টিপু মুনশি বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের একটা সমস্যা আছে। তারা নিজেরা নিজেরা আন্ডারকাট করে দাম এমন অবস্থায় নিচ্ছে, যাতে করে কেউ দাম পাচ্ছে না।
বুধবার (৬ নভেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে গার্মেন্টসশিল্পের বিদ্যমান সমস্যাদি নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেত্রীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্যসচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হকসহ গার্মেন্টস শিল্পের ব্যবসায়ী নেতা ও বাণিজ্য, অর্থমন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং এনবিআরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পোশাকখাতে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় আমাদের প্রতিযোগিতা বেড়েছে। বায়ারদের মতে আমরা দামের কারণে প্রতিযোগিতায় যেতে পারছি না। সেটার জন্য সবদিকেই চেষ্টা করতে হবে যে ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে যে সাহায্য চেয়েছে সেগুলো ছাড় দিলে আমাদের প্রতিযোগিতা বাড়বে বলে আশা করি। তবে, তারচেয়েও বড় কথা আমাদের প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য কিছু সুবিধা দরকার। যদি ৭/১০ দিন ক্লিয়ারেন্স পেতে সময় লেগে যায়, বায়ার যদি দেখে শিডিউল টাইমের চেয়ে ২০/২৫ দিন বেশি লাগে তাহলে দামে ছাড়ের প্রশ্ন আসে না।
তিনি বলেন, এসব কারণে অনেক ফ্যাক্টরিকে বিমানে মাল পাঠাতে হয়। একবারে মাল পাঠাতে সে বছরের সব প্রফিট চলে যাবে। সময়ের ব্যাপার, সরকার বিবেচনায় নেবেন। ফ্যাক্টরিগুলোর কাছে আবেদন আমরা নিজেরা আন্ডারকাট না করে আমাদের ব্র্যান্ড ভালো করা দরকার। বাজারে গ্লোবাল পরিচিতি বাড়ানো দরকার। কোয়ালিটির বাপারে এওয়ারনেস বাড়ানো দরকার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আশাবাদী যে সামনের দিনগুলোতে হয়তো উন্নত করবো। কিন্তু কবে নাগাদ করবে সেটা বলা মুশকিল।
টিপু মুনশি বলেন, আমরা নানাবিধ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। এনবিআর চেয়ারম্যান ও অর্থসচিব সমস্যাগুলোর বিষয়ে শুনেছেন। সে সমস্যাগুলো সমাধানে তারা কাজ করবে। আমাদের রেডিমেট গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে যে নেগেটিভ গ্রোউথ সেটা কীভাবে, সেটার গ্রোউথ যাতে বাড়ে সেজন্য নেতারা পরামর্শ দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা কাজ করবেন। কিছু সমস্যা আমাদের হয় ক্লিয়ারেন্স ও জাতীয়করণের জন্য অনেক সময় লাগে, বন্দরে দীর্ঘসময় থাকে। এছাড়া অনেক কারণ রয়েছে। এসব ব্যাপারে কথা হয়েছে। তবে, চূড়ান্ত কথা সবগুলোই কনসিডারেশনে নিয়ে এ ব্যাপারে কাজ করে আমরা ব্যবস্থা নেবো। মূলত আলোচনা হয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পে গত তিনমাসে যে প্রবৃদ্ধি কমেছে, সেটি কীভাবে ফিরিয়ে আনতে পারি।
তিনি বলেন, ডলারের দাম নিয়ে যে সমস্যা, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেটা নিয়ে কী করা যায়। ব্যাংকগুলো ডলার কেনা এবং বিক্রির মধ্যে যে পার্থক্য আছে সেটাও আমাদের ব্যবসায়ী নেতারা তুলে ধরেছেন। ডলার যদি রিভেলেশনের কথা বলেছি। সেগুলো তারা দেখবেন। আর ব্যাংক ইন্টারেস্ট একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে গেছে বিশেষ করে প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) একনেকের বৈঠকে বিশাল আলোচনা হয়েছে। কীভাবে সেটি কমানো যায়। কারণ ১২ থেকে ১৪ শতাংশ প্রাইভেট ব্যাংকগুলো এই ইন্টারেস্ট দেয়। সেটা কীভাবে কমানো যায়। আরেকটি বিষয় আলোচনা হয়েছে ট্যাক্সেশনের রেভিনিউ কালেকশন দরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যেটা আমাদের ব্যবসায়ী নেতারা সাজেস্ট করেছেন এই ট্যাক্স যেটা আনা হয় তার পরিধি যাতে বাড়ানো হয়। যাদের সক্ষমতা আছে ট্যাক্স দেওয়ার তারা ট্যাক্সেশনের বাইরে রয়েছে সেটা কভার করলে যারা ট্যাক্স দেওয়া তাদের ওপর চাপ কমবে।
পোশাকখাতে নগদ সহায়তার বিষয় কী করতে যাচ্ছে সরকার এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যেটুকু নগদ সহায়তা পাচ্ছি তাতে কিছু ট্যাক্সেশনের ব্যাপার এসেছে। সেটা এনবিআরের চেয়ারম্যান অত্যন্ত সিমপেথিটিক, তিনি বলেছেন সেটা ঠিক করে দেবেন। যেটা ট্যাক্স এসেছে সেটা কমাবে বলে মনে হয়েছে।
তিনি বলেন, অর্থসচিব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে কিছু বিষয় দেখবেন। অন্যান্য যে ব্যাপার এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেছেন, এসব ছোটখাটো সমস্যা যখনই আসবে আপনারা আমার কাছে আসবেন। আমি তাৎক্ষণিক সেগুলোর সমাধান করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৯
জিসিজি/এএটি