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আর্থিক প্রণোদনা আরও অন্তত আগামী পাঁচবছর বহাল থাকবে।
উৎপাদন, নতুন রপ্তানি বাজার খোঁজাসহ ব্যবসার প্রসার ও রপ্তানি বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার হিসেবে আমরা ব্যবসা করি না কিন্তু ব্যবসায়ীদের জন্য আমরা সব রকম সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করেছি।
তিনি বলেন, উৎপাদন এবং রপ্তানি, নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির ক্ষেত্রেও আমাদের সরকার সবসময় সক্রিয়। এক্ষেত্রে আমাদের কাছ থেকে আপনারা সবধরনের সহযোগিতা পাবেন, সে আশ্বাস আমরা দিতে পারি।
চামড়াশিল্পের প্রসারে বিগত দিনের সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ও সফলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকারের গত দুই মেয়াদে প্রণোদনা এবং নীতি সহায়তায় পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য কারখানার প্রসার ঘটেছে। বিনিয়োগে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে। এখন এই খাতের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ আসছে পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য থেকে।
তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের আকার, পণ্যের সমাহার এবং বিপণন সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। রপ্তানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্য অর্জনের জন্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত চারটি খাতের উন্নয়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। যার মধ্যে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প অন্যতম।
চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প গত একদশকে পাট ও পাটজাত পণ্যকে রপ্তানি আয়ে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের খাত হিসেবে পরিণত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন এ খাতের আয় তৈরি পোশাকের পরেই জায়গা করে নিয়েছে। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে প্রায় ১.০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। আমাদের ক্রমবর্ধমান কাঁচা চামড়া সরবরাহের পুরোটাই ফিনিশড প্রোডাক্ট তৈরি করে রফতানি করতে পারলে আমরা অনায়াসে ২০২২ সালের মধ্যে এ খাত থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় করতে সক্ষম হব।
চামড়া সেক্টরের আরও প্রসারে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সাভারে চামড়াশিল্প নগরীর বর্ধিত প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মান ও এলডব্লিউজি সনদ অর্জন উপযোগী কম্পোজিট চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা কারখানা গড়ে তোলার জন্য কমপক্ষে ১৫০ একর জায়গা বরাদ্দ থাকবে। সব রপ্তানি খাতের জন্য সমান সুযোগ ও নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করা হবে। যেসব বৈষম্যমূলক প্রতিবন্ধকতা আছে তা দূর করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। আমাদের এই লক্ষ্য অর্জনে চামড়া ও পাদুকা শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাই এগিয়ে আসবেন- এটাই আমার প্রত্যাশা।
চামড়াশিল্পকে সাভারে স্থানান্তরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাজারীবাগের পরিবেশগত সমস্যার সমাধানে আমাদের সরকারই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে চামড়াশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাভারে আধুনিক শিল্প নগরীতে স্থানান্তর করেছে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সব বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারী উপস্থিত আছেন, আমি আহ্বান জানাবো আপনারা বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পখাতে বিশেষ করে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের শিল্পে বিনিয়োগ করুন। যেকোনো দেশের চাইতে এখানে বিনিয়োগ করলে আপনারা বেশি লাভবান হবেন, এটুকু আমি বলতে পারি। কারণ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমরা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়েছি, যা আর কেউ দিতে পারবে না। তাছাড়া আমাদের রয়েছে অপেক্ষাকৃত সস্তা শ্রমিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৯
এমইউএম/এমএ