বুধবার (৬ নভেম্বর) বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জের বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম প্রায় ২শর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে পেঁয়াজ সঙ্কট। দোকানেও মজুত নেই। যে পরিমাণ পেঁয়াজ আছে, তা চাহিদার তুলনায় একাংশের যোগান দেওয়াও সম্ভব না।
তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, কিছু পেঁয়াজ মেহেরপুর থেকে আসছে। সিলেটের সীমান্ত দিয়েও দেশে ঢুকছে পেঁয়াজের চালান। কিন্তু এসব পেঁয়াজ বাজারে না আসা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
সিলেটের পাইকারি বাজারে আগে ১০/১২ ট্রাক পেঁয়াজ আসতো প্রতিদিন। এখন আসে ৫/৬ ট্রাক। কিন্তু রাস্তা থেকে পেঁয়াজ গায়েব হয়ে যায়।
সূত্রের মতে, বাজারে পেঁয়াজের চাহিদার একাংশও সরবরাহ নেই। বড় ব্যবসায়ীদের অনেকে পেঁয়াজের চালান আনলেও দোকান বা গুদামে মজুত করেন না। এর পরিবর্তে রাতের আঁধারে পেঁয়াজের গাড়ি চলে যায় ব্যবসায়ীদের বাসা-বাড়িতে অথবা নিরাপদ কোনো স্থানে। আর বাজারে বস্তা গুনে আনা হচ্ছে পেঁয়াজ।
এভাবে বাজারে পেঁয়াজের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হচ্ছে কি-না, খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে সরকারের একটি বিশেষ দফতরের লোকজন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের রিকাবিবাজার থেকে ৪০ টাকা দিয়ে আড়াইশ গ্রাম পেঁয়াজ কিনেছেন লামাবাজারের বাসিন্দা আছির আলী।
তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজর দাম খালি বাড়ে, আর খাওয়া যাইতো নায়। ’
পেঁয়াজের আগুন দাম ভালোই ভোগাচ্ছে আছির আলীর মতো নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের।
রিকাবি বাজারের ব্যবসায়ী রুকম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, নিত্যপণ্যের কাঁচামালে রসুনের দামকেও ছাড়িয়ে গেছে পেঁয়াজ। বাজারে রসুন ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়।
তিনি আরও বলেন, খারাপ পেঁয়াজ আনলে রেখে বিক্রি করা যায় না, পচে যায়। পেঁয়াজের বস্তা আনলেও পচা বেরিয়ে যায় ১/২ কেজি। ফলে খরচ বাদে লাভের মুখ দেখা কঠিন। কেবল ক্রেতা ধরে রাখার জন্য পেঁয়াজ রাখতে হয়।
নগরের মিরের ময়দানে অবস্থিত মোহন স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহন পাল বাংলানিউজকে বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দামে আগুন। এ কারণে ১৬০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।
নগরের তেলিহাওর এলাকার রহমান রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী বদরুজ্জামান বলেন, রেস্তোরাঁয় রান্নায় পেঁয়াজ খুব কমই ব্যবহার করছি।
সরেজমিনে নগরের কালিঘাটের পাইকারি দোকান ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি দোকান মা বাণিজ্যালয়, আল মদিনা ট্রেডার্স, মরিয়ম ট্রেডার্সসহ প্রতিটি দোকানে বর্ডার ক্রস করে আসা এলসির পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তাছাড়া মিয়ানমার থেকে আসা নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ১১০ ও ১১৫ টাকা পাইকারি দরে।
আল মদীনা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. রহমত আলী বাংলানিউজকে বলেন, এখন পেঁয়াজের সাপ্লাই নেই। এ কারণে দাম বেশি। তবে আজকের দামের চেয়ে গতকাল কেজিতে আরও ৪/৫ টাকা বেশি ছিল।
তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ পচা বেশি। এরপরও দাম চড়া। ১৫/২০ দিন গেলে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু হলে দাম কমে আসবে।
ভোক্তা অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. ফয়েজুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সঙ্কট তদারকি করেছি। ব্যবসায়ীরা সামান্য লাভে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।
তবে বাসা-বাড়িতে গুদামজাত করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা এবং সিন্ডিকেট করার নেপথ্যে ১৫ ব্যাপারী জড়িতের বিষয়টিও তারা খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান।
এর আগে ২৬ অক্টোবর থেকে সিলেটের খোলাবাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। এর দু’দিন আগে খোলাবাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৮০ টাকা। হঠাৎ কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে যায়। আর নভেম্বর আসতেই সেই পেঁয়াজ কেজিতে আরও ৩০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৯
এনইউ/এফএম/এএ